খোঁজাখুঁজি

Sunday, June 19, 2011

পরীবালা



--
এ: যত তাড়াতাড়িই কর না কেন, সেই সন্ধ্যে হয়ে এলো ----- খুব বিরক্ত হয়ে ছবির মা আকাশের দিকে একবার তাকাল, যদি মেঘ করে বেলা ছোট লেগে থাকে৷ কিন্তু না: আকাশ তকতকে নীল, সন্ধ্যেই হয়ে আসছে৷ এখনও লালবাড়ির বাসনমাজা আর মুনি দের বাড়ি বাসন মাজা, বারান্দামোছা বাকী৷ তারপর বাড়ি গিয়ে কাপড় ছেড়ে এসে মুনিদের বাড়ির পুজোর বাসন মাজতে হবে৷ মুনির দিদা পাঁচবাড়ির বাসনমাজা কাপড়ে পুজোর বাসন মাজতে দেয় না৷ আর বুড়ীর চোখও বলিহারি, ঠিক বুঝে যায় কাচা কাপড় না ছেড়ে রাখা কাপড় পরে এসেছে৷ তবে বুড়ী বকাবকি করে টরে না৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু বলে 'ঠাকুর তুমি দেখো'৷ ঐ শ্বাস আর বলার মধ্যে কি যেন থাকে, ছবির মা'র ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়৷ দুই একদিন হয়েছে এরকম৷ তাড়াহুড়োতে ছবির মা আর কাচা কাপড় না খুঁজে হাতের কাছে আগের ছেড়ে রাখা কোন কাপড় পরে চলে এসেছে, আর ঠাকুরের বাসন নিয়ে মাজতে শুরু করার পরে মুনির দিদা দেখতে এসেই জিগ্যেস করেছে 'আইজ তুমি কাসা কাপড় পর নাই ছবির মা? এইডা তো আগের ছাইড়্যা থোওন কাপড় মুনে অয়'৷ আর তারপরই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে 'ঠাকুর তুমি দেইখ্যো' বলে আস্তে আস্তে কুয়োতলা থেকে চলে যাওয়া৷ প্রথমবার ছবির মা ভয়ের চোটে কেঁদেই ফেলেছিল৷ ছোট বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘর করে, ঠাকুরের অভিশাপ লাগলে আর দেখতে হবে না৷ এখন খেয়াল করে সকালে রোজ একটা আর দুপুরে করে চান করে খেতে আসে সময় আর একটা কাপড় কেচে দিয়ে যায় ছবির মা, যাতে বিকেলে অন্তত একটা কাপড় শুকিয়ে যায়৷ তা, এই বাড়িতে কাজ করছে আজ চোদ্দো বছর হল, সবারই রীতধর্ম জানা হয়ে গেছে ওর এতদিনে৷