খোঁজাখুঁজি

Sunday, October 20, 2013

মাসকাবারি বইপত্তর - ৮ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর'২০১৩)

মাসকাবারি বইপত্তরের হিসেব পত্তর বছরখানেক  কি দুয়েক আগে বেশ নিয়মিতই রাখতাম আর লোকজনকে ডেকে হেঁকে সদ্য পড়া বই নিয়ে বকরবকর করবার কলেজীয় অভ্যাসে ফেসবুকেও লিখে রাখার  বদভ্যেস ছিল, যদি কেউ দুই চারক্থা বলে এই আশায়| তারপর কালের নিয়মে চোখ আর হাত পাল্লা দিয়ে দুর্বল হতে লাগল, সাথে কমতে লাগল সময়, মনঃসংযোগ| তা 'বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ' রচনায় চিরকালই যে 'আশীর্বাদ' এর পক্ষে কলম চালিয়ে এসেছি সেই কৃতজ্ঞতায়ই বোধহয় বিজ্ঞান হাতে তুলে দিল হাত বা চোখের উপর বেশী অত্যাচার না করে সহজে পুষ্টিকর উপায়ে বই পড়ার সুযোগ, ই-বুক| আহ্লাদে আটখানা হয়ে বিজ্ঞানের জয়ধ্বনি দিয়ে আমিও আবার ফিরিয়ে আনলাম বকবকানির সিরিজখানা| :-) 



১) নিউ মার্কেট টেলস - জয়ন্ত কৃপালনি
ফ্র্যান্সিস - যার হওয়ার কথা ছিল বিখ্যাত বেকারি'র মালিক, পারিবারিক কেক, বিস্কুট, বানরুটি বানানোর ব্যবসা ছেড়ে সে হতে চেয়ে ছিল ইমিটেশান জ্যুয়েলারির ডিজাইনার কাম মেকার|
'অতিক্লান্ত' রথীকান্ত -- যে স্রেফ আরাম করে ঘুমোতে চেয়ে হয়ে গেছিল প্রথম গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের আইকন|
গোপা, গাঙ্গুলি গেঞ্জিওয়ালা (যাকে রাগ হলে লোকে বিনোদ ব্রাওয়ালা বলেও ডাকত)'র মেয়ে - যে নিউ মার্কেটে তার বাবার দোকানে ব্রেসিয়ার বিক্রীর জন্য মহিলা কর্মচারী রাখার দাবীতে নিউ মার্কেটে মিছিল করে, শেষে নিজেই কর্মচারী হিসেবে যোগ দেয় এবং দ্যাখে পুরুষ/মহিলা নয় দোকানদারীর মূলমন্ত্র অন্য কিছু|
হরিশ - যে টলিক্লাবে নিয়মিত গলফ খেলতে খেলতে হঠাৎই এক রবিবার সব ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ও পাঁচ বছর পরে যাকে লেখক আবিস্কার করেন ওয়েলেসলি স্ট্রীটের এক ১১ - ১১ খোলা বারের মালিক হিসেবে, সেই বারে ৪ অক্ষর ব্যবহার মানা, কেউ  রেগেমেগে ব্যবহার করলে হরিশ প্রথমে ওয়ানিzর্ন ও পরে কুবাক্য ব্যবহারকারীকারিনীকে বারের বাইরে নিক্ষেপ করে|

এমনই আরো অনেকগুলো ইন্টারেস্টিং চরিত্র পরপর সাজিয়ে জয়ন্ত কৃপালনি নিউ মার্কেটের গপ্পো বলেছেন| ঠিক নিউ মার্কেট নয়, তার কিছু অজানা চরিত্রের টুকটাক গল্প| চমৎকার লাগে পড়তে, মুচমুচে পকোড়ার মত|

তবে এ বইয়ের ই-বুক নেই, পড়তে চাইলে কাগজেপত্রেই পড়তে হবে|

২) কবির বৌঠান - মল্লিকা সেনগুপ্ত
রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক তো অতি চর্চিত বিষয়, কিন্তু মল্লিকা শুধুই কাদম্বরীর সাথে সম্পকের্ই সীমাবদ্ধ রাখেন নি| বরং জ্ঞানদানন্দিনী, সৌদামিনী, স্বর্ণকুমারী দেবী; এঁদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন, অন্দরমহলের চোরা রাজনীতি, গিরিশ ঘোষ প্রমুখ বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বদের দ্বারা বিনোদিনী দাসীর  প্রতারিত হওয়া, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অপরাধবোধ্ এ সবই এসেছে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে কাহিনীর স্বতঃস্ফুর্ত গতিকে একটুও ব্যহত না করে, তুলে ধরেছে ঐ সময়টার, ঐ দ্রুত পরিবর্তনশীল, স্পন্দনশীল সময়টার এক চিত্রকল্প| বই-মালিনীর চরিত্রটি বেশ চমকপ্রদ| সেই সময় মেয়েদের কাছে বই বিক্রী আসত মহিলা ফেরিওয়ালা এ কথা কোথাও একটা পড়েছিলাম, খুব বেশী মাথা ঘামাই নি তখন| কিন্তু এই বইয়ে বই মালিনীর কথা পড়ে চমক লাগল, সত্যিই তো যাঁরা  বাড়ী বাড়ী ঘুরে অন্দরে অন্দরে বই বিক্রী করতেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তো নিশ্চয় অনেক বই পড়তেন, নিশ্চয় ভাবতেনও নিজেদের মত করে| প্রতিটি চরিত্রের দোষগুণ প্রায় সমানভাবে দেখিয়েছেন মল্লিকা, জ্ঞানদানন্দিনীর সাহ্স, বিদ্যোৎসাহ, পরিশীলিত সংস্কৃতিচেতনা এসবের পাশে পাশেই তাঁর ঈর্ষাটুকুও দেখা গেছে| চরিত্রগুলো জীবন্ত, আড়ষ্ট নয়, যেজন্য পড়তে ভাল লাগে|

সবচেয়ে ভাল লেগেছে যেটা সেটা হল, বেশ খেটেখুটে লেখা বই|

৩) হ্যারী প্টার অ্যান্ড ডেথলি হ্যালোজ
হ্যারী পটার সিরিজের শেষ বই| জুলাইয়ের মাঝামাঝি সিরিজ শুরু করে, অগাস্টের মাঝামাঝিই শেষ হওয়া উচিৎ ছিল| তবে মাঝে বড্ড একঘেয়ে লাগায় প্রায় আড়াই সপ্তাহ  হ্যারী পটার ছুঁয়েও দেখি নি| শেষমেষ 'নাঃ শুরু যখন করেছি শেষ করেই রাখি' ভেবে এটা পড়া| এ বই তো আর কাউকে পরিচয় করানোর দরকার নেই| যাঁরা পড়েছেন তাঁরা বারেবারে পড়েছেন, যাঁরা পড়েন নি, একবারও পড়েনি নি|
তবু গোটা সিরিজ নিয়ে দু চারকথা বলাই যেত, হয়ত বলা উচিৎও, তবে সে প্রায় পুরো একটা আস্ত পর্ব লাগবে, তাই এখন থাক| ;-)

৪) পাঁচফোড়ন - ইন্দ্রনীল সান্যাল (শারদীয় সানন্দা)
আজকাল আর আনন্দ পাবলিশার্সের পুজাবার্ষিকী কেনাও হয় না, পড়ার তো প্রশ্নই নেই| নিতান্তই ই-বুক পাওয়া যাচ্ছে দেখে শারদীয় সানন্দার পাতা উল্টোচ্ছিলাম নতুন ডিজাইনের শাড়ী কিম্বা নতুন অপিচ সহজ কোনও রেসিপীর খোঁজে| এই উপন্যাসের ভূমিকা অংশটুকু মনোযোগ টানল| আবাপ'র থিম প্লট সম্পর্কের জটিলতা ও ত্রিকোণ, চতুষ্কোণ সম্পর্ক নিয়ে গ্যাজরগ্যাজর কিম্বা রাজনীতির প্লটে টিপিক্যাল 'পার্টি'র অবক্ষয় ও রাজনীতি করা সকল দলই আসলে হরেদরে পাঁর ক্রিমিনালের আড্ডাখানা জাতীয় বস্তাপচা গপ্পো নয়| সেক্টর ফাইভের এক বিখ্যাত আইটি কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া এক রুকি স্বপ্ন দেখে রান্নার রিয়ালিটি শোয়ে ফার্স্ট হওয়ার, বই পড়া কিম্বা গান শোনায় অনাগ্রহী মেয়েটি অনবরত স্বপ্ন দেখে রান্না করার, চলতে ফিরতে গন্ধ পায় মশলাপাতির| বেশ অন্যরকম প্লট, ফলে আগ্রহী হয়ে পড়তে বসলাম| লেখাটি খুব যে দারুণ কিছু তা ন অয়, কিন্তু বাগান থেকে সদ্যতোলা ধনেপাতার মত টাটকা| অন্য পাঁচটা কাজ করতে করতে টাইমপাস হিসেবে খাসা গল্প|

এই হল গিয়ে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পড়া বইপত্রের খবর| স্বভাবসিদ্ধ পল্লবগ্রাহিতায় এখনও পড়ছি খান তিনেক বই| তা সে কথা পরে বলা যাবেখন 

No comments:

Post a Comment