বাঙালি ভুতের উত্পত্তি, গায়ের রং, ওজন ইত্যাদি কিছু তথ্য জানতে পেরে, জনস্বার্থে তথ্যগুলি সবাইকে জানানো দরকার মনে হল৷
তো, আসুন তাহলে ভুতের উত্পত্তি দিয়েই শুরু করি৷ মানুষ মরে ভুত হয়, সে তো আমরা সবাই জানি৷ত্রৈলোক্যনাথও বলেছেন "মানুষ মরে ভুত হয়৷ ভুত মরে মার্বেল হয়'৷ ভুতেদের অধিকাংশই মানুষ মরেই হয় বটে, তবে দু'চারটে ভুত কিন্তু অন্য উপায়েও হয়৷ কেমন করে? এই ধরুন "ভুতের বাপের শ্রাদ্ধ' বলে একটা কথা আছে৷ তা সে কথা কি অমনি অমনি আকাশ থেকে পড়ল? নিশ্চয়ই ভুতের ছেলে ভুত হয়, নাহলে আর বাপ মরলে শ্রাদ্ধ করবে কী করে? এরা হল গিয়ে দুইপুরুষে ভুত, ভুতেদের মধ্যে অভিজাত শ্রেণী৷
আবার এই যে একটা কথা আছে "আবাগের/আবাগীর বেটা ভুত' , তা এটা হল না মরে, সশরীরে ভুত হওয়ার উদাহরণ৷ যুধিষ্টির তাঁর পুণ্যির জোরে যদি না মরে স্বর্গে যেতে পারেন, তাহলে অগাধ পাপের ফলে অমন কয়েকজন না মরে ভুতও হতে পারেন বৈকী৷ তো, আমরা তাহলে দেখলাম যে তিনরকমভাবে ভুত উত্পন্ন হয়৷
১) মানুষ মরে ভুত
২) ভুতের বেটা ভুত
৩) আবাগীর বেটা ভুত (সশরীরে)
ভুতেদের তো আর "পঞ্চত্বপ্রাপ্তি' হতে পারে না, কারণ "পঞ্চভুত' থেকে তো এঁয়ারা সৃষ্ট হন না৷ কিন্তু তাই বলে ভুত যে লয়প্রাপ্ত হয় না, সেরকম ভাবাও ঠিক হবে না৷ আর ভুতেরাও মরে তো বটেই৷ নাহলে আর ভুতের ছেলে তার বাপের শ্রাদ্ধ করবে কেমন করে? এছাড়াও ধরুন ত্রৈলোক্যনাথ তো বলেই গেছেন "ভুত মরলে মার্বেল হয়' ৷ তবে হ্যাঁ ভুতেরা কিন্তু একেবারে পূর্ণবয়স্ক ভুত হয়৷ ভুতশিশু বলে কিছু হয়টয় না৷ কারণ পাপী মানুষ মরলে ভুত হয়, কিন্তু ৫ বছরের চেয়ে ছোট কোন বাচ্চার পাপ হয় না৷ মার্কন্ডেয় মুনি বলেছেন ৫ থেকে পূর্ণবয়স্ক (১৬ বছর) হওয়া পর্যন্ত মানুষ যে পাপ করে, যমরাজ সেই পাপের জন্য কানধরে ঘোড়দৌড় করিয়েই মাপ করে দেন৷ তো, দেখতেই পাচ্ছেন যে ভুত মানেই পুর্ণবয়স্ক৷ "আবাগীর ছেলে ভুত'ও পূর্ণবয়স্ক৷ রইল বাকী ভুতের বেটা ভুত৷ নিশ্চিতরূপে না জানলেও আমার অনুমান এরা অঙ্গজ জনন প্রক্রিয়ায় জন্মায়৷বাঙালিদের মধ্যে ফর্সা লোকের অভাব নেই৷ কেউ ফুটফুটে ফর্সা, কেউ বা উজ্জ্বল গৌরবর্ণ, বেশীরভাগই উজ্জ্বল শ্যাম বা শ্যামবর্ণ, অল্প দু'চারজন একেবারে মিশমিশে কালো৷ ভুতেদের মধ্যে কিন্তু বর্ণবৈচিত্র্য খুব কম৷ অধিকাংশ ভুত, প্রায় পনেরো আনা তিন পাই ভুত হল গিয়ে ঘোর কালো৷ পেত্নীদের মধ্যে ১০৮ জনই মিশমিশে কালো৷ এক ব্রহ্মদৈত্যই যা ফর্সাপানা৷ "পেঁচো' হল ঘোর নীল বর্ণের৷ বাকী ভুতেরা সব আলকাতরার মত কালো, তামাক খাবার টিকের মত কালো৷ এইজন্যই বাংলায় বলে "ভুতের মত কালো'৷ উনুনের ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় হাঁড়ির তলা যখন কুটকুটে কালো হয়ে যায়, আমরা বলি "কেলোভুত'৷ ভুত যে কালো, তা এমনকি নিরীশ্বরবাদী রবীন্দ্রনাথও স্বীকার করেছেন৷ মনে করুন "পুরাতন ভৃত্য' কবিতা৷ প্রথমেই বলছেন "ভুতের মতন চেহারা যেমন নির্বোধ অতি ঘোর' তারপরে একজায়গায় বলছেন "কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত তামাক সাজিয়া আনে' ইত্যাদি৷ ভুতের চেহারাও বেশ খোলতাই ধরণের৷ চোখগুলো ভাঁটার মত, দাঁতগুলো মুলোর মত৷ বিশেষ করে মুখের দুইপাশ দিয়ে দুটো বড় বড় দাঁত সর্বদাই ঝুলে থাকে৷ কানগুলোও কুলোর মত৷ এদিকে পায়ের পাতা আবার উলোদিকে৷
তাহলে ভুত সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা তো দিয়েই দিলাম৷ এবার ভুতের সাইজ, ওজন, স্থিতি, বয়স, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদে জানতে চাইলে পড়ে ফেলুন "যম দত্তের ডায়ারী' বইটি৷ পেশায় ইতিহাসবিদ, গণিতজ্ঞ ও পরিসংখ্যানবিদ যতীন্দ্রমোহন দত্ত ওরফে "যমদত্ত' একজন সার্থক রম্যরচনাকারও বটে৷ ভুত সম্পর্কে বিশদ আলোচনা ছাড়াও এই বইটিতে আছে "সেকালের কথা' "কচুপোড়া' খাওয়ার উপকারীতা, বিবাহসম্পর্কে তাঁর সরস চিন্তাভাবনা ইত্যাদি বেশ কিছু লেখা৷ সমস্ত লেখার মধ্যেই রসের একটা ধারা কুলকুল করে বয়ে যায়৷ একেবারে তরতর করে পড়ে ফেলা যায়, এমনই একটি বই এটি৷
যমদত্তের জীবত্কাল ১৮৯৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত৷ লেখার ধরণ সরস, তবে চিন্তাভাবনা বেশ কিছুক্ষেত্রেই একটু সেকেলে লাগে৷ "পলিটিকাল কারেক্টনেস' নামে যে বস্তুটার সাথে আজকাল আমাদের অহরহ ওঠাবসা, তা তখনকার যুগে তেমন সুলভ ছিল না৷ তার প্রমাণ এই বইটিতেও জায়গায় জায়গায় আছে৷ হঠাত্ হঠাত্ একেকটা বাক্য বর্তমানের অনভ্যস্ত চোখকানে খট্ করে লাগে৷ কিন্তু ঐটুকু উপেক্ষা করলে, আদ্যন্ত সরস রম্যরচনা৷ বইটির প্রকাশক "রীতা প্রকাশনী' খুবই ছোট প্রকাশনা সংস্থা৷ নতুনও বটে৷ কিন্তু বইটিতে আগাগোড়াই যত্নের ছাপ লক্ষ করা যায়৷ বানানভুল নেই, চমত্কার মুদ্রণ পারিপাট্য, আগাপাস্তলা উত্তম বাঁধাই৷
নাম: যম দত্তের ডায়ারী
লেখক: যতীন্দ্রমোহন দত্ত
প্রকাশক: রীতা প্রকাশনী
দাম: ১২০/- টাকা
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২২৯
thanks for share best horror story
ReplyDelete