১৷
এমনিতে বৃষ্টি নিয়ে আমার তেমন কোন অতিরিক্ত ভাললাগা নেই৷ রাস্তায় বেরোতে না হলে, বৃষ্টির শোভা উপভোগ করতে পারি, কিন্তু বেরোতে হলে বৃষ্টি আমার দু'চক্ষের বিষ৷ এই বছর বর্ষার শুরুর দিকে তেমন বৃষ্টি টিষ্টি হল না, খরা হতে পারে এই সম্ভাবনায় সবাই যখন বেশ চিন্তিত তখনই হুড়মুড়িয়ে শুরু হল বৃষ্টি৷ জুলাই মাসটা বেশ জল চুপচুপে হয়ে কাটার পর গোটা আগস্ট মাসটা শুকনো গেল৷ এরই মধ্যে পুণেতে সোয়াইন ফ্লু একেবারে মহামারী হয়ে দেখা দিল৷ চারদিকে আতঙ্ক, বেশ কিছু লোকজন মারাও গেল, বাজারে জোরদার কনস্পিরেসির গুজব৷ মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় উত্সব "গণপতি উত্সব' এসে চলেও গেল৷ এবারে তেমন জাঁকজমক হয় নি৷ লোকজন নাকে মুখে নাকোশ বেঁধে ঘুরে বেড়াতে লাগল, অথবা বাড়ী থেকে বেরোলই না৷ আগস্টের শেষ থেকে আবার শুরু হল বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ৷ বিভিন্ন জলাধারের জলের উচ্চতা মাপা হতে লাগল রোজ৷ বর্ষাকালে জলাধার ভর্তি না হলে আগামী গরমে লোডশেডিং আর জলকষ্ট দুইই বাড়বে চরমে৷ পুণেতে পানীয় জলের সরবরাহ দেয় খড়গপাস্লা জলাধার৷ ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তার ৭০ শতাংশ ভর্তি হয়েছে৷ বেশ চিন্তার ব্যপার সন্দেহ নেই৷
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আবার শুরু হল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি৷ ইতিমধ্যে সোয়াইন ফ্লু'এর প্রকোপ কিছু কমেছে, স্কুল কলেজ আবার খুলেছে, লোকে আর নাকোশ পরে ঘুরছে না৷ আমার অফিস পুণের কেন্দ্র থেকে ২৭ কিমি দূরে চারদিকে পাহাড় ঘেরা একটা উপত্যকায়৷ যে কোন জানলা দিয়ে তাকালেই গাঢ় সবুজে ঢাকা পাহাড় দেখা যায়৷ শীত গ্রীস্মে এই পাহাড়াগুলো তামাটে উদোম দেহ নিয়ে পড়ে থাকে৷ বর্ষা এলে প্রথমে গুঁড়িগুঁড়ি সবুজে ছেয়ে যায়, ঠিক যেন সবুজ শ্যাওলা লেগেছে, তারপর আস্তে আস্তে জংলি ঘাস আর গাছের ছানাগুলো হাত পা ছুঁড়ে খেলতে খেলতে বড় হতে থাকে৷ সবুজে সবুজ হয়ে যায় সব৷ বৃষ্টি যখন আসে, পাহাড়ের মাথাগুলো আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে থাকে, বিষ্টির ফোঁটাগুলো চড়বড় করে বড় হতে হতে একটা ম-অ-স্ত সামিয়ানা হয়ে সমস্ত পাহাড়গুলো ঢেকে দেয়৷ তারপর সামিয়ানার আড়ালে বছরভোর উপোসী থাকা তৃষ্ণার্ত পাহাড় আর নির্লজ্জ বিষ্টি কি যে ইন্টুমিন্টু করে --- তা আমাদের মোট্টে দেখতে দেয় না৷ একসময় শেষ হয় ওদের গোপন খেলাধুলো, সামিয়ানাটা কে যেন আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিতে থাকে আর পাহাড়গুলো অমনি একটা একটা করে মুন্ডু বের করে৷ঝুপ্পুস বিষ্টি
২৷
এবারে বহুবছর বাদে দুর্গাপুজোর সময় বাড়ী এলাম৷ আমি সাধারণত কালীপুজোর সময় আসি, ভাইফোঁটার পরে আরো দু'চারদিন থেকে তবে ফিরি৷ কিন্তু এবারে কালিপুজোর সময় ছুটি নেওয়া যাবে না, তাই আগেভাগেই নিয়ে ফেললাম৷ আজকাল ভীড় দেখলেই এমন অতিষ্ঠ লাগতে থাকে যে পুজোর সময় কলকাতার ধারকাছ দিয়ে যাই না৷ .তুর্থীর দিন গড়িয়াহাট আর পঞ্চমীর দিন নিউ মার্কেট আর কলেজ স্ট্রীট ঘুরেই আপাতত বাড়ীতে চুপটি করে বসেছি৷ গড়িয়াহাটের ভীড়টা খুব ইন্টারেস্টিং লাগে আমার৷ এখানকার ফুটপাথে অজস্র ছোট দোকান, বড়বড় কাঁচের দরজাওয়ালা দোকানের ঠিক সামনে মুখোমুখিই৷ কিছু লোক শুধুই কাঁচের দরজার আড়ালেই কেনাকাটা করে আর কিছু লোক ফুটপাথে৷ কিন্তু ক্রেতাদের বৃহদংশই দোকান ও ফুটপাথে সমান উত্সাহে কেনাকাটা করে৷
-- অ চুমকি দ্যাক দিনি এই ঘাগরাটা?
-- ন্যা এইটে ক্যামন হালকাপারা, অ দাদা ঐ গোলাপী জরি দ্যাওয়াটা নামান না
-- হ্যাঁ দিদি আসুন একদম বেস্ট কোয়ালিটির জিনিস৷ আমার কাছে ঠকবেন না দিদি
----------------
-- ও মা একটু দাঁড়াও, ঐ বেল্টটা দেখো, কি সুন্দর-- তিনটে বেল্ট তো কিনেছিস, তোর বাবা তো এগিয়ে গেল৷-- ?যাগ্গে আমি ফোন করে নিচ্চি, দেখো না এইটা একটু৷
-----------------
-- হ্যাঁগো টুপাইয়ের আরেকটা জামা নিই?-- থাক্ না, ৩ টে তো হয়েছে, বরং তোমার আরেকটা শাড়ী দেখি চল, ঐ যে ঐ সবুজ টাঙ্গাইলটা৷-- না না আমার আর লাগবে না, মা'ও তো দেবে একটা৷ তুমি একটা শার্ট নাও৷----------------
-- দ্যাখ ঐ সেটটা মনে হয় ঠকে গেলাম রে৷ ৩৫০ টাকা বড্ড বেশী না?
-- যা: কি যে বলিস! ওর চেয়ে সস্তা আর কোথায় পাবি শুনি? হাতিবাগানে গেলে দেখবি কোয়ালিটি খারাপ৷
-- না, আসলে বাবার তো এবারে বোনাস হয় নি, এইটা নেওয়াটা ঠিক হয় নি৷
পছন্দের জিনিসটা কিনতে পারার আনন্দে ভরা মুখগুলির পাশে পাশেই হাঁটতে থাকে দ্বিধাগ্রস্ত ও চিন্তান্বিত মুখগুলি৷ এগরোল আর চাউমিনের গন্ধে ম ম করে রাস্তা৷ পুজো এসে গেছে, সবারই চেষ্টা তাই "আনন্দময়ী'র আঁচল থেকে দুমুঠো আনন্দ সংগ্রহ করার৷
৩৷
অনেকগুলো ইন্টারেস্টিং বই পড়ে ফেললাম৷ একটা শান্তিনিকেতনে মেয়েদের হস্টেল নিয়ে অহনা বিশ্বাসের স্মৃতিচারণ৷ অহনা বিশ্বাসের কিছু কবিতা পড়েছি আগে৷ গদ্য এই প্রথম পড়লাম৷ চমত্কার লাগল পড়তে৷ শান্তিনিকেতনের ছাত্র বা ছাত্রী শুনলেই আমাদের মনে একটা আতুপুতু নেকুপুষু ধরণের ইমেজ ভেসে উঠত আগে৷ এখন আর ততটা হয় না, তবু এই বই শুরু করার সময় যে সেই মনোভাব একেবারে ছিল না --- তা বললে মিথ্যে বলা হবে৷ বইটার আকর্ষণীয় দিক হল ভদ্রমহিলা খুব একটা কারো পক্ষ নেবার চেষ্টা করেন নি, যেমন যেমন দেখেছেন লিখে গেছেন৷ অন্য আরেকটা বই হল ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত এক দারোগার স্মৃতিচারণ৷ বইটি ইংরাজীতে প্রকাশিত হয়, দারোগার আসল নাম প্রকাশ না করেই৷ ঘটনাকাল তারও কুড়ি বছর আগের৷ বইটা পড়লে বঙ্কিমচন্দ্রের "আইন একটি তামাশামাত্র৷ একমাত্র ধনী ব্যক্তিরাই পয়সা খরচ করিয়া উহা দেখিতে পারে' উক্তির যথার্থতা অনুভব করা যায়৷ এ সেই সময়ের কথা যখন নীলকর আর জমিদারের লাঠিয়ালদের ভয়ে সাধারণ মানুষ কাঁটা হয়ে থাকত৷ "ন্যায়বিচার' শব্দটাই ছিল একটা ভয়ঙ্কর ঠাট্টার বিষয়৷ আর জেলে নিয়ে অত্যাচারের বর্ণনা! উফ্ কোথায় লাগে নকশাল আমলের অত্যাচার? অথবা বলতে পারি রুনু গুহনিয়োগীরা আসলে মিয়াজান দারোগাদের উত্তরাধিকারই বহন করে গেছে, এখনও নন্দীগ্রামে, লালগড়ে তাইই বহন করে যাচ্ছে৷ এই মিয়াজান দারোগার অবশ্য তার জন্য কোন অনুতাপ বা অনুশোচনা নেই৷ মিয়াজানের সাফাই পড়তে পড়তে মিলগ্রাম এক্সপেরিমেন্টের কথাই মনে হচ্ছিল বারেবারে৷
অরুন্ধতী রায়ের নতুন বই "লিসনিং ট্যু গ্রাসহপার্স'এর প্রবন্ধগুলো অধিকাংশই আউটলুক বা অন্য কোথায়ও পড়া৷ তবে দুই মলাটের মধ্যে পেয়ে খুব খুশী হলাম৷
তো, সবমিলিয়ে দিনগুলো কাটছে ভালই৷
besh bhaalo laagchhe parhte...
ReplyDelete