খোঁজাখুঁজি

Sunday, December 12, 2010

মেয়ের নাম ফেলি

আসলে ফেলি একদম দৌড়াতে পারে না তো, তাই ওকে কেউ দলে নিতে চায় না৷ বুড়ি-বসন্তী খেলার জন্য যখন দলভাগ হয়, তখন শুভ্রা আর সুলগ্নার দলে সবাই যেতে চায়৷ আর ওরাও দেখেশুনে বেছেবেছে ভাল দৌড়াতে পারা মেয়েদেরই নেয়৷ ফেলি খুব ওদের দলে ঢুকতে চায়, কিন্তু ওকে দলে নিলেও, 'তুই এখন বোস, ইলা খেলুক' বলে ওকে বসিয়ে দেয় সবাই৷ ইলা, শীলা, টুম্পা, মিনি সব্বাই বেশ দৌড়াতে পারে৷ ফেলি একটু দৌড়িয়েই হ্যা হ্যা করে জিভ বের করে হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের খেলা দেখে৷ ওর খুব ইচ্ছে করে ওদের মত একটানা দৌড়াতে, একটুও না হাঁপিয়ে সারা বিকেল খেলে যেতে, দৌড়ে সবাইকে হারিয়ে দিতে ------------ হয় না৷ কিছুতেই তা হয় না৷ বিকেলবেলার এই খেলার সময়টুকুর জন্য ফেলি প্রায় সারাদিন অপেক্ষা করে৷ ওর স্কুল তো সেই সকালে, সাড়ে দশটায় ছুটি হয়ে গেলে বাড়ি পৌঁছতে আর মিনিট পনেরো বড়জোর৷ স্কুলে ওদের টিফিনের সময় মাত্র পনেরো মিনিট৷ ওরই মধ্যে খেলে খাও, খেললে খেলো৷ তো সেখানেও ফেলিকে কেউ এমনিতে দলে নিতে চায় না ------ তবে বিশেষ গাঁইগুঁই না করেই নেয়ও৷ তার একটা কারণ আছে৷ 'ফুলেশ্বরী' আসলে স্কুলের 'কেরাণী-দিদিমণি'র মেয়ে তো, আবার ক্লাসে মাঝেমধ্যে ফার্স্টও হয়৷ তাই তেমন ইচ্ছে না থাকলেও মাঝেমাঝে ওকে ওর পছন্দমত দলেই নিয়ে নেয় অন্যরা৷

Sunday, August 1, 2010

নকল ইলিশ!! !

সে ছিল একসময় যখন বর্ষাকাল ছাড়া অন্যসময় ইলিশমাছ কিনতে গেলে মানিকতলা বাজারে নিয়মিত ঢুঁ মারতে হত, চেনা দোকানিকে তুতিয়ে পাতিয়ে যদি পাওয়া যায় মনোমত একটি বা একজোড়া 'জলের রূপালী শস্য'৷ এদিকে বর্ষাকালে তো যখন তখন চকচকে ইলিশ ঢুকে পড়ত বাঙালীর হেঁসেলে৷ রাত সাড়ে নটায় বাড়ী ফেরার পথে গঙ্গার ঘাট থেকে ইলিশ নিয়ে ফিরেছেন দাদু আর দিদা ভাববাচ্যে 'মাইনষের কুনো আক্কল নাই! তাইন রাতদুফরে ইলিশ লইয়্যা আইছুইন' মুখঝামটা দিয়েও দিব্বি কেটেকুটে ভেজেভুজে খাইয়েছেন সবাইকে৷

Saturday, July 31, 2010

মন্দাদিনের আঁকিবুকি


--
আমার একটা লালমাটির রাস্তা আছে ৷ স্বপ্নে৷ সেই রাস্তাটা সামনে বেশ সোজা৷ যত দূরে যেতে থাকে, ততই অ্যাঁকাব্যাঁকা হয়ে ঝাপসা হয়ে যায়৷ অনেক দূরে , যেখানে আকাশ নীলচে লাল আর মাটিটা সবজে লাল, সেখানে গিয়ে এই রাস্তাটা এঁকেবেঁকে হঠাত্ আকাশে উঠে যায়৷ ঘুম না এলে চোখ বুঁজে এই রাস্তাটাকে আমি দেখি ৷ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি৷ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি, কিম্বা দেখি না, ঠিক মনে থাকে না৷


আমার স্বপ্নে আগে অনেক পুকুরও ছিল৷ ছোটবেলায় একসময় আমি শহর থেকে মফস্বলের আত্মীয়বাড়ীতে গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পুকুর দেখে বেড়াতাম৷ টলটলে পুকুর, পানা পুকুর, সাঁতার কাটার , চান করার, কাপড় কাচার পুকুর কিম্বা গম্ভীরমত দেখতে, খাবার জলের পুকুর৷ সেগুলো আজকাল আর নেই৷ আমি যখন বেশ বড় হয়ে চাকরী শুরু করি, তখন চারদিকে হঠাত্ "সমৃদ্ধি'র পালে হাওয়া লাগে৷ চারিদিকে সবকিছু ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে৷ ছোট বাড়ীগুলো বড় হয়ে যায়, বড়গুলো ভেঙেচুরে 'হাউসিং কমপ্লেক্'স হয়ে যায়৷ রাস্তাগুলো চওড়া হয়৷ আর এরা সবাই মিলে পুকুরগুলো চুষে খেয়ে ফেলে৷ আমার স্বপ্ন থেকে তাই পুকুরগুলো উবে গেছে৷ তার বদলে আমি আজকাল মাঝেমাঝে খালিবাড়ীর স্বপ্ন দেখি৷ অর্ধেক তৈরী হওয়া কংক্রীটের খাঁচার স্বপ্ন৷

Sunday, July 25, 2010

এবড়ো খেবড়ো রং - ৪



-
হাত দুখানা আজকাল কিবোর্ডের চেয়ে মাউসেই বেশী স্বচ্ছন্দ বোধ করে, তাই মাথায় কিলবিল করে বেড়ানো কথাগুলোর আর মুক্তি হয় না৷ এদিকে কিছুই না লিখলে আবার মনটা কিরকম যেন করে৷ অথচ হাবিজাবি চাট্টি অক্ষর বসিয়ে কি যে ছাই স্বর্গলাভ হয়! কিচ্ছু হয় না ---- কিস্যু না৷ হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ মোটের ওপর একইরকম হিংস্র আর মতলববাজ থেকেই গেছে৷ কিছু লোক নানারকম ভাল কথা বলেছে আর দিনের শেষে কিছু লোক সেগুলোকে 'দু: য্যা:' করে দিয়ে অন্যকিছু করে গেছে৷

Saturday, May 15, 2010

চিত্র-লেখা ২

আজকে সামনের বারান্দায় কেউ আসে নি, বোধহয় বাড়িতে কেউ নেই৷ ওই বাড়িটা আসলে পর্যটকদের থাকার জন্য৷ এই অদ্ভুত নির্জন জায়গাটায়ও কিছু পর্যটক আসে মাঝেমধ্যেই৷ আর আজকাল বোধহয় নির্জন জায়গায় বেড়াতে যাওয়াটা একটা ফ্যাশানও হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাড়িটা দেখাশোনা করে বাহাদুর আর ওর বউ৷ ওর বউয়ের নাম জানা যায় না৷ ওরা বাড়িটার ওইপাশে একটা আলাদা কোয়ার্টারে থাকে৷


Tuesday, April 20, 2010

টুপটাপ শব্দ কুড়িয়ে তৈরী বই - কাঠের সেনাপতি

তারেক নূরুল হাসান'কে আমরা চিনি 'কনফুসিয়াস' নামে৷ কনফুসিয়াসের লেখালিখির সাথে আমার পরিচয় বিভিন্ন বাংলা ফোরাম ও ব্লগে৷ ওঁর লেখার শান্ত সমাহিত ভাবটি আমার বড় পছন্দের, বড় ঈর্ষারও বটে৷ তাই ওঁর প্রথম বই নিয়ে দু'কথা লিখতে বসে আমি হয়ত খুব একটা নিরপেক্ষ মত দিতে পারব না, সেকথা আগেভাগেই মাননীয় পাঠককে জানিয়ে রাখা ভাল৷ তাহলে এরপরেও আপনি এই লেখাটা পড়বেন কেন? পড়বেন পড়বেন৷ কারণ না পড়লে আপনি জানতে পারবেন না টুপটাপ শব্দ কুড়িয়ে কুড়িয়ে তৈরী হয়ে ওঠা এক একটা আস্ত গল্পের খবর৷

Sunday, February 28, 2010

এবড়ো খেবড়ো রং - ৩


--
বিগত এক দশকে প্রতি ২-৩ বছরে জায়গা বদলে বদলে এমন অভ্যাস হয়েছে যে কোথাও ২ বছর হলেই মনে হয় বাব্বা: কত্তদিন হয়ে গেল এখানে! তা পুণেতেও নয় নয় করে আড়াইবছর হয়ে গেল৷ এ শহর ভাল লাগে আবার লাগেও না৷ পাহাড় আমার বড় পছন্দের বিষয়৷ এ শহরের এদিক ওদিক থেকে উঁকিমারা পাহাড়দের তাই বড় ভাল লাগে৷ শহরের লোকগুলো এমনিতে শান্ত নিরীহগোছের,

Tuesday, February 16, 2010

টিক টক --- টিক টক

সহ্যাদ্রি পর্বতমালার কোলে কোলে বেড়ে ওঠা এই শহরটা মাত্র কয় বছর আগেও ছিল ছোট্ট একটা ঘুমুঘুমু শহর৷ ছিমছাম দোতলা চারতলা বাড়ী, শহরের অনেকটা জুড়ে ক্যান্টনমেন্ট, রাস্তার দুদিক থেকে উঠে যাওয়া মস্ত মস্ত গাছের ডাল জুড়ে রাস্তার ওপরে তৈরী আর্চ আর নীচে আলোছায়ার আঁকিবুকি, হঠাৎ হঠাৎ চড়াই উৎরাই হয়ে যাওয়া রাস্তাওয়ালা এই শহরের দোকানদারেরা দুপুরবেলা মফস্বলের মত দোকান বন্ধ করে বাড়ী যেত৷ খেয়ে ঘুমিয়ে এসে আবার দোকান খুলত বিকেলবেলা৷ অমুক তমুক 'মিত্রমণ্ডলী'র ব্যবস্থাপনায় নাটক কিম্বা গানবাজনার অনুষ্ঠানও নিয়মিতই হত৷আর পুণে ইউনিভার্সিটি, ফার্গুসন কলেজ, সিমবায়োসিস কিম্বা ফিল্ম ইনস্টিটুটের ছাত্রছাত্রীদের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে থাকে তো আজও, এই ঘটমান বর্তমানেও৷


Wednesday, February 3, 2010

আইন যখন তামাশা

অরিন্দম দাশগুপ্ত(অনুবাদক); মিয়াজান দারোগার একরারনামা ; প্রকাশক (কলকাতা :চর্চাপদ); পৃষ্ঠাসংখ্যা 152(পরিশিষ্টসহ)
ISBN : 978-81-907607-5-1


বেঙ্গল লাইব্রেরী ক্যাটালগ থেকে প্রাপ্ত মূল পুস্তক সম্পর্কে তথ্যাদি:
F F Christian - The Confession of Miajan, Daroga of Police dictated by him and translated by a Muffussilite ; Publisher - Messers Wyman and Company, 1A Hare Street Calcutta; Date of Publication - 10.4.1869; Pages - 148; No. of copies - 200


সে এক সময়, ইংরেজ তখনও ভারতবর্ষের শাসনভার নিজের হাতে সম্পূর্ণ তুলে নেয় নি, খাতায়কলমে মুঘলসম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফর তখনও দিল্লীর মসনদে , সিপাহী বিদ্রোহের তখনও সতেরো আঠেরো বছর দেরী আছে৷ "আইনের শাসন' নিতান্তই কাগজে কলমে অবস্থিত, বাস্তবে খুব একটা দেখা যায় না; সে এক সময় যখন আস্তে আস্তে নীলকররা জাঁকিয়ে বসছে, জমিদাররা লুঠতরাজকে মোটামুটি ধর্ম বলেই মনে করেন৷ সে এক সময় যখন সতীদাহ প্রথা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও টুকটাক এদিকওদিক সতী হওয়ার গল্প শোনা যায়; রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনও তৈরি করে উঠতে পারে নি ইংরেজরা৷ সেই সময়ের নানান কাহিনী, সত্য ও কাল্পনিক দুই-ই আমরা পড়েছি৷ পড়েছি আইন ও বিচারবিভাগ এব ংপুলিশি হালচাল নিয়েও কিছু বইপś৷ অনেকের ম্তে, বিশেষত: ঔপনিবেশিক কালে, 'দারোগাসাহিত্য' কে সাহিত্যের একটা উপবিভাগ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়৷

Tuesday, January 5, 2010

চিত্র-লেখা ১

সারাদিন রেললাইনটা পড়ে পড়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোয় আর মাঝরাত্তিরের পর গা মোড়ামুড়ি দিয়ে জেগে ওঠে৷ তখন ওতে কান পাতলে শোনা যায় শোঁ শোঁ, সাঁই সাঁই, ঠুকঠাক, ঢকাং ঢকাং শব্দ৷ তারপর ঝমঝম ঝমাঝম করে একটা বড়সড় জোয়ানমত ট্রেনগাড়ী দৌড়ে যায়৷ আবার চুঁইচুঁই, ঘটাংঘটাং এরপরে ছ:-ঘিসস, ছ:-ঘিসস করে হাঁপের টান টেনে টেনে একটা বুড়োমত মালগাড়ী যায়৷তারপরও রেললাইনটা জেগেই থাকে, যদিও আর গাড়ীটাড়ি আসবে না সেই কাল রাত্তিরের আগে; তবু ও জেগে জেগে অপেক্ষা করে সকালের পাখীগুলোর৷