প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব
নবম পর্ব
সিজন-১ (কন্টিন্যুড)
স্থান – কলকাতা শহর কাল – ১৯৪৯ সাল মে মাস
১
-
ঝুনুর বিয়ে পাকা হয়েছে শ্রাবণ
মাসে। প্রমদাকান্ত যতটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন ঠিক ততটাই বা একটু বেশীই চিন্তিতও হয়েছেন। ছেলে রেলে চাকরি করে, বাড়ি
চম্পাহাটির দিকে। পরিবারটি ভাল, ছেলের
বাবা অত্যন্ত দূরদর্শী; ৪৫ সনেই বিক্রমপুরের জায়গা জমি কিছু কিছু বিক্রি করে
চম্পাহাটির দিকে জমি কিনে বসতভিটে করে রেখেছেন, এখনও বিক্রমপুরের পাট পুরোপুরি
চুকিয়ে দেন নি, তিনমাস ছয়মাসে এদিকে এসে দেখাশোনা করে যান। তবে বাড়ির মহিলা আর
বাচ্চারা এপারেই থিতু। ছেলের বাবা, দুই জ্যাঠা আর এক কাকা ওপারে থেকে যতটা সম্ভব
বিলিবন্দোবস্তের চেষ্টা করছেন। তবে দিনকাল বড় খারাপ, কোনদিন যে কি হয়ে যায়! ছেলে
উপেন আর তার ভাই গোপেন কালীঘাটে একটা ছোট মেসে থাকে। উপেনের অফিস কয়লাঘাট স্ট্রীটে, গোপেন কলেজে পড়ে। ছেলেদুটি বড় শান্ত,
লাজুক, এত কাছে মেস হওয়া সত্ত্বেও কোনদিন
একবারও এদিকে আসে নি, কোনও ছলে ঝুনুকে দেখার চেষ্টা করে নি। যা সব শোনেন আজকাল অফিসে! ছেলেছোকরারা এখন আর বড়দের মোটেই মানতে চায় না,
বড়রা কথা বলেছেন কি না বলেছেন নিজেরাই দেখা সাক্ষাৎ, সিনেমা যাওয়া, লজ্জাশরমের বালাইটুকুও নেই। মেয়ে তাঁর বাড়িতেই
থাকে, অত্যন্ত বাধ্যও, মায়ের নজরও আছে,
তবু ছেলের দিক থেকে দেখা করার আগ্রহ
না দেখা যাওয়ায় তিনি স্বস্তি বোধ করেন। দাবীদাওয়াও এঁদের তেমন কিছুই নেই।
অন্তত নগদ টাকা, সোনা, সাইকেল, ঘড়ি কিছুই চান নি। কিন্তু সামাজিকতা বলেও তো একটা ব্যপার আছে, বাড়ির
সবকটি আত্মীয় পরিজনকে মোটামুটি মানের প্রণামী, নমস্কারি দিতে গেলেও অন্তত হাজারের কাছাকাছি
পড়বে। এছাড়া নিমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন, খাওয়া দাওয়া সেসবও আছে। জামাই আর ঝুনুকেও
একেবারে কিছুই না দিলে তো চলে না। তত্ত্বের বাসনপত্র, খাটবিছানা এসবও আছে। বেশ
কয়েক হাজারের কমে তো হবে না। তাঁর নিজের সঞ্চয় বলতে আর খুব কিছু নেই। সরলাবালার
গয়না এই দুই মেয়ের বিয়েতেই যাবে, পালিশ টালিশ করিয়ে দেবেন আর কি। তারও কিছু খরচ
আছেই। সে গয়নাও এত উদ্বৃত্ত নয় যে তার কিছু অংশ বিক্রির কথা ভাববেন, তাহলে রইল
বাকী ধার নেওয়া। ধারের কথা মনে হতেই আবার কৃষ্ণকান্তের স্মৃতি ফিরে আসতে চায়। জোর
করে মন অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন প্রমদাকান্ত। হঠাৎই হাতে হ্যাঁচকা টান লাগে, কেউ তাঁকে শক্ত
হাতে এক ঝটকায় টেনে নেয় যেন আর প্রায় তাঁর গায়ের উপর দিয়েই হুউশ করে বেরিয়ে যায়
একটা ট্যাক্সী, তার পাশে পাশেই তীব্রবেগে একটি
দোতলা বাস।
অবাক হয়ে
তাকিয়ে প্রমদাকান্ত দেখেন তাঁকে দুহাতে শক্ত করে ধরে অমরিন্দর সিং ফুটপাথে উঠে আসছেন। কি আশ্চর্য্য! তিনি তো ফুটপাথ
বরাবরই হাঁটছিলেন, রাস্তায় নামলেন কখন? অমরিন্দর খুব চিন্তিত মুখে হিন্দি বাঙলা
মিশিয়ে তাঁকে জিগ্যেস করেন তাঁর কী হয়েছে? তিনি রাস্তায় নেমে সোজা গাড়ি চলার পথ
ধরে চলেছেন, অমরিন্দরের জোরালো সাবধানবাণী, তীক্ষ্ণ চীৎকার কিছুতেই কান করেন নি,
তিনি কি আত্মহত্যা করতে চলেছিলেন? কী
উত্তর দেবেন ভেবে পান না প্রমদা, সত্যিই
তো তিনি তো কিছুই শোনেন নি। কী হয়েছিল
তাঁর? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, একটু চা পেলে হত, এদিক ওদিক তাকান চায়ের দোকানের
খোঁজে। অমরিন্দর কিন্তু থামেন নি, বুঝিয়ে চলেছেন আত্মহত্যা করা কত খারাপ, কিরকম পাপ, তাঁর দায়িত্বগুলির কথা কতখানি
চিন্তা করা উচিৎ --- এবার প্রমদার একটু
একটু রাগ হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার হাত
থেকে রেহাই পেয়ে এক্ষুণি রাগ দেখানো চলে না, তাই শুধু বলেন সেসব কিছু নয় স্বয়ং
যমরাজ তাঁকে নিতে এলেও এই মুহূর্তে তাঁর যাওয়ার সময় নেই, আসলে নানারকম চিন্তায়
একটু বেখেয়ালী হয়ে পড়েছিলেন। অমরিন্দর সাদা ভুরু অল্প কুঁচকে তাকান, আরো একটু
গম্ভীর হয়ে বলেন প্রমদার খুব বেশী তাড়া না থাকলে তাঁরা গিয়ে রমেশ মিত্র রোডের ধারে
ওই চায়ের দোকানে খানিক্ষণ বসে আলাপ করতে পারেন। এইবার ফুটপাথের ধার ঘেঁষা চায়ের
দোকানটা নজরে আসে প্রমদারও, বিনা বাক্যব্যয়ে পা বাড়ান। চা আর লেড়ো বিস্কুট খেয়ে
কিছুটা ধাতস্থ বোধ করে খেয়াল করেন অমরিন্দর তাঁর দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছেন, একটু
অস্বস্তি বোধ করে তাড়াতাড়ি সহজ হওয়ার চেষ্টায় করণ, ধরমের কুশল জিগ্যেস করেন।
অমরিন্দর সামান্য ঘাড় হেলিয়ে সবাই ভাল আছে জানিয়ে চায়ের খালি ভাঁড় একটিপে দূরের
ঝুড়িতে ফেলে সোজা হয়ে বসেন, গলা নামিয়ে চাপা দৃঢ় কন্ঠে বলে চলেন হেড অব দি ফ্যামিলির দায় দায়িত্ব যে
কতখানি আর কখনও কখনও সে দায়িত্ব যে কি পরিমাণ ভারী হয়ে দাঁড়ায়, এ তাঁর চেয়ে বেশী
কেউ জানে না, কাজেই তিনি জানেন, বোঝেন
প্রমদাকান্তও সেই দায়িত্ব বয়ে নিয়ে
ঘুরছেন, তবে এখন কি কোনও কারণে দায়িত্বের বোঝা খুবই ভারী হয়ে উঠেছে? সেক্ষেত্রে
তিনি নিঃসঙ্কোচে তা অমরিন্দরের সাথে আলোচনা করতে পারেন। পাড়া প্রতিবেশীরা কেউ সেকথা ঘুণাক্ষরেও জানবে না, কৃপাণে হাত ছুঁইয়ে প্রতিজ্ঞার ভঙ্গীতে প্রমদাকে
আশ্বস্ত করতে চান বৃদ্ধ শিখ। স্বভাবচাপা প্রমদা এই অনাত্মীয়, স্বল্পপরিচিত বৃদ্ধের
কথায়, মুখের ভাবে এমন একটা আশ্বাস লক্ষ করেন যে আর দ্বিধা না করে ঝুনুর বিবাহ স্থির হওয়া ও তৎপরবর্তী খরচ খরচাজনিত
দুশ্চিন্তার কথা সব খুলে বলেন --- ইতিমধ্যেই বহু ধার হয়ে যাওয়াতে আবার নতুন করে
ধার পাওয়ার সমস্যার কথাও বলে ফেলেন। যদিও সেগুলি অধিকাংশই শোধ হয়ে আর অল্পই বাকী,
তবু লজ্জায় সঙ্কোচে কথা আর শেষ করে উঠতে
পারেন না। অমরিন্দর চুপ করে পুরোটা
শোনেন, একবারও জিগ্যেস করেন না তাঁর কোন আত্মীয়স্বজন আছে কিনা --- বা কোন আত্মীয়র
পক্ষে এগিয়ে আসা সম্ভব কিনা --- অথচ অফিসে দত্তবাবুকে দুশ্চিন্তার সামান্য
আভাসমাত্র দিতেই এটাই তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল। সমস্ত শুনে সিংজি শুধু বলেন ফিকর মৎ
কিজিয়ে, হয়ে যাবে সব ব্যবস্থা। প্রমদার মুখ দেখে বোধহয় বোঝেন যে তিনি ঠিক
নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না, তখন ভেঙে বলেন
পৈত্রিক সম্পত্তির বেশ কিছু সঞ্চয় তাঁরা প্রত্যেকে চুলের মধ্যে, পোষাকের
মধ্যে লুকিয়ে পাথেয় হিসেবে সঙ্গে এনেছিলেন, তার কিছু অংশ সীমান্তের আগে উৎকোচ দিয়েছেন , কিছু খরচ হয়েছে নিরাপদে এতটা
পথ পাড়ি দিয়ে আসতে, কিছু এখানে এসে
টায়ারের দোকান দিতে ব্যয় করেছেন বটে কিন্তু তাও কিছু রয়ে গেছে। আর তাছাড়া দোকানও
তাঁদের মোটামুটি চলে, এই তো কটি প্রাণী, বাড়িতে না আছে আওরাত, না বালবাচ্চা, খরচই
বা কী!
২
-
সপ্তাহে
দুই তিনদিন অনিলাবালা এখন দুপুর গড়ালে মেয়ের বাড়ি আসেন, কোনওদিন বৌয়েরা বা ছেলেরা
কেউ সঙ্গে আসে, কোনওদিন একলাই চলে আসেন। মেজ নাতনিটার বিয়ে ঠিক হয়েছে, পাকা কথাও একরকম হয়েই গেছে, পাটিপত্তর
হওয়াটাই যা বাকী। এ সময়টায় কত যে
খুঁটিনাটি কাজ থাকে; আর সরলা তাঁর ভারী চাপা মেয়ে, মুখফুটে কক্ষণো কারো কাছে একচুল
সাহায্য সে চাইবে না, জানেন তিনি সেকথা।
জামাইও তাঁর ভারী মানী, সেও পছন্দ করে না সরলা বা ছেলেমেয়েরা কারো
কাছে কোনও ব্যপারে কিছু সাহায্য নিক। অনিলা তাই নিজেই চলে আসেন,
কথাবার্তা বলেন, এটা সেটা গুছানো, সেলাই
ফোঁড়াই, কখানা গায়ে দেবার চাদর উত্তরীয় কিনে এনেছে জামাই, তত্ত্বে যাবে --- সেগুলোর উপরে একটু করে নকশা
করে দেবেন বলে নিয়ে বসেছেন। কোণা দিয়ে
একটা লতানে ডাল আর ফুল আঁকা হলেই দাম একেবারে আকাশছোঁয়া হয়ে যায়, অথচ নাতনিদুটোকে নিয়ে কজনে মিলে হাত চালিয়ে ওইটুকু কাজ অনিলা এ
মাসের মধ্যেই তুলে দেবেন, হয়েও গেছে কখানা এর মধ্যেই। অল্প একটু সুতোর কাজেই কি সুন্দর লাগছে চাদরগুলো, একেবারে ঝলমলিয়ে উঠেছে। কম খরচে
তত্ত্বের যোগাড় এভাবেই করতে হবে, যাতে
শ্বশুরবাড়িতে ঝুনুর নিন্দে না হয়। টুনুর
আবার সেলাইয়ের হাতটা বড় ভাল, একদম পরিস্কার ফোঁড়গুলো তোলে; না কোনও
অ্যাঁকাব্যাঁকা, না একটু অসমান, সবকটা
ফোঁড় যেন গজফিতে দিয়ে মেপে বসানো একটু এদিক ওদিক নেই। মেয়েটা মন দিলে কত কাজই না করে ফ্যালে ওই হাত নিয়েও। একটা শ্বাস পড়ে অনিলার, বড় অস্থিরমতি মেয়ে ওই টুনু।
ইস্কুলে যায় বটে কিন্তু পড়া তেমন পারেও না, ভালওবাসে না। মাঝে মাঝেই ফেল হয়ে যায়, সরলা দু’ঘা দেন পিঠে,
কিন্তু ওই যে কে সেই। অথচ ওর সেলাই ফোঁড়াই, হাতের কাজে ইস্কুলেও সুনাম
আছে, সেলাই দিদি ওকে ভালওবাসেন
সেজন্য। অনিলা ভাবেন আহা ঝুনুর পরেই যদি টুনুটারও বিয়ের
ব্যবস্থাটা করে ফেলা যেত তাহলে আর
মেয়েটাকে ইস্কুলে পাঠাতেও হত না আর এই ফেলটেলের ঝকমারিও থাকত না। এই যে সরলা কোনোদিন ইস্কুলের ধারেকাছেও যায় নি,
তাতে কিইবা এমন ক্ষতি হয়েছে? বাড়িতে অক্ষর পরিচয় হয়েছিল, তারপর ওই বর্ণপরিচয়, শুভঙ্করীর আর্য্যা এইসব করতেই করতেই
দিব্বি পাঁচালিটা পড়া, হিসেবটা রাখা এইসব শিখে গেছে মেয়ে। আর বিয়ের পর জামাইয়ের
উৎসাহে বাড়িতেই আরো কিছু পড়াশুনো করে এখন তো দিব্বি নভেল পড়ে সরলা, চিঠিফিঠিও
লিখতে পড়তে পারে। আর কী চাই মেয়েমানুষের! অনিলা নিজে তো খুব কষ্ট করে চিঠি পড়তে
পারেন, তাও এত বেশী সময় লাগে যে তার চেয়ে
কাউকে দিয়ে পড়িয়ে নেওয়া সহজ। ঝুনুটার পড়ায়
মন ছিল বেশ, দিব্বি পাশ করে যেত, উঠেওছিল ক্লাস নাইন অবধি, আগের বিয়েটা ঠিক পাকা
কথা হবার আগদিয়ে ভেঙে দেবার পর প্রমদা আর ঝুনুকে ইস্কুলে পাঠায় নি পাঠালে এদ্দিনে
ম্যাট্রিক দেবার মত তৈরী হয়ত হয়েই যেত। তাঁর দুই ছেলে বাড়িতে গজগজ করেছিল, ছোটছেলে
তো প্রমদার সাথে কথা বলারও চেষ্টা করেছিল, যদ্দিন না বিয়ে পাকা হয় ঝুনু পড়ুক না
ইস্কুলে। প্রমদা কান দেন নি, সংক্ষেপে বলেছিলেন দিনকাল ভাল না, এত বড় মেয়েকে রোজ বাইরে পাঠানো তিনি নিরাপদ মনে
করেন না। অনিলা কিন্তু এতে জামাইয়ের কোন
দোষ দেখেন নি, ন্যায্য কথাই বলেছে সে। কলকাতা শহরটাকে আজকাল আর চিনতেই পারেন না অনিলা, কত যে লোক বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে
বেড়েছে নোংরা আর বেড়েছে দোকানপাট। কালিঘাট কাটরার ভেতরে আর একচিলতে ফাঁকা জায়গা
নেই। সবগুলো ফাঁকফোকরে কিছু না কিছুর দোকান গজিয়ে গেছে। রাজাকাটরারও শুনেছেন একই অবস্থা, তবে সেখানে
অনেককাল যাওয়া হয় নি।
সরলাদের
বাড়ির দরজায় এসে কড়াটা নাড়তে যাবেন, দরজা অমনি ভেতর থেকে খুলে গেল। একটু চমকে
রাস্তায় নেমে দাঁড়ান অনিলা। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা রোগা কালো ছেলে, পেছনে ঝুনু এসেছিল দরজা বন্ধ
করতে, তাঁকে দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে ডাক দেয়। অনিলা তখন ভারী অবাক হয়ে দেখছিলেন্ ছেলেটার কেমন যেন হাবভাব ---
বেরিয়েই রাস্তায় না নেমে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গলাটা একটু বাড়িয়ে প্রথমে রাস্তার এদিক
ওদিক দেখে নিয়ে সুড়ুৎ করে নেমেই একদৌড়ে ইন্দ্র রায় রোড দিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। ভেতরে
ঢুকতে ঢুকতে অবাক হয়ে জিগ্যেস করেন ‘এ
কে রে?’
ঝুনু হেসে ফেলেই আবার গম্ভীর হয়ে বলে ‘ওই তো জামুন, জামু বলে ডাকে সবাই।’ ও আচ্ছা এই
তবে সেই জামু। শুনেছেন ওর কথা, অমরিন্দরের তেড়ে আসা, সবই।
বাড়ি ফিরে সেইদিনের কথা সব শুনে প্রমদাকান্ত নাকি খুব গম্ভীর হয়ে গেছিলেন, একটুক্ষণ চুপ করে থেকে পরে বলেছিলেন ছেলেটি এলেও
ওকে দিয়ে শুধু বাইরের কাজই যেন করানো হয়, ঘরে ঢোকা বা বাসনপত্রে হাত দেবার কোন
সুযোগ যেন না পায় ওই ছেলে। তা সেকথা সরলা
অক্ষরে অক্ষরেই মেনে চলেন। জামু প্রায়ই আসে,
এলে ওই দোতলায় ওঠার সিঁড়ির নীচটায় বসে কয়লা ভেঙে দিয়ে যায়, কখনো ছাতে গিয়ে কাঠকয়লার
গুঁড়ো, ঘুঁটের গুঁড়ো মিশিয়ে জল দিয়ে মেখে টিনের
পাতে গুল দিয়ে যায়। সব হলে জায়গাটা ভাল করে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে
দেয়। ওর ব্যবহারের জন্য একটা ছোট বালতি আর
মগ কয়লাগাদার পাশে আলাদা করে রেখে দিয়েছেন সরলা,
ওইটে নিয়েই কাজ সারে। তারপর ভাল
করে হাত পা মুখ মাথা ধুয়ে খেতে বসে।
প্রমদার পরামর্শমত ওকে মাঝেমধ্যে দু চার আনা মজুরি দিতে চেয়েছেন সরলা,
কিন্তু জামু নেয় নি সেসব। অ্যাত্তবড় করে জিভ কেটে কানে হাত ছুঁইয়ে হিন্দি বাংলা
মিশিয়ে বলেছে পয়সা নিয়ে ও কী করবে? পয়সা তো লাগে খাবার খেতে, সেই খাবারই যখন মাঈজি
ওকে দিয়ে দিচ্ছেন তখন ও পয়সা নিয়ে খামোখা চোর ডাকাতকে ডেকে আনবে কেন? রোজ রোজ একেবারে বিনাপয়সায় কাজ করাতে একটু
অস্বস্তি হলেও মোটের ওপর খুশীই হয়েছেন সরলা, এখন একটা পয়সা বাঁচলেও উপকার হয়। এই ঝুনুর বিয়ের পরেও টুনুর বিয়ে, খোকনের পৈতে
সবই তো দিতে হবে ---খোকনের পড়াশোনাও আছে, এখনও খরচ তেমন নেই, কিন্তু ম্যাট্রিক পাশ
দিলে তারপর কী লাগে না লাগে! আর দিনকাল
ক্রমশই খারাপ হচ্ছে।
স্তব্ধ হয়ে গেলাম শেষটায় এসে
ReplyDelete