খোঁজাখুঁজি

Thursday, March 5, 2009

এবড়ো খেবড়ো রং - ১

এক এক্কে এক
---------------
কবে যেন একটা "বিশ্ব চকোলেট দিবস' ছিল ৷ তাই নিয়ে অফিসে শুরু হল আদিখ্যেতা ৷ এই যে মন্দার বাজার, তা এইচ আরের লোকজনএর হাতে আর তেমন কাজটাজ নেই , নিজেদের গুরুত্ব বোঝাতে তাই প্রতিমাসে একটা করে "ইভেন্ট' এর আয়োজন করে চলেছে ৷ তেমনই এক ইভেন্ট হল চকো-ফেস্ট৷ কদিন ধরে সমানে মাস মেইল আসছে, বক্তব্য হল "চকোলেট কিনুন ও কেনান'৷ কিছু নির্দিষ্ট প্রতিনিধির কাছে আপনি টাকা জমা দিয়ে বলে আসুন কাকে কি কি দিতে চান ৷ ওরা একটা মেসেজ কার্ড দেবে, তাতে আপনার বক্তব্য লিখে প্রতিনিধির হাতে দিয়ে দিন ৷ নির্দিষ্টদিনে সে গিয়ে চকোলেট আর মেসেজ দিয়ে আসবে ৷ বেশ কথা ৷ হাল্কা একটু তাচ্ছিল্যের ভাব থাকলেও আশেপাশের লোকেদের যতটা পারলাম উত্সাহিত করা চেষ্টা করলাম ৷ রুকিদেরই বেশী উত্সাহ ৷


তা এলো সেই দিন ৷ বিকেল চারটে থেকে শুরু হল ডেস্কে ডেস্কে চকোলেট হাতে প্রতিনিধি আসা ৷ সবাই বেশ উত্তেজিত ৷ কিছু প্রত্যাশিত, কিছু অপ্রত্যাশিত ৷ রুকিরা তো বটেই, বেশ সিনিয়াররাও দেখি নির্লিপ্তির ভান করে আড়চোখে আশেপাশে দেখে নিচ্ছেন, কে কটা পেল ৷ এদিকে সামনে মেজর রিলিজ আসছে, অসহ্য চাপ ৷ তারই মধ্যে চলছে টুকটাক করে "ধন্যবাদ', "শুভেচ্ছা' ইত্যাদি ৷ এইসব তানানানা চলতে চলতেই রাত বাড়ে ৷ বাড়ী ফেরার আগে প্রাপ্য চকোলেট ব্যাগে ঢোকাতে গিয়ে দেখি ....................... আরে বাপরে!! কত্তগুলো রে-এ ৷ ১, ২, ৩,................ ৩৫ ৷ অ্যাঁ! ৩৫! না না দুখান খেলাম যে তখন! তার মানে ৩৭!!!! আরিব্বাস!! এত কে দিল?বাসরে, এতলোকে ভালবেসে দিয়েছে! বাড়ী এলাম মাটির ২ ইঞ্চি উপর দিয়ে হেঁটে ৷ রাতে বসে কার্ডগুলো পড়ি একে একে ৷ কত কি লিখেছে কতজনে ৷ সবাই যে আমার প্রোজেক্টের, তা মোটেই না ৷ অন্যান্য প্রোজেক্টের ছানাপোনা অনেকেই দিয়েছে ৷ এইবারে আস্তে আস্তে খেয়াল হয় ঐজন্যই সজ্জু বলছিল "তুনে কেয়া কিয়া?" খালিদ জিজ্ঞাসা করেছিল " আররে দময়ন্তী, তুম ইতনা পপুলার ক্যয়সে বন গয়ি?" সত্যি তো, কেন? কেন? আমাকেই কেন? কে জানে!
তবে বহুত ভাল লাগছে মাইরি ৷
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দুই দুগুণে --- কত যেন?

-----------------------
মন্দার হাওয়া বিশ্বজুড়ে৷ আমাদের ক্লায়েন্টও এবারে তেমন কাজ দিচ্ছে না৷ ওদের বাজেট নাই৷ এদিকে প্রত্যেক মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার মিটিং ডেকে জানিয়ে দেয় সেই মাসের শেষে কাকে কাকে যেতে হবে৷ এখনও পর্যন্ত্ বেশীরভাগ ভিনদেশীই গেছে, আমেরিকানদের গায়ে তেমন হাত পড়ে নি ৷ তবে সকলেই ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে৷ মাঝেমাঝেই এক আধজন অসন্তুষ্টভাবে বলে -- তোমরা তো তেমন কিছুই পারটার না, অথচ আমাদের সব কাজগুলো তোমরা দিব্বি নিয়ে নিচ্ছ ৷ মায়াও লাগে বেচারাদের জন্য --- আবার অল্প অল্প রাগও হয় --- ব্যাটারা সর্বত্র দাদাগিরি করে বেড়াস এখন দ্যাখ কেমন লাগে!
এই ক'মাস আগেও বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের প্রোমোশনাল কলের জ্বালায় পাগল পাগল লাগত ৷ স্রেফ মুখ দিয়ে একবার "হ্যাঁ' বলে দিলেই আকাশ থেকে চাঁদতারা পেড়ে এনে দেয় আর কি! মিষ্টি কথায়, বকেঝকে কিছুতেই তাদের তাড়ানো যেত না --- শেষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভয় দেখালে কাজ হোতো ৷ কবে থেকে যে কল আসা কমে গেল ---- আর কবেই বা একদম বন্ধ হয়ে গেল ---- ঠিক করে খেয়াল নেই৷ "আপদ গেছে' ভেবে নিশ্চিন্তই ছিলাম৷ হঠাত্ই সেদিন একজন ফোন করে প্রথমে চাট্টি খেজুর করল৷ তারপর জিগ্যেস করে যে আমার কাজকর্ম কেমন চলছে? আমি ততক্ষণে মোটামুটি নিজের মস্তিষ্কের হার্ডডিস্ক সার্চ শেষ করে নিশ্চিত হয়েছি যে একে আমি চিনিটিনি না ৷ খ্যঁকখ্যাঁকিয়ে উঠতে গিয়েও কি মনে হল, নরম করেই পরিচয় জিজ্ঞাসা করলাম৷ বলে যে অমুকতমুক ব্যাঙ্কের হোমলোনের ব্যবস্থা করে দিত৷ ও: সেই "মধ্যবিত্তের স্বপ্নপূরণের ব্যবস্থা' করনেওয়ালারা! আমি প্রায় চটে উঠতে যাচ্ছিলাম; তার আগেই বলে দিল "দিত' , এখন আর দেয় না --- কারণ ওর চাকরীটা আর নেই --- আজ প্রায় ৩ মাস হল৷ ওদের এজেন্সির যোগাড় করে দেওয়া Rিণগ্রহীতারাই নাকি সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় লোন ডিফল্টার হয়েছে , তাই অমুকতমুক ব্যাঙ্ক ওদের এজেন্সির সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়েছে; শুধু তাই না এজেন্সিকেও ব্ল্যাকলিস্টেড বলে ঘোষণা করেছে৷ ফলে এজেন্সিটি উঠে যায়৷ কি বলব বুঝে উঠতে পারি না, তাই চুপ করে শুনতে থাকি ৷ চোখে ভাসে কাগজে বেরোন ৩ পাতা জোড়া লোন ডিফল্টারের নামঠিকানা, তাদের ক্রীত সম্পত্তি নিলাম করবে অমুকতমুক ব্যাঙ্ক; তারই বিজ্ঞাপন ৷
আচ্ছা ডিফল্টার হওয়ার পর যাদের সম্পত্তি নিলাম হয়ে যায়, তারা তারপর কি করে? তাদের কোন খবর তো কোন কাগজ ছাপে না৷ যারা অনেক সাধ করে একটু একটু করে ধার শোধ করে আনছিল ---- এখন তারা কোথায়? আর এই এজেন্সির ছেলেপুলেগুলো? অল্পবয়সী, মোটামুটি লেখাপড়া করেছে, কাজ চালানোগোছের ইংরাজীও বলতে পারে; স্বপ্ন দেখছিল আরও কিছু "মধ্যবিত্তের স্বপ্ন' সার্থক করিয়ে দিয়ে নিজেদের স্বপ্নগুলোকেও গুছিয়ে নেবে, এরা এখন কি করবে? কিরকম যেন দমবন্ধ দমবন্ধ লাগতে থাকে৷শুনলাম ছেলেটা বলছে, ও একটা পেস্ট কন্ট্রোল এজেন্সি খুলেছে, সবরকম পোকামাকড় মারে, খুব সস্তায় আমার বাড়ীর সমস্ত পোকা মেরে দেবে ----------------------
পেস্ট কন্ট্রোল ! হাহ্ !!!
~~~~~~~~~~~~~~
তিন তিরিক্ষে

------------------------
ধ্যুত্ আর লিখতে ভাল লাগছে না৷ বরং গান শুনুন৷

No comments:

Post a Comment