প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব
স্থান – দমদম পশ্চিমবঙ্গ
কাল – ১৯৫০
সালের মে মাস
১
--
রমেশচন্দ্রের বাড়ী আজ কিছু সরগরম,
আগরতলা থেকে লোক এসেছে, খবর এনেছে ভাই যোগেশকে পরিবার নিয়ে নিরাপদে বর্ডার পেরোতে
দেখেছে সে। পরিবার বলতে স্ত্রী ও শিশুপুত্রটি, বাকী সব তো আগেই এসে গেছে, এবার
এরাও এসে গেলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। খবর পেয়েই রমেশ চুঁচুড়া থেকে যুঁইকে আনিয়ে
নিয়েছেন, সে বেচারী ছোটমাসির বাড়ীতেই আছে গত মাসখানেক, ওর দাদারা যাওয়া আসা করে,
খবরাখবর নেয়, কিন্তু সকলেই প্রচন্ড উদ্বেগে রয়েছে; কিশোরগঞ্জ থেকে প্রায় কোনও খবরই
পাওয়া যায় নি এতদিন। যোগেশের বড় তিন পুত্রও এসে যাবে ওরা এলেই, তারা সিটি কলেজের কাছেই এক মেসে থাকে, বেশী দূর নয়। রমেশচন্দ্র
দমদম জেলের ডাক্তার; সরকারী চাকরি তাঁর, বেতন ভাল, অন্য সুবিধেও আছে – গৃহকর্মে সাহায্যের জন্য
পেটভাতায় সেবক পেয়ে থাকেন, এছাড়াও জেলে উৎপাদিত বিভিন্ন জিনিষপত্রও পেয়ে থাকেন,
ফলে এক পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছল অবস্থা তাঁর। ইচ্ছা ছিল
পুত্রটিকেও ডাক্তারি পড়াবেন, কিন্তু অমরেশের সেদিকে মন নেই একেবারেই, বাণিজ্য নিয়ে
পড়ছে, এম কম শেষ হলে তার চার্টার্ড
অ্যাকাউন্ট্যান্সি পড়বার ইচ্ছা। কন্যা পারু, পারুলবালা ভারী শান্ত লক্ষ্মী মেয়ে,
কিন্ত্ পড়াশোনায় মাথা নেই একেবারেই। কোনওমতে দুইবারের চেষ্টায় ম্যট্রিক পাশ করে
প্রি-ইউ পড়ছে, ভাল পাত্র খুঁজছেন রমেশ, পেলেই বিয়ে দিয়ে দেবেন। যুঁইকে বড় স্নেহ
করেন রমেশ শুধু তার শান্ত স্বভাবের জন্যই নয়, বরং তার পড়াশোনায় মনোযোগ ও বিভিন্ন
বিষয়ে অদ্যাবধি প্রাপ্ত নম্বরের জন্যও
বটে। এজন্য তাঁর স্ত্রীর কিছু আক্ষেপ আছে যে নিজ পুত্রকন্যার তুলনায় যোগেশের
সন্তান, বিশেষতঃ কন্যাটির প্রতি তাঁর পক্ষপাত দৃশ্যমান। তিনি নির্বিকার, বাহ্যিক
দায়দায়িত্বে তিনি কোনও ফাঁকি দেন না, অন্যায় করেন না। যোগেশের পুত্রগুলিও পড়াশোনায়
অত্যন্ত ভাল। তৃতীয় পুত্রটি ম্যাট্রিকুলেশান পরীক্ষায় গোটা বাংলায় পঞ্চম হয়েছিল,
সে অবশ্য স্বাধীনতার বেশ কিছু বছর আগে। বড় ও মেজ পুত্রও প্রথম বিভাগেই পাশ করেছে।
এইবার যোগেশ এসে গেলে যুঁইকে আবার ক্লাস নাইনে ভর্তি করে দিতে হবে। তাঁর ইচ্ছে
যোগেশরা এই দমদম অঞ্চলেই থিতু হোক, ছেলেমেয়েগুলোকে ঘনঘন দেখতে পাবেন, যোগেশ একটু
রগচটা হলেও খুব বুদ্ধিমান, সাংসারিক সব বিষয়ে ওর সাথে পরামর্শ করতে পারলে খুশীই হবেন।
সবচেয়ে ছোট ভাই উমেশও কাছেই বারাকপুরে থাকে, পেশায় উকীল সে, কোর্টে প্র্যাকটিস
করে। তিনভাই কাছাকাছি থাকাই ভাল। তিনি সবচেয়ে বড়, মেজ মনীশ তো আর কলকাতা দেখল না
--- মনীশের কথা মনে পড়তেই চোখ ভারী হয়ে আসে, দীর্ঘশ্বাস পড়ে রমেশের --- কিন্তু না আজ আনন্দের
দিনে মনীশের কথা মনে আনবেন না তিনি। রমেশ উঠে যান ভেতর বাড়ীতে সব ব্যবস্থা দেখতে।
২
--
তিনতলার ঘরে মস্ত বড় পালঙ্কের এক
কোনায় বসে যুঁই আপনমনে সরু সরু দুটো কাঁটা আর খুব শক্ত আর সরু একলাছি সুতো দিয়ে
নক্সা বুনছিল; একে বলে কুরুশের কাজ, নতুন শিখেছে ও নমিতা, ছোটমাসীমার দেওরের মেয়ের কাছে, বেশ
দিব্বি ছোট ছোট কয়েকটা কাপডিশ বসাবার নকশাদার ঢাকনি বানিয়েও ফেলেছে। পুর্ববঙ্গে
থাকতে ওরা জানত শুধু উলবোনা, চটের আসন
বোনা আর টুকটাক রুমালে সুতো দিয়ে নকশা করা। ছোটমাসীমার নিজের চারটিই ছেলে কিন্তু
তাঁর দেওর ভাসুরদের বেশ ক’টি মেয়ে, সকলের সাথেই যুঁইয়ের বেশ ভাব হয়ে গেছে এই কয়দিনে।
মাঝে একবার খবর পেয়ে সাঁতরাগাছি থেকে সেজমাসীমা তাঁর বড়ছেলেকে নিয়ে এসে দেখে গেছেন
যুঁইকে। কিন্তু তাঁকে কেমন অচেনা লাগে ওর,
কিরকম অদ্ভুত ভাষায় কথা বলেন উনি। ছোটমাসীমাদের
ভাষাও যুঁইদের থেকে খানিকটা আলাদা, কিন্তু তাও অনেকটাই মিল আছে, কিন্তু সেজমাসীমার
ভাষা, উচ্চারণ সব কেমন আলাদা হয়ে গেছে। সেজমাসীমা আসবেন তাই দিদিমণিও এসেছিলেন খড়দা থেকে। দিদিমণি বলেন
‘তুই অ্যাক্করে এদেশী হইয়া
গেছস শেফালী, তর কথাবার্তা আর আমরার দ্যাশের নাই’ সেজমাসীমা
দিব্বি হেসে কেমন করে বলেন ‘যা বোলোচো মা। অ্যাগদম তোমার জামাইয়ের ভাষায় কতা কইচি।’ দিদিমণি আর কিছু বলেন না,
মুখ দেখে বোঝা যায় খুব একটা পছন্দ করেন
নি। দিদিমণি এসেছেন যুঁইয়ের আগেই, কিন্তু থাকার জায়গা এখনও তেমন স্থির কিছু
হয় নি। বড়মামা নীরেন জামশেদপুরে গিয়ে একটা কাজ যোগাড় করে নিয়েছে, মেজমামা বীরেনকেও
সেখানে নিয়ে গেছিল বড়মামা কিন্তু বীরেনের কাজ ওখানে হয় নি, এখনও বিএ পাশ দিতে অনেক
দেরী, সবে ম্যাট্রিক দিয়ে চলে এসেছে, এই অবস্থায় ওখানে কোন কাজ এখন খালি নেই।
বীরেন ওখান থেকে রাঁচি চলে গিয়ে কি একটা কারখানায় ট্রেনিঙ নিতে ঢুকে গেছে। দিদিমণি তাই দুই মেয়ে আর ছোটমামা নান্টুকে নিয়ে
ওঁর খুড়তুতো ভাই শৈলেশের কাছে খড়দায় উঠেছেন। শৈলেশরা সেই যবে যুদ্ধ লাগল তখন থেকেই
এপারে, ইছাপুরে বন্দুক বানানোর কারখানায় ঢুকে গেছে, এমনিতে ভালই আছে, তবে হুট বলতে
চারটে লোককে রাখা --- দিদিমণি বলছিলেন ছোটমাসীমাকে, নীরেনের কাজটা পাকা হলেই ওর
কাছে চলে যাবেন ওঁরা।
৩
--
ছোটমামা নান্টু যূঁইয়ের থেকে অনেকটাই ছোট। ও তখন সবে
পাঠশালা থেকে হাইস্কুলে গেছে, সেজদা তখনও কলকাতা যায় নি। সেবার কলকাতায় খুব গোলমাল শুরু হল, হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখে বড়দা আর মেজদা হোস্টেলে থেকে
কিশোরগঞ্জে চলে এসেছে। কলকাতায় সব স্কুল কলেজ বন্ধ, মহাত্মা
গান্ধী ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের ডাক
দিয়েছেন, ‘ইংরেজ ভারত ছাড়’ এই দাবী
তুলে শ’য়ে শ’য়ে ছেলেবুড়ো রাস্তায় নেমেছে। দাদারা
বাড়ীতে আসায় যুঁইয়ের মা ওদের ভাইবোনকে নিয়ে ক'দিনের জন্য মামাবাড়ী বেড়াতে
চলল৷ বাজিতপুর যেতে গেলে শেষ দু মাইল ওরা সাধারণত: হেঁটেই যায়, কিন্তু এবারে মা'য়ের
শরীর খারাপ, তাই মা'র জন্য বড়মামা গরুর গাড়ী নিয়ে
এসেছে৷ মা তিন দাদাকে নিয়ে গরুর গাড়ীতে চড়ে বসলেও যুঁই বায়না ধরে বড়মামার
সাথে সাইকেলে যাবে৷ দুয়েকবার আপত্তি করে মা'ও মেনে নেয়৷ আর যুঁইকে পায় কে!
সাইকেলের রডে বসে পটর পটর করে কথা বলতে বলতে চলে৷ কথায় কথায় জানতে পারে
সোনামাসিমা আর শেফালীমাসিমাও এখন এসেছে৷ দিদিমণিরও নাকি শরীর খারাপ৷ ছোটমাসীমা একা
পারবে না এদিকে দিদিমণির আঁতুড় তুলতে
আবার মায়েরও তো শরীর তেমন ভাল না, পেটে খুব ব্যাথা হয়, ডাক্তারবাবু বলেছেন সময়ত
খাওয়া আর যত্ন দরকার৷ ওদিকে সেজমাসিমার শ্বশুরবাড়ী সেই সাঁত্রাগাছি --- সে
অনেকদূর, কলকাতার কাছে৷ তাই সোনামাসিমাকে খবর দেওয়া হয়েছিল৷ সেজমাসিমা এমনি এমনিই
বেড়াতে চলে এসেছে৷ সেজমাসীমার ওখানকার লোকেদের মত করে কথা বড়মামা
নকল করে দেখায়, শুনে মেজদা আর সেজদা খুব হাসাহাসি করে৷ যুঁইরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে
সন্ধ্যে হয়ে গেল৷ বৈঠকখানায় হ্যাজাক নিয়ে দাদুমণি সরকারমশাইয়ের সাথে বসে হিসাব
দেখছেন৷বড়ঘরে একটা হ্যারিকেন নিয়ে মন্টুমামা পড়ছে৷ ছোটমাসীমা পড়তে আসবে রান্না
আরেকটু এগিয়ে দিয়ে৷ নাম ধরে মামা ডাক মা খুব অপছন্দ করে, কিন্তু
অনেক বকাবকি সত্ত্বেও প্রভাস, সুহাষ, ভানু আর যুঁইকে দিয়ে মেজমামা ডাকানো যায় নি৷মন্টু যুঁইয়ের
চেয়ে তিন বছরের ছোট| চারজনই ‘মন্টুমামা' বলেই ডাকে, বড়রা কেউ সামনে না থাকলে 'মন্টু'কিম্বা
ইস্কুলের নাম ‘বীরেন’ বলেও ডাকে৷
রাতে পুবের ঘরে শুতে গিয়ে যুঁই জানতে পারে ওরা এখন এখানেই
থেকে যাবে দিদিমণির আঁতুড় না ওঠা পর্যন্ত৷ কলকাতায় কলেজ খুলে গেছে জানতে পারলে
দাদা আর মেজদা এখান থেকেই সোজা কলকাতা চলে যাবে৷ একঢালা বিছানায় শুয়ে সোনামাসিমা, ওঁর দুই
মেয়ে দেবী, ছবি, শেফালীমাসিমা,
ছোটমাসিমা, বড়মামার মেয়ে রুমু, যুঁই সবাই মিলে গল্প করতে থাকে৷
পাশের ঘরে দাদারা সব,
মন্টুমামা, রতন,
ঘোঁতন এখনও হইহই করে ক্যারাম খেলছে৷ সলতে পড়ে যাওয়ায়
হ্যারিকেনটা একবার নিভু নিভু হয়ে গেছিল৷ সেই সুযোগে নাকি ভানু আর মন্টু কি একটা
চোট্টামি করেছে৷ তাই নিয়ে খুব চেঁচামেচি চলছে৷ এরই মধ্যে ছোটমাসীমা হঠাৎ বলে 'জানস
হেইবাড়ীর বুইড়্যা পিসি এক্কেরে ফাগল হইয়া গ্যাসে৷ গায়ে আর জামাকাপড় রাখতেই
চায় না৷অনঙ্গদাদু কি যে করবেন ভাইব্যা পাইতাসেন না'৷ সোনামাসিমা জিগ্যেস করেন 'ছুডুপিসি
কিতা করে?' ছোটমাসিমা বলেন'হ্যায় একরহমই আসে৷ আর খারাপ কিসু হয় নাই'৷ ঘরজুড়ে সবাই চুপ হয়ে
যায়৷মামাবাড়ীর পাশের বাড়ীটা অনঙ্গদাদুদের৷ অনঙ্গদাদুর দুই মেয়েই বালবিধবা৷
একজন নয় আর অন্যজন চোদ্দয় বিধবা হয়েছে৷ অনঙ্গদাদুর অসম্ভব নিয়মনিষ্ঠার জন্যই
কিনা কে জানে, গত তিন চার বছর ধরে দু জনেরই মাথায় অল্প স্বল্প গোলযোগ দেখা দিয়েছে৷ ওদের
ধানের গোলার সাথে লাগোয়া উঠোনটার পাশেইঅনঙ্গদাদুদের পশ্চিমের কোঠার পিছনদিকটা৷
ওখানেই দুই মেয়ে থাকে৷ ঐ উঠোনে যখন দাদুমণিদের মুনিষ, রাখাল, বাগালরা
খেতে বসে, তখন অনেকসময়ই দেখা যায় বুইড়্যা পিসি আর ছুডুপিসি জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছে৷
মুনিষদের জন্য মাছের কাঁসি আনলেই দুই পিসি খুব করুণভাবে এক টুকরো মাছ চাইতে থাকে৷
প্রথমবার দেখে যুঁই খুব অবাক হয়ে দিতে গিয়েছিল৷ বড়মামাদের রাখাল কালীচরণ দেখতে
পেয়ে হাঁইমাই করে চেঁচিয়ে ওঠে --'করেন কি দিদিঠাকরাইন, আপনার
মায়ে জানতে পারলে মাইর্যা ফালাইব'৷ যুঁই ভয় পেয়ে থেমে যায়৷ পরে
মা জানতে পেরে ওকে বলেছিল 'বিধবা মাগীরে মাছ দিতে গেসলা, অতখানি বড় হইছ, তোমার হুঁশ পব কিসু নাই? হ্যারা
তো ফাগল, তুমি জাইন্যা বুইঝ্যা দিলে পাপ তো তুমার হইব৷' মাঝে মাঝে বুইড়্যা পিসি বেশ ষড়যন্ত্র করার ভঙ্গীতে ফিসফিস করে বলতেন 'বাবায়
নাই এইহানো, একটা কাতল মাছের পেটি দে না রে আমারে৷ কাউরে কইতাম না'৷ কত মাছ ওরা ফেলাছড়া করে খায়, আর একটা
টুকরোর জন্য 'হেইবাড়ী'র পিসিদের আকুলিবিকুলির কথা মনে হলেই যুঁইয়ের কিরম কান্না কান্না পায়, আর একটু
ভয় ভয়ও করে৷ ভয় কেন করে সেটা ঠিক বোঝে না, কিন্তু যুঁই দেখেছে ওর কিরকম একটা
অদ্ভুত ভয় করতে থাকে৷ ঘরে 'ভগবানের মাইর' জাতীয় দু একটা কথার পর সবাই
আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে৷ বাইরে খিড়কির পুকুরের ধার থেকে ঝিঁঝির ডাক ভেসে আসে৷
দূরে কটা শেয়াল ডেকে উঠল একসাথে৷ যুঁইয়ের দুচোখ ছাপিয়ে হু হু করে কান্না আসে, আর
--- আর সেই অজানা ভয়টাও তীব্র হয়, প্রচন্ড
ভয় আর কান্নার বেগ চাপা দিতে বালিশটা নিয়ে মাথা চাপা দেয় যুঁই৷
পরের পূর্নিমার আগেই অনঙ্গদাদু পশ্চিমের কোঠার সাথে একটা
হাগনকুঠি আর একটা চানের জায়গা বানিয়ে উঁচু পাঁচিল দিয়ে সবটা ঘিরে দিলেন৷
পাঁচিলের গায়ে একটা দরজা মূল বাড়ীতে যাওয়া আসার জন্য৷ তাতে সারাদিন তালা দেওয়া
থাকে৷ পশ্চিমের কোঠার জানলাগুলোর অর্ধেক ইঁট গেঁথে বন্ধ করে দিলেন৷ শুধু ওপরের
দিকে একটা করে ফালিমত খোলা রইল৷ তাই দিয়ে
বুইড়্যাপিসির নাকের ডগা অবধি আর ছুডুপিসির
চোখ পর্যন্ত দেখা যায়৷
৪
--
পারুর ধাক্কায় চমকে ওঠে যুঁই, পারু
কখন এসেছে, ওকে ডেকেছে কিছুই খেয়াল করে নি। হাত থেকে কুরুশকাঁটা নামিয়ে রেখেই
বুঝতে পারে ওর দুই চোখ, গাল্ ভেজা। তাড়াতাড়ি মাথা নামিয়ে আঁচল দিয়ে ভাল করে মুখ
মুছতে যায় – কিন্তু পারু ওকে জড়িয়ে ধরতেই আরো খানিকটা চোখের জল আলগা
হয়ে গাল গলা ভিজিয়ে নামে, পারু বলে নীচে চল
দাদাদের খাওয়া হইয়্যা গ্যাসে এইবার আমরা খাইয়া লই, কাকারা এইবেলা আর আইত
না। যুঁই হতাশা গোপন করতে পারে না ‘আইত না? খবর আইসে?’ পারু বলে নাহ খবর আর ক্যাডায় আনব? হেই
ব্যাডায় তো কই গ্যাসেগা কেডা জানে? আইলে অতক্ষণ আইয়া যাইত। ল ল চল খাইয়া লইয়া বসবি
চল। দ্যাখসে যহন আইবোনে, আইজ কাইল আইয়া
যাইবো আর ভাবিস না।
জ্যাঠামশাইয়ের বৈঠকখানার মস্ত
ঘড়িতে রাত বারোটা বাজল, তিনতলার ঘরে
পালঙ্কে পারু যূঁই ও ছোট দেওরের মেয়ে বাসু, বাসন্তীকে নিয়ে জ্যেঠিমা শুয়েছেন।
সারাদিনের খাটাখাটনির পর শোয়ার সাথেসাথেই ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। পারু আর বাসু কিছুক্ষণ
যূঁইয়ের সাথে গল্প করার চেষ্টা করেছিল শেষে তারাও ঘুমিয়ে পড়েছে। বিকেল থেকেই যূঁই
প্রায় কারোর সাথেই আর কথা বলে নি, সেজদা মেজদার সাথেও না। সকলেই কিছু চিন্তিত, চুপচাপ। এতদিন ছিল প্রতীক্ষা, উঠকণ্ঠা
আদৌ সীমান্ত পেরোতে পারবে কিনা আর এখন যে খবরটা এসেছে সেটা আদৌ সত্যি? তাহলে কবে আসবে ওরা? যে খবর দিয়ে গেল সেই
বা কে? পরশুদিন যদি বাবা মা বাচ্চুকে আগরতলা দেখা গিয়ে থাকে তাহলে হিসেবমত আজ তো
অবশ্যই পৌঁছে যাওয়া উচিৎ ছিল। তবে কি নতুন কোন বিপদ ---
No comments:
Post a Comment