খোঁজাখুঁজি

Friday, January 28, 2011

কলিকাতা পুস্তকমেলা - প্রথমদিনের এক ঝলক

যথারীতি জানুয়ারীর শেষ বুধবারে শুরু হয়ে গেল কলিকাতা পুস্তকমেলা কততম বর্ষ যেন? খেয়াল নেই আসলে আমি তো মেলায় যাই না সে কত্তবছর হয়ে গেল ২০০২ এ যখন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়লাম সেই তখন থেকেই আর বইমেলায় আসা হয় না যেবার সুভাষ দত্ত মশাই গিল্ডকে পার্ক স্ট্রীটের সামনের ময়দান থেকে উৎখাৎ করেই ছাড়লেন, সেইবারে আমি বইমেলা দেখব বলেই ছুটি নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু হায় বইমেলা সেবারে আজ হচ্ছে, কাল হচ্ছে করে এত দেরী করে ফেলল যে আমার ছুটি ফুরিয়ে গেল একদিন শুধু গিয়ে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ঠাঁই ঠকাঠক করে স্টল বানানো দেখে এলাম তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড গতবছর থেকে আর ঝামেলা ঝঞ্ঝাট না করে 'মিলনমেলা' প্রাঙ্গনেই বইমেলার আয়োজন করছে এই মিলনমেলা প্রাঙ্গনটা ময়দানের জায়গার তুলনায় বেশ একটু ছোট তাই নিয়ে গজগজ করলেও আপাতত ওখানেই হচ্ছে বইমেলা
জানুয়ারীর শেষ বুধবার সাধারণতঃ ২৬শে জানুয়ারীর আশেপাশেই হয় প্রতি বছর আর ২৬শে জাতীয় ছুটি হওয়ার সুবাদে ঐ দিনটায় মেলায় ভালই লোক হয় তায় এইবার থেকে গিল্ড প্রবেশমূল্য তুলে দিয়েছে এতদিন ৫ টাকা করে টিকিট কেটে ঢুকতে হত আমি ও আমার দু একজন বন্ধু অবশ্য স্বার্থপরের মতই চাই গিল্ড প্রবেশমূল্য আরো অনেকটা বাড়িয়ে দিক, যাতে মেলায় ভুলভাল ভীড়টা একটু কম হয় ময়দানের মেলায় বইয়ের সাথে বিশেষ সম্পর্ক না থাকা, নিছকই সময় কাটানো লোকজনের সাথে এমনকি ছেলে-মেয়ে দেখার কাজটাও সারতে দেখেছি প্রবেশমূল্য তুলে দিলে এই ধরণের লোকজনের আনাগোনা আরো বাড়বে বলেই আশঙ্কা




সে যাই হোক, এতসব আশঙ্কা সত্ত্বেও ২৬শে দুপুর হতেই উসখুস রওনা দেওয়ার জন্য, এবং পৌনে তিনটে নাগাদ দিব্বি ঢুকেও পড়া গেল গাড়ী রাখার ব্যবস্থা মিলনমেলার পাশে একটা খোলা জায়গায়
নাকি সেটা মিলনমেলারই অংশ --- কে জানে! মোটকথা অজস্র গাড়ীর ভীড় আর কলকাতার অধিকাংশ ড্রাইভারের ফর্মূলা ওয়ান চালানোর রোখ মিলে সিলভার আর্কেডের দিকের গেটটার পুরো বড়বাজারের মত অবস্থা তারই মধ্যে আবার দেখি গেটের বাইরে ম্যারাপ বেঁধে কখানা টাটা ন্যানো দাঁড় করিয়ে রেখেছে বিক্রীর জন্য না বিজ্ঞাপনের জন্য ভগাই জানে এই ন্যানো গাড়ীটা দুমদাম রাস্তায় ঘাটে জ্বলে যায় বলে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে হয়ত দেখাচ্ছে যে না না জ্বলছে না --- হতেও পারে যাই হোক সেসব কাটিয়ে মাটিয়ে সাঁত করে ঢুকে পড়া গেল


এবং এবং ঢুকতেই দেখি মাটিতে বিছানো আল্পনা আর দেওয়ালে ঝোলানো ওয়াল হ্যাঙ্গিঙের সম্ভার, চাট্টি ছবি আঁকা টি-শার্টও কিছু লোক হামলে পড়ে কিনছে অনেক দোকান এখনও তৈরী হয় নি, কিন্তু জোরদার কাজ চলেছে ময়দানের মত ভেতরে চা-কফি, ঝালমুড়িওয়ালা ঘুরছে না নির্ধারিত স্টলে গিয়ে খেতে হচ্ছে ইউ এস প্যাভিলিয়ানের বাইরে লম্বা-আ লাইন 'আনন্দ' আর 'দে'জ'এর সামনে এখনও লাইন পড়ে নি শনি রবিবারে লাইন পড়বে নির্ঘাৎ বইমেলায় গিয়ে বড় প্রকাশকদের দরজায় লাইন দেওয়াটা আমার কাছে খানিকটা হুজুগ আর খানিকটা নির্বুদ্ধিতা বলে মনে হয় বরং ছোট প্রকাশক যাঁদের কলেজ স্ট্রীট বা এখানে সেখানে চট করে পাওয়া যায় না, তাঁদের আনা বইগুলো ভাল করে নেড়েঘেঁটে দেখার এইটা সুবর্ণ সুযোগ 'দেব সাহিত্য কুটীর'এ দেখ্লাম ছোটবেলার সেইসব পুজোসংখ্যাগুলো আবার বের করেছে, আগের প্রচ্ছদ আর আগের মত প্রিন্ট করে আশাপূর্ণা দেবীর 'গল্প ভালো আবার বলো' পেয়ে যে কি আনন্দ হল ---- ওঁরাই জানালেন 'শোনো শোনো গল্প শোনো' ও শীগগিরই এসে যাবে আহা দিনকাল দেখছি বড়ই ভাল

এদিকে আমাকে ছবি তুলতে দেখে এক ভদ্রলোক গভীর আগ্রহের সাথে জানতে চাইলেন কোন কাগজে ছাপা হবে? কোনও কাগজেই নয় শুনে হতাশায় মুখ বেঁকে গেল ওদিকে গিল্ডের মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের রচনায় প্রকৃতি বা অমনি কিছু একটা বিষয়ে আলোচনার জন্য রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় আর শ্রীজাত আসবেন বলে ঘোষণা হচ্ছে এককালে বড় সাধ ছিল এই রঞ্জন বন্দ্যো'কে রাস্তাঘাটে যেখানেই পাব উদুম ক্যালাব এই গিল্ড মঞ্চ বা তার আশেপাশে একটা ভাল সুযোগ ছিল ---- কিন্তু হায়! জীবন চলে গেছে কুড়ি কুড়ি বছরের পার --- কমেছে হাতপায়ের ক্ষিপ্রতা, কমেছে রাগের ঝাঁঝও লিটল ম্যাগের তাঁবুতে গিয়ে দেখি অর্ধেক টেবিলও তৈরী হয় নি সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ টেবিল সাজাতে প্রায় দুশো লিটল ম্যাগের স্টল সবকটা ঠিক করে দেখার জন্য সামনের সপ্তাহে একদিন যাব প্রকাশকদের মধ্যে 'লালমাটি' খুঁজে পেলাম না, 'তালপাতা' পেলাম কিন্তু নতুন বই কিছু আসে নি.  'চর্চাপদ' এ একগাদা নতুন বই --- দেখেই মন ভাল হয়ে গেল
ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ সংগ্রহটা কিনতে হবে কিনতে হবে আরো কটা বইও 'অনুষ্টুপ' আর 'লিটল ম্যাগ' নেই মস্ত বড় হয়ে গেছে আলাদা স্টল দেয় ঘুরেফিরে দেখা গেল


এদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গিল্ড মঞ্চে কিছু বক্তৃতা টক্তৃতা দিয়ে কৃত্তিবাসের স্টলের সামনে এসে গ্যাঁট হয়ে বসে অটোগ্রাফ বিলোচ্ছিলেন৷ মহিলামহলে সুনীলের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি৷ প্রতিবারই মেলায় অজস্র মহিলা সুনীলকে ঘিরে সই সংগ্রহ, সুনীলের সাথে ছবি তোলা ইত্যাদি করেন৷ এবারেও তার ব্যতিক্রম নেই৷ লোকে ফটাফট মোবাইলের ক্যামেরায় ছবি তুলে যাচ্ছে৷ এই সময় দুটো টুকরো ঘটনা এক বন্ধুর থেকে শুনলাম৷ (ঐ সময় আমি অন্যদিকে ঘুরছিলাম)


ঘটনা ১: এক দম্পতি যাচ্ছিলেন সামনে দিয়ে৷ হঠাত্ ভদ্রলোক থমকে দাঁড়ালেন৷ তারপর স্ত্রীকে বললেন 'চলো ওঁর সাথে ছবি তুলি৷' স্ত্রী রাজী নন, কে না কে বসে আছে তার সাথে ছবি তোলার কি আছে - এই বক্তব্য৷ ভদ্রলোক অসহিষ্ণু হয়ে বললেন আরে উনি সুনীল গাঙ্গুলী৷ ভদ্রমহিলা একটু থমকে জিগ্যেস করলেন সে আবার কে? ভদ্রলোকের উত্তর 'আরে উনি 'মনের মানুষ' সিনেমাটা লিখেছেন' ৷ এবারে আর আপত্তি না করে ভদ্রমহিলাও এগিয়ে গেলেন৷


ঘটনা ২: অটোগ্রাফ দিতে দিতে সুনীল উঠে গেলেন টয়লেটের দিকে৷ টয়লেটের দরজায় একপাল নারীপুরুষ তাঁকে ঘিরে ফেলে সই নিতে, ছবি তুলতে লাগল৷ সুনীল দু তিনবার অসহায়ভাবে বললেন 'আমি একটু টয়লেট থেকে ঘুরে আসি' কেউ কোনও পাত্তাই দিল না৷ সুনীলের মুখভঙ্গী নাকি এইসময় দেখার মত হয়েছিল৷

লেখাটা মস্ত বড় হয়ে যাচ্ছে বাকী গল্প আরেকদিন করা যাবেখন
কিছু ছবি রইল
https://picasaweb.google.com/tdamayanti/BookFair26Jan#slideshow/5566546995394357970

No comments:

Post a Comment