খোঁজাখুঁজি

Sunday, June 10, 2018

সিজনস অব বিট্রেয়াল – সপ্তম পর্ব

প্রথম পর্ব   দ্বিতীয় পর্ব  তৃতীয় পর্ব   চতুর্থ পর্ব  



সিজন-১ (কন্টিন্যুড)


স্থান কিশোরগঞ্জ   কাল ১৯৪৯ সাল মে মাস 

-
মামাবাড়িতে চার মাস কাটিয়ে যুঁইরা ফিরেছে সবে। মার শরীর এখনও বেশ খারাপ, ছোট্ট পুতুলের মত ভাইটাকে যুঁইই নাড়েচাড়ে, তেল মাখায়, চান করায়, ঘুম পাড়ায়, মুতলে কাঁথা বদলে দেয়। শুধু হাগা পরিস্কার করতে ওর বড় ঘেন্না করে।  এক একদিন মা বিছানা থেকে উঠতেই পারে না, কোনরকমে মাঝে মাঝে উঠে ভাইকে খাওয়ায় আর নিজেও কিছু খায়। সেইসব দিনগুলোতে যুঁইকেই সব কাজ করতে হয়, রান্না থেকে ভাইয়ের হাগা পরিস্কার অবধি। সেইদিনগুলোতে মাঝে মাঝে ইস্কুল কামাই হয়, সব সামলে আর ইস্কুল যাবার সময় করে উঠতে পারে না, ভাল করে ভাত খেতেও পারে না, বারবার হাত ধোয় তবু কেমন খিতখিত লাগে। আজকে তেমন একটা দিন। সেই সকালে চান করে এসে রান্নাঘরে ঢুকেছে। বাবা কাজে বেরোবার আগে ফ্যানাভাত আলুসেদ্ধ ডালসেদ্ধ করে ঘি আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে বেড়ে দিয়েছে।  বাবা বেরিয়ে যাবার পর   মাকে দিয়ে নিজেও ওই নিয়ে বসেছে জলখাবার খেতে,  কিন্তু ফ্যানাভাত ততক্ষণে জুড়িয়ে জল, মুখে বিস্বাদ লাগে। দিদিমণি বলে গরম গরম না খেলে ফ্যানাভাত আর খড় বিচালি একইরকমমার মুখে এমনিই কিছু রোচে না, দুই একদলা খেয়ে সরিয়ে রাখেন, যুঁইকে বলেন খেয়ে উঠে একটু ডাল বেটে ভাল করে ফেটিয়ে  কাঁচালঙ্কাকুচি দিয়ে  বড়া করতে আর এই ভাতকটা ফ্যানের সাথে মিশিয়ে গরুকে ধরে দিতে।  এইসময় সদর উঠানের পাশে মাছওয়ালার হাঁক শোনা যায়। তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে যুঁই  দৌড়ায় সেইদিকে। এদিকে বাচ্চু জেগে উঠে চিল চীৎকার দিতে শুরু করে, খিদে পেয়েছে তার, তায় একলা ঘরে,  এক্ষুণি মাকে চাই। লাবণ্যও কোনমতে শরীরটা টেনে হিঁচড়ে শোবার ঘরের দিকে যান। এই ছোট ছেলেটা হয়ে অবধি শরীর তাঁর এত দুর্বল হয়ে গেছে, কিছুতেই আর সেরে উঠছে না। মায়ের কাছে এবার যত্নও তেমনভাবে  হয় নি --- চারদিকে এত গন্ডগোল, ছেলে তিনটে কলকাতায় পড়ে আছে। এরই মধ্যে সেই শীতের সময় এখান থেকে ফিরে গিয়েই ভান্যুয়াটা প্রথমে পড়ে টাইফয়েডে --- একমাস যমে মানুষে টানাটানি --- ভাসুরঠাকুর ডাক্তারমানুষ, এসে ওঁর কাছে দমদমে নিয়ে  চিকিৎসা করেছেন --- ঠাকুর ঠাকুর করে ছেলে সে যাত্রা সুস্থ হয়ে উঠল। একমাসের মাথায় পড়ল ম্যানেঞ্জাইটিস। এবারে আর বাড়িতে রাখতে ভরসা পান নি ভাসুরঠাকুর, কোন হাসপাতালে যেন ভর্তি করে সমানে দুবেলা যাতায়াত করে করে অন্য ডাক্তারদের  সাথে পরামর্শ করে করে কোনমতে বাঁচিয়ে তুলেছেন। বড়ভাসুর জা দুজনেই মানুষ ভাল, তাঁর ছেলেদের জন্য করেন অনেক। আর বারবার করে যোগেশ লাবণ্যকে বলছেন দেশের পাট চুকিয়ে কলকাতায় চলে যেতে। কিন্তু  যোগেশের ওই এক গোঁ। নিজের দেশ বলে যাকে জেনেছেন তা ছাড়বেন নাবাচ্চুকে কোলে নিয়ে দুধ দিতে দিতে আপনমনে গজগজ করেন লাবণ্য তাইনে বেশী বুঝে, বড়ঠাকুর এতবার কইর‍্যা কইতে আসেন কতাডা কানে লওনের নাম নাই। 

মাটির হাঁড়িতে  জিয়োন পুঁটি আর কইমাছ নিয়ে রান্নাঘরে ফিরে আসে যুঁই, দাম সপ্তাহের শেষে এসে বাবার কাছ থেকে নিয়ে যাবে চরণ জেলে। আগে মাসকাবারিই নিত সব বাড়ি থেকে। এখন কয়মাস ধরে দিনকাল এত খারাপ কে কবে ভিটে ছেড়ে চলে যায়,  কি সব লুটপাট হয়ে কপর্দকশুন্য হয়ে যায়  তাই হপ্তাশেষেই  নিয়ে নেয়। তাও একটা দুটো যে মার যায় না এমন নয়। এই যেমন হরিবাবু পয়লা বৈশাখের কদিন পরে  হঠাৎ একদিন  বললেন চরইন্যা সুমবারে আইস দাম লইতে, রব্বার বিয়াইবাড়ি যাইবাম। রবিবারে সকাল সকাল খেয়ে দেয়ে বাড়িশুদ্ধ সকলে সেই যে গেলেন আর ফিরলেন না। সামনের দরোজা  আলগা করে হাঁসকল টেনে  বন্ধ করা, সে তেমনই পড়ে আছে।  একমাসেও যখন আর ফিরলেন না তখন সবাই বুঝেই গেল ইন্ডিয়া চলে গেছেন। অন্য যে সম্ভাবনাটা হতে পারে সেটার কথা কেউ ভাবতে চায় না, আশা করে পথে কোথাও আক্রান্ত না হয়ে নিরাপদেই তাঁরা সক্কলে ইন্ডিয়া পৌঁছে গেছেন, ওই আশাটুকুই  যা  সম্বল এমন দিনকালে।  বাড়ির উঠোনে একবুক জঙ্গল, চরণ শ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবে গরীবের ট্যাহা কয়ডা দিয়া গেলে ভালা বৈ মন্দ হইত না তাইনের। কাউকে নালিশ করলে যে সুরাহা হবে তেমনও ভরসা নেই,  আর যারা পুরোপুরি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে তাদের হয়েও কেউ পয়সা মিটিয়ে দেবে না আর। এই কটা পুঁটি আর ভ্যাদামাছ  কটা কারো বাড়িতে দিয়ে দিতে পারলেই চরণ আজকের মত বাড়ি ঢুকে যাবে। বৌ ততক্ষণে পান্তার সাথে  খাবার জন্য  কালকের বিক্রি না হওয়া চুনোমাছকটা দিয়ে ছালুন রেঁধে রাখবে। গরমটা পড়েছে তেমনি, ঘামের চোটে শরীর থেকে মনে হয় এক নরশুন্দা জল বেরিয়ে যায় রোজ। দেশ স্বাধীন হয়ে আলাদা হল তার আগে থেকে মারপিট কাটাকাটির খবর আসছে,  হরিবাবু, নীরদবাবুরা সব বলল জাউল্যা, যুগী, মাইশ্যরার কুনো ডর নাই। হেগরে  ত এমনেও লাগব। ডর হইল আমরার। তা প্রথম অনেকদিন, এই গেলবছর অবধি চরণ নির্বিবাদেই ছিল, চার পুরুষের জেলে তারা। জমা নেওয়া ভাগের পুকুর আছে একটা, নরশুন্দাতেও মাছ ধরে কিছু, সেই বিক্রি করেই দিব্বি চলছিল। কিন্তু এই বছরের গোড়ার দিক থেকে নানারকম খবরে ভয়ে ভয়েই থাকে খানিকটা। অন্য কোথায় সব  ইন্ডিয়া থেকে আসা নতুন লোকেরা এখানকার মুসলমানদের সাথে মিশে নাকি হিন্দু জেলেদের জমা নেওয়া পুকুরে আর মাছ ধরতে দিচ্ছে না, মারধোর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। সত্যি মিথ্যে জানে না,  খালি চুপচাপ নিজের কাজ করে যায়, বুঝে উঠতে পারে না কোথায় যাবে? ইন্ডিয়ায় তো ওদের কেউ নেই। কী করেই বা যাবে? সেখানে গিয়ে দুটো ভাতের যোগাড় হবে  কী করে?

-
ব্যাঙ্কে আজ লোকের চাপ কম। যোগেশ ঘুরে ঘুরে  ক্যাশে বসা সব কটা কাউন্টারের কর্মীর সাথে একটা দুটো কথা বলে এসে আবার নিজের ঘরে বসলেন।  এই বেঙ্গল ইউনিয়ান  ব্যাঙ্কে ঢুকেছিলেন সেই কত  বছর আগে, যখন প্রথম কিশোরগঞ্জে এরা শাখা খোলে। কিশোরগঞ্জ হাই স্কুলের ইংরাজি আর ইতিহাসের মাস্টারের বেতনের তুলনায় এই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের বেতন দুশো টাকা বেশী এটা দেখেই আর সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করেন নিতখন থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছেলেদের তিনি কলকাতার কলেজেই পড়াবেন, ম্যাট্রিকুলেশানের পরেই পাঠিয়ে দেবেন। বড়দাও বলেছেন বরাবর ছেলেদের কলেজিয় শিক্ষা  যেন কলকাতায় থেকেই হয়। তবে  ছেলেদের যোগেশ কলকাতায় বড়দার বাড়িতে থাকতে দেন নি, মেসে ব্যবস্থা করে নিতে বলেছেন, তারা তা নিয়েওছে।  বড়দা এতে একটু দুঃখ পেয়েছেন,  চিঠিতে লিখেছেন শুধু নয় মুখেও জানিয়েছেন সেকথা। কিন্তু তা হোক,  ওতে সারাজীবন  শান্তি থাকবে। তিন ছেলেই যাওয়া আসা করে, আর এই যে ভানুর এত বড় বড় দুটো অসুখ গেল, তা বড়দা না দেখলে ঐ ছেলে কি আর বাঁচত নাকি! বড়বৌঠান বড়দা যেভাবে বুক দিয়ে আগলেছেন ভানুকে তার ঋণ কোনোদিন শোধ হবার নয়।  বড়দা বারবার বলে পাঠাচ্ছেন ওদেশে চলে যেতে, হয়ত যাওয়াই উচিৎ কিন্তু  এখনও নিজের মনকে বুঝিয়ে উঠতে পারেন নি যোগেশ, অথচ চোখের সামনেই দেখছেন প্রতিদিনই অবস্থা আরো একটু করে খারাপ হচ্ছে।  আর যুঁই বড় হচ্ছে, মেয়ে তাঁর বেশ সুন্দরই দেখতে, লাবণ্যর  গায়ের রঙ পেয়েছে, পাড়ার লোকে বলে ঘোর আঁধার রাতেও আলো ছাড়াই যুঁইকে দেখা যায় এত পরিস্কার রঙ। এই নিয়ে লাবণ্যর মনে একটা চাপা গর্ব আছে, জানেন  তিনি। কিন্তু  দিনে দিনে যা অবস্থা দাঁড়াচ্ছে তাতে এই রঙ, ঐ স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্যই না মেয়ের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর বড় ছেলেরা সব অন্য দেশে থাকবে সারাজীবন এই মেয়ে আর ছোটছেলে নিয়ে তাঁরা দুজন আর একটা অন্য দেশে থাকবেন --- তাহলে আর কিসের সংসার আর কিসের কি!  মাসকয় আগে আকরম আলির প্রস্তাব বিনাদ্বিধায় নাকচ করেছিলেন যে মনের জোরে, দৃঢ়বিশ্বাসে ভর করে, সে জোর, সে বিশ্বাস  আর পাচ্ছেন না তিনি।

স্যার লন ঘরঅ যাই গা এইবার আব্বাসসায়েবের গলার আওয়াজে চমক ভাঙে যোগেশের। আফনে আউগাইন, আইত্যাসি বলে  তাড়াতাড়ি খাতাপত্র বন্ধ করে উঠে পড়েন, জানলা বন্ধ করতে গিয়ে দ্যাখেন উত্তর পশ্চিম আকাশ একেবারে কালো হয়ে আছে, চারিদিকে থমধরা ভাব। যাক কালবৈশাখী হবে মনে হচ্ছে --- যা গরমটা পড়েছে, একটু ঝড়বৃষ্টি হওয়া খুব দরকার। দপ্তরী এসে তাগাদা দেয় ন লন অখখনই বাইর না হইলে বিষ্টিত যাইবার পারতাইন না।  ওকে জানলা দরজা বন্ধ করতে দিয়ে বাইরে এসে দেখেন প্রায় সবাই চলে গেছে জানলাও সব বন্ধ, শুধু প্রধান ফটকের কাছে আব্বাসসায়েব আর একজন কনিষ্ঠ কেরাণী দাঁড়িয়ে।  কেরাণীটি গত মাসেই যোগ দিয়েছে, বয়স খুব কম, এই চব্বিশ পঁচিশ  হবে, বাড়ি নিয়েছে আব্বাসসায়েবদের পাড়াতেই। তিনজনে রাস্তায় এসে দ্যাখেন সাইকেলগুলো শোঁ শোঁ করে ছুটছে, যারা হেঁটে যাচ্ছে, তারাও যথাসাধ্য দ্রুতগতি, আকাশ থমথমে, শুধু উত্তরপশ্চিম নয় প্রায় গোটা আকাশই কুচকুচে কালো মেঘে প্রায় ঢাকা। মেঘের মধ্যে  জায়গায় জামরঙা ছোপ --- তীক্ষ্ণ লকলকে বিদ্যুৎ নিঃশব্দে চমকে যাচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। গরুগুলো ডাক ছেড়ে বাড়িমুখো, যোগেশ আপনমনে বলেন জব্বর ঝড় অইবো মনে অয়, দ্যাহেন  এমনকি সরাইল্যা কুত্তাডিও  কই লুকাইসেতিনজনেই যথাসম্ভব দ্রুত হাঁটা দেন।  নইস্যার মিষ্টির  দোকানের সামনে থেকে ওঁরা দুজন  সোজা এগিয়ে যান আর বিদায় নিয়ে যোগেশ ডানদিকের অপেক্ষাকৃত সরু রাস্তা দিয়ে নিজের পাড়ায় ঢুকে  পড়েন।  সঙ্গে সঙ্গেই বিকট আওয়াজ করে কোথায় একটা বাজ পড়ে আর হু হু করে ছুটে আসে  এলোমেলো গরম হাওয়া। বাড়ি ঢুকে বৈঠকখানা লাগোয়া দাওয়া এড়িয়ে ভেতর বাড়ির দিকে ঢুকতে ঢুকতে দ্যাখেন  লাবণ্য  আর মুনিষ রইত্যার বেশ উঁচু গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এইসময়টায় রইত্যা এসে গরু দুইয়ে দুধ রান্নাঘরে রেখে  গরুর জাবনা মেখে,  গোয়ালে ধুনো জ্বালিয়ে  রাতের ব্যবস্থা করে দিয়ে যায়।  কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় দুজনেই হুড়মুড়িয়ে কিছু বলতে যায়। হাত তুলে ঈঙ্গিতে রইত্যাকে চুপ করতে বলে লাবণ্যর দিকে তাকান, তাড়াতাড়ি মাথার কাপড় ভাল করে  নাকচোখ অবধি টেনে উত্তর দেন অ্যালা  রইত্যারে কইলাম  ঝড়বিষ্টিত  না বাইরইয়া দাওয়ার কুনাত বইয়া যা, অইহানো গুবর আসে, এট্টু আইন্যা থো, উইঠ্যা যাওনের সুময় জাগাডা মুইছ্যা থুইয়া যাইস, তা হ্যায় চিল্লাইতাসে। যোগেশ একটু অবাক হয়েই রইত্যার দিকে তাকান, এই নিয়ে সমস্যা কোথায় ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না।  রইত্যা ভীষণ আপত্তির সাথে  মাথা নাড়ায় --- চোখেমুখে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বলে ঠাহুরকর্তা আমি এট্টা মানু, আমি বইতাম বইল্যা মাঠাইরাইন জাগাডা এট্টা জানোয়ারের গু দিয়া মুসাইবো!! বওনের কাম নাই আমার। আর দ্বিতীয় কোন কথা কেউ বলার আগেই বিস্ময়ে হতবাক স্বামী স্ত্রীকে মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে রেখে, তুমূল হাওয়া ও বৃষ্টি, মুহুর্মুহু বাজ পড়ার আওয়াজ মাথায় নিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যায় রইত্যা 

স্থান কলকাতা   কাল ১৯৪৯ সাল  জুলাই মাস 

-
মেসবাড়ির তিনতলার ঘরে বসে ভানু ক্যালকুলাসে  মন দেবার চেষ্টা করছিল। একে তো এখন সুস্থ হলেও  পরপর দুটো ভারী অসুখে ভুগে ওঠার ধকল শরীর এখনও সামলে উঠতে পারে নি, তায়  পরীক্ষায় বসতে না পারায়, এই বছরটা নষ্ট হল; এইসব সাতপাঁচ  চিন্তায় অঙ্কে মন বসছে না।  ম্যাট্রিকুলেশানের ফল বেরোনর দিনটা মনে আসে বারবার। বাবা সক্কাল সক্কাল ঢাকা গিয়ে গেজেট নিয়ে আসে। প্রথম বিভাগ আর নম্বর দেখেই খুশী বাড়ির সবাই। সন্ধ্যের দিকে এসে  পঞ্চম হওয়ার খবর হেডমাস্টারমশাই দেন, প্রণাম করে উঠতে বুকে জড়িয়ে রাখেন কতক্ষণ, বারবার মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে  আশীর্বচন আওড়ান। বাবা গিয়ে নইস্যার দোকানের সব রসগোল্লা আর লালমোহন কিনে নিয়ে আসে। মা যুঁইকে দিয়ে আলাদা আলাদা কাঁসার রেকাবীতে করে পাড়ার সব বাড়িতে মিষ্টি পাঠায়। সে যেন কত বছর  আগের কথা মনে হয়। সেই যে কবে মাকে মামাবাড়ি রেখে এলো ওরা --- ছোট ভাইটাকে কেমন দেখতে হয়েছে কে জানে! এতদিনে নিশ্চই বাবা, মা, বোনের কোল চিনতে শিখে গেছে! যুঁই যেমন অনেকদিন পর্যন্ত মা ছাড়া খালি বাবা আর দাদুর কোলে যেত, ওদের তিনভাইয়ের কোলে কিছুতেই থাকতে চাইত না। মেজদা অবশ্য কোলে নিলেই উঁচুতে তুলে ছুঁড়ে দেবার ভঙ্গী করত আর বোনটা চিল চীৎকার দিয়ে কানত। ভানুও মেজদার দেখাদেখি মাঝে মাঝে দুইহাতে দুলিয়ে ছুঁড়ে দেবার মত করত। কিন্তু দাদা এসব কিচ্ছু করত না, তাও ওর কোলে উঠতে চাইত না।  আর বোনের অন্নপ্রাশনে সে যে কতলোক হয়েছিল! মামাবাড়ি থেকে সবাই, এদিকে বড়জ্যাঠা, মণিকাকারা সবাই, এমনকি দুই পিসি তাদের শ্বশুরবাড়ি থেকে পিসামশায় আর ছেলে মেয়ে নিয়ে এসেছিল, আরো কতজন জ্ঞাতি কাকা কাকিমাদের নিয়ে। বড়মাসীমা বড়মেসোঠাকুর ওদের তখন এক মেয়ে, নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে তিনরাত ছিল।  বাড়ির পুকুরে এতজনের  হয়ে উঠত না, মন্টুমামা, বড়োমামাদের নিয়ে সব বাচ্চা ছেলেরা নরশুন্দায় দাপিয়ে চান করে আসত। বড়জ্যাঠা সঙ্গে করে বহরমপুরের কারিগর নিয়ে গেছিল কাঁচাগোল্লা  বানানোর জন্য।

ঐ ভান্যুয়া, ঘুমাস নাহি? মেজদার বাজখাঁই ডাকে ধড়মড়িয়ে ওঠে ভানু, দুপুর, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। এইসময় মেসবাড়িটা আবার আস্তে আস্তে গমগমিয়ে উঠবে, একে একে ফিরছে লোকজন। দাদার আজ আরেকটা টিউশানি পড়ানোর আছে, ফিরতে ফিরতে সাড়ে আটটা, নটা হবে। দাদা, মেজদা  দুজনেই কলেজের পর টিউশানি পড়াতে যায়, ভানুও যেত অসুখ হবার আগে।  টাইফয়েড থেকে উঠেও আবার শুরু করেছিল, কিন্তু এই ম্যানেঞ্জাইটিসের পর আর বসেই থাকতে পারছে না বেশীক্ষণ। ছাত্ররাও সব অন্য মাস্টার দেখে নিয়েছে, কতদিন আর পড়ার ক্ষতি করবে ওরা! ওদেরই মধ্যে দর্জিপাড়ার দিকে এক বাড়ির দুইভাইকে  দাদা এখন পড়ায়। দাদাটা --- কাউকে কিছু না বলে চুপ করে দুটো টিউশানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এত পরিশ্রম করে এসে বেচারি রাতে আর বসতেই পারে না, খেতে বসেই ঢুলতে থাকে, কোনওমতে খাওয়া শেষ করে হাত মুখ ধুয়েই শুয়ে পড়ে। তাও এক একদিন জেদ করে বই নিয়ে বসে, কিন্তু জাগতে পারে না, বইয়ের পাশেই ঢুলে পড়ে। রাত দশটার পরে ম্যানেজারবাবু আর ইলেকট্রিক আলো জ্বালতে দেন না, তাই সব ঘরেই দুটো একটা হারিকেন রাখতেই হয়।  সুহাষ এসে অভ্যাসবশে ভানুর কপালে হাত দিয়ে একবার দেখে নেয় আবার জ্বর টর এলো নাকি, এই সন্ধ্যেবেলা করে শোয়া, ঘুমানোর অভ্যেস ওদের বাড়ির কারো নেই। বলে উইঠ্যা ব একটু, সইন্ধ্যা হইয়া গ্যাসে, শরীর খারাফ লাগে? ভানু আস্তে আস্তে উঠে মাথা নাড়ে এপাশ ওপাশ। সুহাষ খুব আস্তে  বলে রাস্তার বাত্তি জ্বইল্যা গ্যাসে, মায়ে  দ্যাখলে --- সন্ধ্যেবেলা বিছানায় দেখলে লাবণ্য খুব বকাবকি করেন। তাঁর কঠোর নির্দেশ ছিল রাস্তার আলো, বাড়ির আলো জ্বলবার আগে বাইরে থেকে ফিরে  হাত পা ধুয়ে পড়ার বই নিয়ে বসতে হবে। জ্বরজারি হলেও সন্ধ্যের সময় বিছানা ছেড়ে উঠে বসতেই হত, সন্ধ্যে ছেড়ে বেশ কিছুটা অন্ধকার হয়ে গেলে তবে বিছানায় যাওয়া চলত সন্ধ্যের সময় বিছানায় থাকা, বাড়ির বাইরে থাকা মহা অলক্ষীর লক্ষণ। মা---মা--- আজ কতদিন কতমাস মাকে দেখে না সুহাষ।  ওরা তাও ডিসেম্বরে গেছিল।

-
নীচের কলঘর থেকে গায়ে একটু  জল ঢেলে আসার সময় খবরের কাগজটা হাতে করে ওপরে এলো সুহাষ। ভানু অঙ্ক খাতা, বই রেখে ফিজিক্স বই খুলে বসেছে। বাইরে আবার জোরে বৃষ্টি শুরু হল, আজ দিনেরবেলা তেমন হয় নি, মনে হচ্ছে রাতে সেটা পুষিয়ে নেবে আর কি। ভানু কান খাড়া করে শোনে। অন্যমনস্ক গলায় বলে দাদায় অ্যাক্কেরে ভিইজ্যা আইবো। দুই ভাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করে,  আর কিইবা করবে! বর্ষাকালে বৃষ্টি তো হবেই, আগে হলে এতক্ষণে দাদাও এসে যেত। সুহাষের খেয়াল হয় বড়জ্যাঠার কথা; ভানুর মন ভাল রাখা, হাসিখুশী রাখার চেষ্টা করতে হবে,   দুর্বল শরীর, বছর নষ্ট হয়েছে পড়াশোনায় অত ভাল ছেলেটার, এখন মনও ভেঙে পড়লে খুব মুশকিল হয়ে যাবে, আরো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি করে বলে কাল বড়জ্যাডায় আইবো তরে দ্যাখতে। দ্যাখ আর কয়দিন উনার ওইহানো গিয়া থাইক্যা আয় বরং।  বড়জ্যাঠাইমা আছেন, বড়দা আছে, পারু আছে, এইহানো ত সারাটা দিন একলা থাহস, চিন্তা লাগে বড়ো।  ভানু মাথা নাড়তে গিয়েও থেমে যায়, মেজদা ভুল বলে নি খুব,  মোটামুটি সারতেই জেদ করে চলে এলো বটে, কিন্তু মেসের খাবারদাবার একেবারে মুখে রুচছে না আর সারাটা দিন বসে বসে খালি পড়ালেখার চেষ্টা  করে কাজের কাজ কিছু হয় না, মন বসছেই না মোটে। সপ্তাহখানেক থেকে এলেই হয়। বাবা মাদের খবরও বড়জ্যাঠার কাছে থাকেই প্রায়। উনি কোন না কোনোভাবে খবর আনিয়ে নেন ঠিক। মেজদা হঠাৎ ফিকফিক করে হাসতে শুরু করল। ভানু অবাক হয়ে জিগ্যেস করে হাসস ক্যারে?  সুহাষ বলে তর মনে আছে, তুই ছ্যাপের পাওয়ার দেখাইতে গেসিলি?  এবার ভানুও জোরে হেসে ওঠে। সে বেশ কয়েকবছর আগের কথা, প্রভাস সেবারে ম্যাট্রিক দেবে, ওদের স্কুলেও তখন ছুটি, সবাই বাড়িতে। যুঁই তখনও বেশ ছোট।  দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়ার পরে লাবণ্য সব ভাইবোনদের দক্ষিণের ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা শেকল তুলে বন্ধ করে দিয়ে রান্নাঘর, উঠোনের কাজকর্ম সেরে আরেকদফা স্নান করে এসে  ফিটফাট হয়ে দরজা খুলে দিতেন, ততক্ষণ ওদের ঘুমানো বা পড়াশোনা করার কথা। তা ঘুমের তো প্রশ্নই নেই, পড়াশোনাও দুপুরে কেউ তেমন করত না। নেহাৎ ম্যাট্রিক সামনে  বলে প্রভাস সেদিন পড়ছিল আর বাকী তিন ভাইবোনকে মা শাসিয়ে গেছিল  গলার আওয়াজ যেন শোনা না যায়, তাহলে ---। অগত্যা ভানু নতুন  খেলা উদ্ভাবন করে। কার ছ্যাপের পাওয়ার কত,  ঘরের জানলা দিয়ে দক্ষিণে উঠোনে থুতু ফেলতে হবে, যার  থুতু যত দূরে যাবে তার তত পাওয়ার। বলেই সাত তাড়াতাড়ি দ্যাখছস  আমার ছ্যাপের পাওয়ার  বলে থুউঃ করে থুতু ছোঁড়ে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই লাবণ্য দক্ষিণের উঠোন  ঝাঁট দিতে দিতে তুলসীতলার পাশ থেকে এগিয়ে আসেন --- ফলতঃ  ভানুর থুতু  নীচু হয়ে ঝাঁট দিতে থাকা লাবণ্যর পিঠের ঠিক মাঝখানে গিয়ে পড়ে। তারপর তো ---  মনে করে আবার আরেক চোট হেসে ওঠে দুভাই।

নীচে রান্নাঘরের দিকটা থেকে হঠাৎ গোলমালের আওয়াজ আসে। এখন আবার কীসের গোলমাল! সুহাষ ভুরু কুঁচকে ঘড়ির দিকে তাকায়, প্রভাসের আসার সময় হয়ে গেছে, বৃষ্টিটাও ধরেছে। নাহ গোলমালটা বাড়ছে, ঠাকুরের গলা শোনা যাচ্ছে, কারো উপর তর্জন গর্জন করছে খুব। তিনতলা থেকে সুহাষ মুন্ডু বাড়িয়ে দেখে দোতলা থেকে ননীও ঝুঁকে বোঝার চেষ্টা করছে ঘটনা কী। এইসময় একতলার  বারান্দা থেকে গোবিন্দবাবুর হাঁক শোনা যায় ননী, ভানু, সুহাষ, বিমল একবার নীচে এসো দিকিনি। অসীমবাবুর গলাও পাওয়া যায়।  তাড়াতাড়ি সবাই নীচে দৌড়ায়। রান্নাঘরের সামনেই জটলা, ম্যানেজারবাবুকে দেখা গেল না, শোনা গেল তিনি বেরিয়েছেন, রাতের খাবার আগেই ফিরবেন। ঠাকুর দাঁড়িয়ে খুব গলা চড়িয়ে নতুন কাজের লোক সুখোদিদিকে খুব ধমকাচ্ছে। সুখোদিদি মাথায় ঘোমটা টেনে কি একটা পুঁটলি  বুকের কাছে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হপ্তাখানেক আগে এই বয়স্ক বিধবা এসে ম্যানেজারবাবুর কাছে কাজ চায়, উদ্বাস্তু সেটা কথার টানেই পরিস্কার। নিজের সম্বন্ধে খুব বেশী কিছু বলে নি, শুধু বলেছে নাম সুখো, ওপার থেকে আসতে গিয়ে মাঝপথে পরিবারের সঙ্গ ছাড়া হয়ে গেছে। পরিবারের লোকজন এসে গেলেই খুঁজে নিয়ে যাবে, সেই কদিন পেটের ভাত যোগাতে একটা কাজ দরকার। মওকা পেয়ে ম্যানেজারবাবু আড়াই টাকা বেতন আর পেটভাতায় বহাল করে নেন। ঠাকুর বা দুখী কেউই এতে খুশী হয় নি অবশ্য। পরশু ঠাকুর কামাই করায় সুখোদিদি রান্না করে। খেয়ে একবাক্যে সব কজন বোর্ডার গলা খুলে সুখোদিদির রান্নার সুখ্যাতি করেছেতারপর আজ এই গোলমাল। বৃত্তান্ত যা শোনা গেল সুখোদিদি নাকি কাজ সেরে  ঐ পুঁটুলিটা  নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, ঠাকুর দেখে ফেলে জানতে চায় কী আছে ওতে? তাতে নাকি সুখোদিদি কোনই উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছিল, এতে ঠাকুরের সন্দেহ  যে নিশ্চয় মেসের কিছু জিনিষ সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সুখো এই কথায় জোরে জোরে মাথা নেড়ে আপত্তি করে, ঘোমটার মধ্যে থেকে বলে আমি চুর নই, এইডা আমারই। কই রাখুম, ক্যাডায় চুরি করবো, তাই সাথে লইয়া ঘুরতেসি। এইবার দুখীও যোগ দেয় ঠাকুরের সাথে, এ নির্ঘাৎ বাটিঘটি আছে ওতে, দুখী টান দিতে গেছিল শক্ত কিছু টের পেয়েছে। গোবিন্দবাবু গম্ভীর গলায় জিগ্যেস করেন কী আছে ওতে? উত্তর না পেয়ে আরো একটু কড়া হন, দিদি যদি নাই জানায় কী আছে, ম্যানেজারবাবু এলে তাহলে পুলিশকেই ডাকা হোক, আমহার্স্ট স্ট্রীট থানা তো কাছেই। দিদির মৃদু গলা শোনা যায় সরতা আছে, আফনাগো না। উপস্থিত অনেকেই একটু হকচকিয়ে যায়, বিমল বলে কী আছে? সুখো জোর দিয়ে বলে সরতা, গুয়া কাটার লাইগ্যা অসীমবাবু হেসে ওঠেন, কিছু বলতে যাবার আগেই পেছন থেকে শোনা যায়  সরতা মানে যাঁতি, সুপারি কাটার জইন্য প্রভাস কখন এসে একেবারে কলঘরে পা-হাত মুখ ভাল করে ধুয়ে উপরে যাবার আগে ভীড় দেখে দাঁড়িয়ে গেছে।  বাকীরাও হেসে ওঠে এবারে। দুখী আর  ঠাকুর কিন্তু এত সহজে ব্যাপারটা ছেড়ে দিতে রাজী নয়, বারেবারে বলে সুখোকে পান খেতে দেখে নি কেউ,  সুখোর নিজের জিনিষ হলে ও দেখাচ্ছে না কেন? অনেকেরই কথাটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়। ননী আর বিমল একসাথেই বলে দিদি পুঁটলিটা খুলে দেখিয়ে চলে যাক না, ওরা তো আর দিদির জিনিষ নিয়ে নিচ্ছে না রে বাপু!  সুখো ছাঁটে ভেজা বারান্দায়  থপাস করে বসে পড়ে। অতি ধীরে অতি যত্নে পুঁটলি খোলে --- বেরিয়ে আসে পিতলের ঝকঝকে  একটা যাঁতি আর তার পাশেই বেশ বড়সড় একটা চাবির গোছা। চাবিগুলিও ঝকঝকে, তেল মাখানো। কান্নামাখা গলায় বলে বাড়ি ছাড়নের আগে  নিজ হাতে সব কটি ট্রাঙ্কে তালা দিসি, সব ঘরটি বন্ধ কইর‍্যা তালা দিসি,  বাড়ির সদরে অ্যাত্ত বড় তালা লাগাইসি,   থাকুম না সুমায় চুর ডাকাইতে আইস্যা সব লইয়্যা না যায়। এইখানে বাবুগো বাসন মাজনের সুমায় তেঁতুল দিয়া মাইজ্যা নিসি আর এই অ্যাত্তটুকু সইরষার ত্যাল দিয়া চাবিগুলা ঘইস্যা নিসি। মাথার ঘোমটা এর মধ্যে খসে গেছে, চল্লিশ পাওয়ারের মলিন আলোতেও বেশ বোঝা যায় সুখোর চোখে কিন্তু একফোঁটাও জল নেই। সকলে একদম চুপ হয়ে যায়। আবার বৃষ্টি নেমেছে ঝিরঝির করে।  এক সব খোয়ানো প্রৌঢ়া তার পান খাওয়ার সঙ্গী যাঁতিটি আর এক দূরদেশে ফেলে আসা তার ঘরবসত সুরক্ষিত আছে, একদিন সে গিয়ে আবার খুলবে সব তালা,  এই ভরসায় চাবির গোছ যত্ন করে গুছিয়ে তুলে বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে অন্ধকার মীর্জাপুর স্ট্রীট ধরে চলে যায়।

কয়েকটি পরিভাষাঃ
মানু মানুষ
আউগাইন এগিয়ে যান
আইতাসি আসছি
থাহস থাকিস
ছ্যাপ থুতু
চুর চোর
সরতা যাঁতি
গুয়া সুপারি
সুমায় সময় 

No comments:

Post a Comment