১
-
হাত দুখানা আজকাল কিবোর্ডের চেয়ে মাউসেই বেশী স্বচ্ছন্দ বোধ করে, তাই মাথায় কিলবিল করে বেড়ানো কথাগুলোর আর মুক্তি হয় না৷ এদিকে কিছুই না লিখলে আবার মনটা কিরকম যেন করে৷ অথচ হাবিজাবি চাট্টি অক্ষর বসিয়ে কি যে ছাই স্বর্গলাভ হয়! কিচ্ছু হয় না ---- কিস্যু না৷ হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ মোটের ওপর একইরকম হিংস্র আর মতলববাজ থেকেই গেছে৷ কিছু লোক নানারকম ভাল কথা বলেছে আর দিনের শেষে কিছু লোক সেগুলোকে 'দু: য্যা:' করে দিয়ে অন্যকিছু করে গেছে৷
কয়েক রবিবার আগে চন্দ্রিলের একটা লেখায় পড়ছিলাম যে দিনের বেলায় শিকার করব আর দিনেরাতে অচেনা দুপেয়ে দেখলেই ঘিলু ফুঁড়ে দেব, সন্ধ্যের পর একটা গুহা চাই ছবি আঁকার জন্য--- ঠিক এই কথাগুলোই নয়, এরকম কিছু একটা৷ এটা মন্দ নয় কিন্তু, বরং এটাই বেশ৷ সত্যি বলতে কি আসলে আমরা তাইই করি, শুধু মুখে সেসব বলি না৷ তবে গুহা ততটা সহজলভ্য নয় এখন আর, এইটা একটু সমস্যা হতে পারে বটে৷ অন আ সেকেন্ড থট, মেট্রো সিটিতে ফ্ল্যাটগুলোকে একটু এদিক ওদিক করে গুহায় পরিণত করাই যায়৷
২
-
আমি যে আবাসনে আপাতত থাকি, সেখানে বেশীরভাগই চাকুরিজীবি৷ সম্প্রতি সেখানে সুরক্ষাকর্মীদের নিয়ে পরিস্থিতি, যাকে বলে, 'একটু উত্তপ্ত' হয়ে উঠেছিল৷ এই ধরণের আবাসনগুলো যেমন হয় আর কি, চব্বিশঘন্টাই সুরক্ষাকর্মী থাকে৷ প্রধান ফটক ছাড়াও প্রতিটি টাওয়ারের নীচে এক বা দুইজন দাঁড়িয়ে থাকেন৷ তো, হঠাত্ই একদিন জানা গেল এঁরা নাকি গত দুইমাস বেতন পাচ্ছেন না আর তার আগের মাসে কেউ অর্ধেক কেউ পৌনে পেয়েছিলেন৷ নিরুপায় হয়ে তাঁরা ইউনিফর্ম খুলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন৷ ফলে প্রধান ফটক হাট করে খোলা৷ যাই হোক, দু তিনদিন প্রতিবাদ দেখানোর পরে এঁরা বকেয়া বেতন পেলেন৷ এক কর্মীর কাছে শুনলাম তাঁদের সবাইকে নাকি অন্য একটি সুরক্ষাকর্মী যোগান দেবার সংস্থা কিনে নিচ্ছে৷ তাঁরা এখানেই থাকবেন, শুধু ইউনিফর্ম বদলে যাবে৷ ভাবলাম ভালই হল৷
ওবাবা! কদিন পরে মাস পয়লায় যেই এঁরা অন্য ইউনিফর্ম পরে কাজে এলেন, ব্যাস ফ্ল্যাট মালিকরা গেলেন বেজায় ক্ষেপে৷ ওঁদের সাথে পরামর্শ না করেই কেন অন্য সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে ---- তাই নিয়ে তুমূল হইচই, চেঁচামেচি৷ শোনা গেল এই কর্মীদের 'দূর করে' দেওয়া হবে এবং অন্য সংস্থা (অথবা পুরানো সংস্থা)কে৷ কিন্তু কেন? তার কোন ঠিকঠাক উত্তর পেলাম না৷ এতদিন যখন এঁরা বেতন পাচ্ছিলেন না, তখন 'ওটা ওঁদের সংস্থার ব্যপার' বলে সবাই দিব্বি নিজ নিজ টিভি প্রোগ্রামে মন দিয়েছেন৷ এখন যে ঠিক কি সমস্যা হল, সেটা আমার বোধের বাইরেই রয়ে গেল৷ এই পর্যন্ত তবু একরকম ছিল, কিন্তু কিছু ফ্ল্যাটমালিক যখন এরজন্য সই সংগ্রহ করতে এলেন, তখন দেখি বক্তব্যের একজায়গায় লেখা আছে ঘরের কাজের লোক, কমন প্যাসেজ ঝাঁট দেবার লোক, নোংরা সংগ্রহকারী, খবরের কাগজ, ইস্ত্রি ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের লোকদের লিফট ব্যবহার নিষিদ্ধ করার একটা দাবী রয়েছে৷ এটা দেখে আমি যে আমি সহজে অবাক হই না, সেও প্রচন্ড অবাক হলাম৷ ৮ তলা বা ১২ তলা বাড়ীগুলোর বেশ ওপরের দিকে থাকা লোকজনও এটায় সই করেছেন!!! কারণ জিজ্ঞাসা করে জানলাম এঁরা নাকি লিফট ঠিক করে বন্ধ করেন না, তাই কোন একটা তলায় আটকে থাকে৷ অথচ আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাসিন্দারাই এই কম্মটি হামেশা করে থাকেন৷ নির্দিষ্ট কিছু উদাহরণ দিয়ে 'স্ট্রংলি অবজেক্ট' লিখে সই করলাম৷ সই লেনেওয়ালারা খুবই অসন্তুষ্ট হলেন, কাগজটা নাকি নষ্ট হল৷
ভরসার কথা এটাই যে আমার চেঁচামেচি শুনে সামনের ফ্ল্যাটের তরুণ দম্পতি বেরিয়ে চেঁচামেচিতে যোগ দিল৷ যাক বাবা! সবাই তাহলে নিজের খোপে বন্দী হয় যায় নি৷
৩
-
পশ্চিমবঙ্গে 'পরিবর্তন' আসছে৷ পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ৷ ২০১১র বিধানসভা নির্বাচনই লক্ষ্য৷ গত পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস রীতিমত ভাল ফল করেছে৷ ফলে মমতা ব্যনার্জী বেশ উত্সাহিত৷ লোকজনের মধ্যেও সিপিএমের প্রতি একটা অসহিষ্ণু মনোভাব দেখা যাচ্ছে৷ মুশকিল হল মমতাদিদির কাজকম্মো দেখে ঠিক বিকল্প বলে ভরসা রাখা বোধহয় ওঁর অতিবড় ভক্তের পক্ষেও কঠিন ব্যপার৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গ এমনই এক হতভাগা রাজ্য যে এর চেয়ে ভাল কোন বিকল্পও চোখে পড়ছে না৷ রাস্তাঘাটে লোকে বলছে আগে তো এরা বিদেয় হোক তারপর দেখা যাবে৷ এদিকে এই ভরসায় তৃণমূল এখনই তার লোভী চেহারা দেখাতে শুরু করেছে৷ গতবছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল জিতে এসেছে, এমন একটি এলাকায় টাকাপয়সার অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করে শুনলাম 'দিদি এতদিন তো সিপিএম লুটেপুটে খেলো এবারে আমাদের কিছুদিন খেতে দিন'৷ দিব্বি বলে দিল৷ একেবারে খোলাখুলি৷ কোন লজ্জাশরমের বালাইটুকুও নেই৷
তবে এটাই সব নয়৷ এর পাশের পঞ্চায়েতেই আগে বসানো দুটো টিউবওয়েল ছিল সিপিএম সদস্যদের কারো না কারো উঠানে৷ চারিদিকে পাঁচিল ঘেরা জায়গায়৷ ফলে গ্রাম্য কোঁদলের ফলে সেই টিউবওয়েল থেকে জল নিতে মানা করে দেওয়াও ছিল নিত্যনৈমিত্তিক৷ তৃণমূল এসে আরো দুটো বসিয়েছে৷ দুটোই গ্রামের রাস্তার পাশে সর্বসাধারণের আওতার মধ্যে৷ লোকে বেশ খুশী৷ এতদিন গ্রামের দিকে নিজের বাড়ীতে একটা খুঁটি পুঁততে গেলেও 'পার্টি অফিস' থেকে অনুমতি না নিলে ক্যাচাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকত৷ ছেলেমেয়ের বিয়ে, বাড়ী বানানো বা বাড়ানো, স্কুলের চাকরী সবেতেই 'পার্টি'র অনুমোদন দরকার৷ তো, পার্টির এই কন্ট্রোল ফ্রিক চেহারাটা মানুষ আর সহ্য করতে চাইছে না৷
সল্ট লেকের 'ইন্দিরাভবন' জ্যোতি বসুর বাসগৃহ হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ ফলে নিরাপত্তার অজুহাতে সামনের রাস্তাটায় যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হত না৷ রাস্তার বিভাজিকার ওপারের একদিকের গাড়ি চলাচলের অংশটুকু দিয়েই দুদিকের গাড়ি চলত৷ ব্যস্ততার সময় লোকের হয়রানির আর শেষ থাকত না৷ এখন ভদ্রলোক মারা যাওয়াতে রাস্তার একদিকের ব্যারিকেড উঠে গেছে৷ ফলে দুদিক দিয়েই গাড়ি চলে৷ গত সপ্তাহে এক অটোওয়ালা নেশ নিরক্তির সাথে বললেন 'কারো কারো মিত্যুও কেমন কাজে লাগে দেখছেন' ৷ বাকী যাত্রীরা অনেকেই সায় দিলেন৷ শুধু একজন 'জননেতা' ইত্যাদি বলে বক্তৃতা শুরু করেছিলেন৷ এরমধ্যে উল্টোডাঙা স্টেশান এসে গেল, আমি নেমে গেলাম৷ ঐ ভদ্রলোকের বক্তৃতাটা আর শোনা হল না৷ তবে সর্বহারার নেতার এমন লাটসায়েবের মত জীবনযাপন --- :)
৪
-
মমতা ব্যানার্জী রেলমন্ত্রী হয়ে অবধি গাদাগাদা নতুন ট্রেন উদ্বোধন করে চলেছেন৷ এই ট্রেনগুলো চালানোর পয়সাই বা কোত্থেকে আসবে আর অন্যান্য পরিকাঠামোই বা কীভাবে হবে সে বিষয়ে তিনি নীরব৷ এদিকে রেলের পরিষেবার হাল দিনেদিনে খারাপ হচ্ছে৷ লালুপ্রসাদ যাদবের আমলে ট্রেনগুলো দিব্বি টাইমটেবল মেনে চলত টলত৷ এখন রোজ নতুন ট্রেন চালু হওয়ার ফলে টাইমটেবল ঘেঁটে ঘুগনি হয়ে গেছে৷ ওদিকে আরেক নাটক হল সব স্টেশানের রং বদলে সবুজ করে দেওয়া৷ আবারও টাকার প্রশ্নে তিনি নীরব৷ রেল দুর্ঘটনাও এদিকে বেশ জলভাত হয়ে গেছে৷ ভারতীয় রেল মোটামুটি এবারে বিজ্ঞাপন দিতে পারে "ট্রেনে চড়ে ভ্রমণ করুন, আপনার পরিবার পাঁচলক্ষ টাকা ও একটি চাকরি পেতেও পারেন'
মমতার আরেকটি অবদান হল 'লেডিজ স্পেশাল' ট্রেন৷ বিভিন্ন শাখায় স্বল্প দূরত্বের লোকাল ট্রেনে একটি করে আপ ও ডাউন লেডিজ স্পেশালের ব্যবস্থা করেছেন তিনি৷ কোন কোন শাখায় কিছু কিছু সময় এটা সত্যিই বেশ কাজের৷ মানে ঠ্যালাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি ছাড়াই ট্রেনে ওঠা ও বসার জায়গা নিশ্চিত হওয়াটা কোথায়ও কোথায়ও এমনই অচিন্তনীয় একটা ব্যপার ছিল যে সেইসব ক্ষেত্রে এটা খুবই উপকারী হয়েছে৷ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা একদম ফালতু৷ লেডিজ স্পেশান শুনশান ফাঁকা ওদিকে পাশের লোকালটার পাদানীতেও জায়গা নেই ---- এটা আর যাই হোক, খুব একটা ভাল ব্যপার বা উপকারী পরিষেবা বলা যাবে না৷ সে যাক মহিলা কামরা ও মহিলা স্পেশাল নিয়ে আস্ত একটা লেখাই লিখে ফেলা যায়৷ অতএব এখানেই ক্ষান্ত দিই৷
তা, এই মমোদিদি কিন্তু আবার সাহিত্য শিল্প্চর্চাতেও খুবই আগ্রহী৷ এঁর বেশ কিছু কবিতার বই আছে৷ সেগুলো আবার বেস্টসেলারও৷ ইনি ছবিও আঁকেন, গল্প উপন্যাসও লেখেন ইত্যাদি ----- তা লিখুন্৷ তাতে কোন আপত্তি ছিল না৷ কিন্তু কেলোটা হল যখন এঁর লেখা কিছু প্রবন্ধ জাতীয় জিনিষ সংবাদপ্ত্রে বেরোতে টেরোতে লাগল৷ উরি বাবারে!! সেসব পড়লে যে কোন বাঙালী নির্ঘাত্ বাংলা বাক্যগঠন ভুলে যাবে৷
আহা সে জিনিষ থেকে পাঠকরা বঞ্চিত থাকবেন, তাই কি হয়! এই ব্লগটাকে আর বড় না করে এখানে একখান নমুনা দিয়ে যাই৷
কই? নমুনা কই? :-)
ReplyDeleteShuchismita r theke ei blog er khoNj pelum...besh valo lagchhe...
ReplyDelete