--
বিগত এক দশকে প্রতি ২-৩ বছরে জায়গা বদলে বদলে এমন অভ্যাস হয়েছে যে কোথাও ২ বছর হলেই মনে হয় বাব্বা: কত্তদিন হয়ে গেল এখানে! তা পুণেতেও নয় নয় করে আড়াইবছর হয়ে গেল৷ এ শহর ভাল লাগে আবার লাগেও না৷ পাহাড় আমার বড় পছন্দের বিষয়৷ এ শহরের এদিক ওদিক থেকে উঁকিমারা পাহাড়দের তাই বড় ভাল লাগে৷ শহরের লোকগুলো এমনিতে শান্ত নিরীহগোছের,
কিন্তু সাধারণভাবে বড্ডই অলস আর গোঁড়া মানসিকতার৷বসবাস করার পক্ষে একটু অসুবিধেজনকই লাগল আগাগোড়া৷ কলকাতায় ফেরার সুযোগ খুঁজছিলাম অনেকদিন ধরেই৷ মাঝখানে মন্দা এসে সমস্ত পরিকল্পনা চৌপাট করে দিয়েছিল৷ চাকরিবাকরির বাজার আবার আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, খালিপকেট ক্লায়েন্টরাও পকেটে যা দু'চারপয়সা আছে তাই দিয়েই অল্পস্বল্প করে কাজ দিচ্ছে, কাজেই এবারে ব্যবস্থা করেই ফেলা গেল৷অবশ্য ব্যবস্থা হয়ে আছে সেই গত অক্টোবর থেকেই, কিন্তু এখান থেকে আর ছাড়েই না--- ছাড়েই না৷ শেষমেষ জানুয়ারীতে ছাড়া পেলাম, কিন্তু গোটা ফেব্রুয়ারী স্রেফ বসে রইলাম৷ একই কোম্পানির অন্য শহরের শাখায় যেতে যে এত সময় লাগতে পারে তা জানা ছিল না৷ প্রোজেক্ট অ্যালোকেশান হয়ে গেছে সেই মাস পয়লাতেই, এদিকে বদলী আর হয় না৷ আমি শোষিত হতে ইচ্ছুক, শোষকরাও শোষণ করতে ইচ্ছুক, কিন্তু স্রেফ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গোটা একটামাস চুপ করে বসে থাকতে হল৷ রোজ ঠিক সময়ে অফিস গিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র ইত্যাদি পড়েটড়ে কোন একটা বই পড়তে শুরু করতাম৷ এতে লাভ যেটা হল, বেশ কিছু জমে থাকা বই পড়া হয়ে গেল৷ কোনকিছুই তো আর পুরো খারাপ হয় না ---সেটাই আরেকবার অনুভব করলাম আর কি!
শহর বদলানো মানেই এক বড়সড় ঝামেলাপর্ব৷ প্রথম কাজই হল এখানকার বাড়ীতে নোটিশ দেওয়া আর কলকাতায় একটা থাকার জায়গা খুঁজে বের করা৷ এই বাড়ীটা ছাড়তে বেশ কষ্টা হচ্ছে৷ এই বাড়ীতে থাকতে আসা আর সচলায়তনে লেখালেখি শুরু করা সমসাময়িক৷ বাড়ীটা মুম্বাই-ব্যাঙ্গালুরু জাতীয় সড়কের ধারে হওয়ায় আশেপাশে অনেক ফাঁকা জায়গা৷ বড় শোবারঘরের লাগোয়া ব্যালকনিটা ভারী সুন্দর৷ এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা ইজিচেয়ারে বসে বসে আকাশ আর পাহাড় দেখে দেখে কাটিয়ে দিয়েছি৷ এমনিতে পুণের ফ্ল্যাটবাড়ীগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য আছে৷ এখানে দোতলার বারান্দার ছাদ হবে চারতলায়৷ মাঝের তিনতলার ফ্ল্যাটের ঐজায়গাটায় থাকবে একটা জানালা৷ একইভাবে তিনতলার বারান্দা হবে একটু বাঁয়ে বা ডাইনে সরে আর তার ছাদ হবে পাঁচতলায়৷ চারতলার একটা জানলা থাকবে ঐখানে৷ ফলে সমস্ত বারান্দাগুলোতেই আলোহাওয়া খেলে প্রচুর৷ আর বাড়ীগুলো আট কিম্বা ন'তলার বেশী বড়ও হয় না৷ ফলে ঘিঞ্জিভাবটা আসে না৷ এই গঠনটা আমি দিল্লী, গুরগাঁও কিম্বা কলকাতায় দেখিনি৷ আমি থাকি আটতলা বাড়ীর সাততলায়, ফলে আমার ব্যালকনিগুলোর উপরে আর কোন ছাদ নেই৷ বাড়ীওয়ালা অবশ্য চাঁদোয়া টাঙিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমার তা একেবারেই পাছন্দ হয় নি বলে মানা করে দিয়েছিলাম৷ পাহাড় তো আর পাব না, কিন্তু অন্তত চারপাশে কিছু গাছপালাওয়ালা জায়গাও যদি কলকাতায় অফিসের কাছাকাছি খুঁজে পাই তো বড় ভাল হয়৷
এই ছাদ থেকেই আমার "ক্লাউড' অ্যালবামের অধিকাংশ ছবিগুলো তোলা৷ একখানা দিলাম এখানে৷
সাজুগুজু করা সুন্দরী মেঘ
২
--
কদিন ধরে মনে হচ্ছে অনেকদিন শামুক দেখি না৷ আমাদের পাড়াটা ছিল কোন্নগরের গামলা৷ খানিক বৃষ্টি হলেই সারা কোন্নগরের জল এসে জমা হত আমাদের পাড়াটায়৷ ছোটবেলায় জল জমলে ভারী খুশী হতাম৷ ক্লাস সিক্স, সেভেন পর্যন্ত আমাদের আশেপাশে অনেকগুলো পুকুর ছিল৷ ফলে জল জমলে কই বা বাটার ঝাঁক এসে উঠোনের আম, পেয়ারা, শিউলি গাছের পাশ দিয়ে সাঁতরে যেত৷ আর চিত্রবিচিত্র করা শামুকগুলো বারান্দায় উঠে আসত৷ সামান্য সাড়া পেলেই খোলের মধ্যে লুকিয়ে পড়ত৷ বড়সড় কেঁচো আর লালমেরুণ কেন্নোরাও উঠে আসত৷ আমি আর ভাই তাদের কাঠি দিয়ে ধরে ধরে জলে ফেলে দিতাম৷ দু'চারটে ব্যাঙাচী বা সদ্যলেজখসা কুট্টি কুট্টি ব্যাঙও যে আসত না তা নয়৷
ব্যাঙের কথায় একটা কথা মনে হল৷ অধিকাংশ মানুষের বোধহয় নিজের অগোচরেই কালো বা কালচে রঙের প্রতি একটা অপছন্দের ভাব আছে৷ সেইসব লোকরা আবার সোনালী বা অমন ধরণের রং খুব পছন্দ করে৷ হতে পারে ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন লোকের কথাবার্তা, গল্পগাছার মাধ্যমে ওটাই মাথার মধ্যে গেঁথে যায়৷ সাদা, সোনালী ইত্যাদি ভারী ভাল আর এদিকে কালো, ধূসর, খয়েরী এরা সব ভারী খারাপ৷এই মাস খানেক কি দুয়েক আগে গুরুচন্ডা৯তে এক বন্ধু নেহাত্ই খেলার ছলে একটা গল্প লিখতে শুরু করে৷ এক যুবকের সাথে এক ব্যাঙকুমারীর প্রেম৷ গল্পটা একটু এগোতেই আমি একটা মজার জিনিষ লক্ষ করলাম৷ উত্সাহদাতা পাঠকেরা কেউ কেউ জানতে চাইছেন তারপরে 'সোনাব্যাঙ'টার কী হল? তখনও পর্যন্ত গল্পে কোথায়ও বলা হয় নি 'ব্যাঙ্কুয়ারী' (ওটাই নাম ছিল গল্পে) সোনা না কোলা৷ পাঠকদের আগ্রহেই কিনা জানিনা লেখক দেখলাম আস্তে আস্তে ব্যাঙ্কুয়ারীর নরম সবুজ রঙের কথা বলতে শুরু করলেন৷ সোনাব্যাঙের একটা প্রজাতি গাঢ় সবুজ রঙের হয় বলে জানি৷ আমরা কিরকম নিজেদের অগোচরেই এমনকি ব্যাঙের মধ্যেও 'সোনা'টাকেই পছন্দ করি আর কোলাগুলোকে দূরছাই করি৷ কালোকোলো গুটিওয়ালা কোলাব্যাঙের আর 'মণ্ডুকানুষী' হওয়া হয় না৷ রেসিস্ট বাঙালী ব্যাঙের মধ্যেও কালোগুলোকে হ্যাটা করে৷ আমি অবশ্য আরো বড় রেসিস্ট৷ ব্যাঙ প্রাণীটাকেই পছন্দ করি না; সে সোনা, কোলা, ট্যারা, ব্যাঁকা যাই হোক না কেন৷
৩
–
সেদিন অফিসে বসে বসে শচীনের বিধ্বংসী ইনিংসটা দেখছিলাম৷ কাজকম্ম ছিল না, তাই ক্যাফেটেরিয়াতেই মৌজ করে বসে দেখলাম৷ তা, সবচেয়ে মজার ব্যপার হল অত চার ছয় মেরেও ধোনির খিস্তি খাওয়া৷ ধোনি একটা করে মারছে আর আশেপাশের ছেলেপুলে 'আব্বে তেরি মায় কি ----' বলে খিস্তাচ্ছে৷ শচীনের স্ট্রাইক নষ্ট হল, এই আশঙ্কায় লোকে ধোনির একেবারে বাপ মা তুলে গালি দিয়ে চলেছে৷ অত চার ছয় মেরেও অত গালি খাওয়াও একটা রেকর্ড বটে৷ আর এখানে মারাঠি অস্মিতার ঠ্যালায় এমনিতেই শচীনের উল্টোদিকে যেই দাঁড়াক তাকেই সন্দেহের চোখে দেখে এরা৷ আর শচীনও এক প্রতিভা বটে৷ এই প্রায় সাঁইত্রিশ বছর বয়সে ------- অবিশ্বাস্য! খেলা দেখতে দেখতে বারবার সেই হেনরি ওলাঙ্গাকে বলে বলে তুলে মারা মনে পড়ছিল৷ তার আগের ম্যাচেই মুখের কাছে উঠে আসা বলে ব্যাট চালিয়ে আউট হল শচীন আর ফেরার রাস্তায় ওলাঙ্গার দুইহাত তুলে নাচ৷ ব্যাস! পরের ম্যাচে জাস্ট পিষে দিল৷ আমার মস্ত সৌভাগ্য যে গাভাসকার, কপিলদেবের কেরিয়ারের পীক পিরিয়ডটা আর সৌরভ, শচীনদের পুরোটাই দেখতে পেলাম৷
এই মারাঠি অস্মিতার কথায় মনে পড়ল, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চাকরী করার অভিজ্ঞতা ও বন্ধুদের থেকে শুনেটুনে বুঝলাম, মহারাষ্ট্রেই এমনকি কর্পোরেট কোম্পানিগুলোতেও নির্লজ্জভাবে মারাঠি তোষণ করে৷ এখানেই একমাত্র অফিশিয়াল কনফারেন্স কলেও দুমদাম লোকজন মারাঠিতে কথা বলতে শুরু করে দেয়৷ সে যে কি ঝামেলা! বাকি সর্বত্রই একটু রেখেঢেকে হয়৷ এখানে একেবারে খোলাখুলি৷ এদিকে আমার পদবীটা কিঞ্চিত্ মারাঠি ধরণের৷ ফলে অধিকাংশ লোক আমাকে মহারাষ্ট্রের লোক ভেবে নিয়ে সোজা মারাঠিতে কথা বলতে শুরু করে দেয়৷ সাধারণত: আমাকে কেউ হিন্দী বা ইংরিজি ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কিছু বললে আমি সোজা বাংলাতে উত্তর দিই৷ কিন্তু অফিসে সেটা করা একটু চাপের হয়ে যায়৷ এমনিতে মানুষগুলো যে খারাপ তা নয়, তবে ঐ আর কি৷ আর মারাঠিরা স্বভাবত: একটু অলস, ওদিকে বিহারি বা হরিয়ানভিরা খুবই পরিশ্রমী ও কষ্টসহিষ্ণু৷ তাই বিভিন্ন পেশায়, বিশেষত: শ্রমনির্ভর পেশায় বিহারি, হরিয়ানভি, পাঞ্জাবীদের চাহিদা বেশী৷ এখন যখন সর্বত্রই চাকরিবাকরিতে টান পড়ছে, তখন শুরু হয়েছে বিহারি-খেদাও ইত্যাদি৷
তবে কর্পোরেটে আঞ্চলিক রাজনীতির চাষবাসটা বেশ দেখার মত ব্যপার৷ মানে নিজের গায়ে আঁচ না লাগলে, সাইড লাইনে দেখার সুযোগ থাকলে বেশ ইন্টারেস্টিং জিনিষপত্র দেখা যায়৷
৪
--
এতখানি প্যাচাল পাড়লাম, যাঁরা ধৈর্য্য ধরে পড়লেন তাঁদের একটা গান শুনিয়ে যাই৷
|
খুব মনোযোগ দিয়ে পুরো প্যাচালাটা পড়লাম। গানটা এক্সদিও শোনা হলো না স্পিকারের বেঈমানিতে। তা থাক।
ReplyDeleteতোমার দেখার চোখ কত সুক্ষ! জানা ছিলো না এমন নয়, তবুও।
porar neshay hatre berai-----tai pelam khuje ei blog---neshar moton gilchhi----gilbo:))
ReplyDeletetomar lekhay baktobbyo gulo khub spashto,r barnonao nikhuNt...satyi,amio gilchhi...
ReplyDelete