খোঁজাখুঁজি

Saturday, March 12, 2022

খন্ডিতাদের যাপিত জীবন

 মেয়ে বা মেয়েলী বলতে সাধারণভাবে সমাজ মনে করে  ঊনমানব, অপর বা আদার, উইকার সেক্স বা দূর্বলতর লিঙ্গ, সেকেন্ড সেক্স বা দ্বিতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি। সবসময় যে অতি উচ্চকিতভাবে এটা বলা হয় তা নয়,  কিন্তু বহুকাল ধরে মেয়েদের  যেভাবে দেখা হয়ে এসেছে তার সারাংশ মোটামুটি ওইরকমই। বৈষ্ণবকাব্যে কৃষ্ণ বিরহিতাকে খন্ডিতা বলা হয়। কিন্তু বাকী সব মেয়েরা যারা জন্ম থেকেই জীবনের নানা রঙ রস রূপ উপভোগে বিচ্ছিন্ন থেকেছে তাদেরাও কি খন্ডিতা বলা উচিৎ নয়? যশোধরা রায়চৌধুরী মনে করেন অবশ্যই বলা উচিৎ। এই যে দৃষ্টিভঙ্গী যে মেয়ে সাজবে, মিষ্টি করে হাসবে, বোকা কথা বলবে, অর্থনীতি রাজনীতি বুঝবে না এ তো একটি পূর্ণ সত্ত্বার উপরে  এক খন্ডিত সত্ত্বার আরোপ। এই আরোপিত  সত্ত্বাকেই যশোধরা দেখেছেন নানাদিক থেকে।

Tuesday, August 3, 2021

দুষ্কালের পদধ্বনি

কটনমিলের পুকুরে সদ্য স্নান করে এসে কার্নিশে বসে পাখনা ছড়িয়ে ঠোঁট দিয়ে পালকের মধ্যে থেকে কুটোকাটা , বালির দানা পরিস্কার করতে করতে সামনের জানলার পাল্লার দিকে নজর রাখছিল কমলেকামিনী। ওদিকে সামনের লোহার গেটখুলে গাড়ি থেকে বড় লাল স্যুটকেসটা নামিয়ে বারান্দায় রাখছিল ঝরোখা। সুমনা ফিল্টারে জল ভরছিল জানলার পাশে দাঁড়িয়ে। গেটের আওয়াজ শুনে এসে শোবার ঘরের দরজা খোলে, স্যুটকেসটা গড়িয়ে এনে খাট আর দরজার মাঝের ফাঁকটায় খাটের মাথা ঘেঁষে রাখে। ঝরোখা গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে মস্ত ব্যাকপ্যাক আর কাঁধে তেরচা করে ঝোলানো ব্যাগটা নিয়ে / ঘরে ঢোকে। শোবার ঘরে পরে যাবে, আগে ছ্যাঁচাভারী ব্যাকপ্যাকটা রেখে ঘড়িটড়িগুলো খোলা যাক। সুমনা আবার ফেরত যায় ফিল্টারের সামনে, জানলার পর্দাটা সরায় একটু। কমলেকামিনী ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখে। কার্ণিশের নীচের দরজাটায় আওয়াজ হয় ক্যাঁঅ্যাঁচ খটাশ। দীপাবৌদি উঠে কলতলায় যাচ্ছে। সুমনা আবার পর্দাটা টেনে দেয়, বাড়িগুলো এত ঘেঁষাঘেষি! কমলেকামিনী ডানা ছড়িয়ে কটনমিলের ফ্ল্যাটগুলোর দিকে উড়াল দেয়, এখন আর এখানে বসে থেকে লাভ নেই।

Thursday, September 10, 2020

স্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্ন - ভারতের তথ্যপ্রযুক্তিক্ষেত্র ও কোভিডের অভিঘাত

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতীক সান্যাল তার সংস্থার মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের একজনের থেকে একটি এসএমএস পায় পরেরদিন তার ল্যাপটপ, হেডফোন, আরএসএ টোকেন ইত্যাদি সংস্থাপ্রদত্ত যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে অফিসে যাবার জন্য। তাতে আরো লেখা কিছু সরঞ্জাম সুরক্ষাবিধির মানের তুলনায় নিম্নমানের হওয়ায় সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে কী করা যায়। প্রতীক পরেরদিন দুপুরে অফিস পৌঁছানো মাত্র দেহের তাপমাত্র পরীক্ষা ও মোবাইলে আরোগ্য সেতু পরীক্ষার পর পরই এক সুরক্ষাকর্মী তার সঙ্গ নিয়ে গাড়িতে চেপে বসেন, তাকে মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের একটি কক্ষে ঢুকিয়ে দিয়ে মোবাইল ফোন অফ করিয়ে তবে তিনি যান। এরপরে সিস্টেম সাপোর্টের লোক এসে তার ল্যাপটপসহ যাবতীয় জিনিষ পরীক্ষা করার নামে চেয়ে নিয়ে যাবার পর ওকে আরেকটি ঘরে পৌঁছে দেয়। সেই ঘরে দুজন বসে, যারা ওকে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি দিয়ে সই করে দিতে বলে। চিঠিতে লেখা আছে ‘ব্যক্তিগত কারণে প্রতীক সান্যাল আজ এই মুহূর্তে এই সংস্থা থেকে পদত্যাগ করছে’। ওর বিভ্রান্ত মুখ দেখে উপস্থিত দুজনের একজন বলেন কোভিডজনিত কারণে সংস্থার ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় তাঁরা প্রতীককে আর রাখতে পারছেন না। ও যেহেতু গত ৪৫ দিন ধরে কোন প্রোজেক্টে নেই, বেঞ্চে আছে, ফলে ওর বেতন সংস্থার জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় এছাড়া আর কোন উপায় তাঁরা দেখছেন না।