খোঁজাখুঁজি

Sunday, August 12, 2012

আর এ পি ই

চারদিকে খুব ধর্ষণ ধর্ষণ রব উঠেছে| দৃশ্য, শ্রাব্য যত রকম মাধ্যম আছে সবেতেই একটা দুটো তিনটে চারটে করে ঘটনা দেখা/শোনা যাচ্ছে, পরিচিত সমাজকর্মী মুখ গম্ভীর করে বলছেন 'রেপের সংখ্যা ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে বুঝলেন'| একদ্ল রাজনীতিজীবি চেঁচাচ্ছে 'সব সাজানো| ধর্ষণ ফর্ষণ সব বোগাস'| আরেকদল রাজনীতিজীবি তুলে আনছে  আরো আরো অনেক ঘটনা|  আম জনতা যদি বলে আরে অতবড় অভিযোগ কোনও মেয়ে বানিয়ে বানিয়ে করতে পারে নাকি? তাহলে কলা জনগণ তৎক্ষণাৎ বলবে আরে করতে পারে না বলে কোনও কথা আছে? মানুষ পারে না এমন কাজই নেই, আর এ তো মেয়েমানুষ| লিচু জনগণ আবার ঠোঁট উল্টে বলে দিল দ্যাখো গিয়ে সব ভেতরে ভেতরে সাঁট আছে, তুমি-আমি কি বুঝবো ওসব ব্যপার, বাদ্দাও বাদ্দাও| মোদ্দাকথা হল প্রায় সকলেই ঐ নিয়ে কথা বলছে| কেউ বাংলায় বলে 'ধর্ষণ', যাদের আবার বাংলায় অস্বস্তিকর শব্দ দেখতে অসুবিধে লাগে তারা বলে 'রেপ', 'রেপকেস', রেপ ভিক্টিম'| তবে 'রেপ অ্যাক্ট্রেস' শব্দটা এখনও কেউ ব্যবহার করেন নি অবশ্য| ভাগ্যিস! 



তা, উন্নততর বঙ্গের মাটি হঠাৎ এমন রেপিস্টদের দুর্জয় ঘাঁটি হয়ে উঠল কেন? সমাজে কি তাহলে এদের এক ধরণের গ্রহণযোগ্যতা আছে? এরা জানে যে ধরা পড়লে এদের তেমন কোনও লাঞ্ছনা হবে না, সামাজিক সম্মানও অটুট থাকবে, কিন্তু মেয়েটি বা তার পরিবারকে আচ্ছাসে টাইট দেওয়া যাবে|  লোককে ধরে ধরে যদি এই গ্রহণযোগ্যতার ব্যপারটা  জিগ্যেস করি, তাহলে লোকে একেবারে হাঁ হাঁ করে ওঠে| কিন্তু প্রশ্নগুলো একটু ঘুরিয়ে ফোকাসটা যদি ধর্ষিতার দিকে ফেলি তাহলেই বক্তব্য ঘুরে যেতে থাকে " আমি কি বলিচি এটা ভাল কাজ; হেঁ হেঁ কিন্তু এটাও তো দেকবে মেয়েটা অতরাতে কেন ফিরচিল, আর পোশাক আশাকের কি ছিরি' ইত্যাদি, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি| অর্থাৎ কিছুটা হলেও কাজটার সপক্ষে একটা যুক্তি বক্তা খুঁজে পাচ্ছেন| নিজেও হয়ত সেটা সবসময় বুঝছেন না, বা বুঝতে চাইছেন না, ভাবছেন 'আমি তো কাজটার নিন্দাই করছি'| সমাজে প্রচলিত ধারণা হল ধর্ষণ একটি অত্যন্ত লজ্জাকর ও গর্হিত কাজ, অথচ এদিকে আবার অন্যান্য প্রচলিত ধারণা হল 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে' জাতীয়, সুখের না হওয়ার কারণও তাহলে হয়ত বা নারীটিই|  অতীব লজ্জাকর কিছু ঘটেছে যখন, ঘনঘনই ঘটছে যখন, তখন নিশ্চয়ই রমণীদের গুণেরই কিছু দোষ হচ্ছে; এরকম ভাবনার নরম কুশন অনেককেই এক্ধরণের স্বস্তি দেয়| 

আজ থেকে আট নয় বছর আগে, তখন ইন্টারনেটে বাংলায় লেখালেখি সবে শুরু হচ্ছে, তখনও ইউনিকোড বাজারে আসে নি, বাংলায় কোনও স্ট্যান্ডার্ড ফন্ট নেই, বিভিন্নরকম ফন্ট নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে| সেইসময় একটি বহুজাতিক সংস্থা একটি বাংলা ওয়েবসাইট বাজারে আনে; যেখানে আড্ডা দিতে কোনও পয়সাকড়ি লাগে না, কিন্তু চাইলে কিছু জিনিষপত্র নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে কেনা যায়| ফলতঃ প্রবাসী বাঙালি, যাঁরা বাংলায় টুকটাক লেখালেখি করতে বা আড্ডা দিতে ইচ্ছুক, তাঁদের অনেকের মধ্যেই সাইটটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে| আমিও সেইসময় পৃথিবীর্ অন্যপ্রান্তে আত্মীয়বন্ধু থেকে বহুদূরে একা থাকি এবং এই সাইটের আড্ডাটিতে আকৃষ্ট হই| কিছু সমমনা বন্ধু পেয়েও যাই, আর পেয়ে যাই কিছু অদ্ভুত লোকজনকেও| ইন্টারনেটের অ্যানোনিমিটির সাথে সেই প্রথম পরিচয় হচ্ছে আমাদের অনেকের, সাইবার-হ্যারাসমেন্ট বা সাইবার-ক্রাইম শব্দগুলো তখনও আমাদের অজানা| ফলে আমরা অনেকে যেমন নিজেদের নামেই লিখতে থাকি, আইডেন্টিফিকেশান গোপন করার খুব একটা চেষ্টা করি না, কিছু লোক তেমনি আবার অন্যান্য নানারকম নিকনেমে অবতীর্ণ হন, সেইসব নিকনেমেই নিজেদের পরিচিত করান সবার সাথে| এইসময় উত্তর পূর্ব এশিয়া থেকে একটা লোক এই আড্ডায় খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু লোকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে| তা সেসব দিব্বি চলছিল, গোল বাঁধল যখনই কেউ এই লোকটার সাথে কোনও বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়তে লাগল তখনই| তর্কের বিষয় পুরন্দর ভাটের কবিতা কিম্বা কলকাতার রাস্তাঘাট ---- যাই হোক না কেন, বিরুদ্ধমত যদি কোনও মেয়ের নামে লেখা হয় তাহলে এই লোক একেবারে ক্ষেপে আগুন হয়ে যায়| তা, এত কথা যে জন্য লিখলাম তাতে আসি এবারে| এই লোকটা এইসব তার্কিক মেয়েদের সম্পর্কে এমন কিছু জিনিষ ফ্যান্টাসাইজ করত এবং বলত যা অন্তত আমার কাছে একেবারে অচিন্তনীয়| যেমন রুম্পা আর সোমা হয়ত কোনও গায়কের গান তত পছন্দ করে না বলে জানাল, এই লোকটা রুম্পা সোমাদের সম্পর্কে অন্যদের কাছে বলল 'আরে সোমা আর রুম্পাকে দেখলেই মনে হয় প্যাড পাল্টাতে পাল্টাতে আসছে| আবার রূপশ্রী হয়ত কখনও বিরক্ত হয়ে বলল 'শিট' এই লোক ক্ষেপে বলে আমি তাহলে 'ফাক' বলব| রূপশ্রীও খচে বলল 'তাহলে আমিও উল্টে ওটাই বলব'; এবারে লোকটা উত্তর দিল 'বাট বায়োলজিক্যালি আই ক্যান ডু দ্যাট ট্যু ইউ'| রূপশ্রীও বাধ্য হয়েই লোকটাকে ওর বোনের কাছে যেতে বলে 'বায়োলজিক্যাল' ক্ষমতার প্রমাণ দিতে| এইরকম আরো নানারকম সব উদাহরণ আছে| 
আর এই একটা লোক হলে একে বিকৃতমন্স্ক বলে উপেক্ষা করা যেত হয়ত, কিন্তু তা নয়, এরকম আরও কয়েকজন দেখেছিলাম, যারা এতটা সরাসরি না বললেও, এই ধরণের কথাবার্তা বেশ উপভোগ করত, নিজেরাও আরেকটু রেখেঢেকে বলত -- তবে হ্যাঁ যাই বলুক, সেটা ইংরিজিতেই বলত|

কথা হল, একটা লোক, আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষিত, সফল, বিদেশে কর্মরত, নিজেকে এক প্রয়াত মাঝারীগোছের অভিনেতার নিকটাত্মীয় বলে দাবী করা লোক, সম্পূর্ণ অপরিচিত মহিলাদের সম্পর্কে এই ভাষায় কথা বলে কেন? মনে রাখতে হবে এখানে সমস্ত পরিচিতিই কিন্তু হচ্ছে কিছু ছাপা অক্ষরের মাধ্যমে| রুম্পা বা সোমা নামদুটি দেখে কারো পক্ষে সত্যিই কি বোঝা সম্ভব পেছনের মানুষগুলি কেমন দেখতে? কী পরে? কেমনভাবে হাঁটে? শুধুমাত্র একটা মেয়ে-নাম দেখলেই কি তাহলে কিছু ক্লিছু লোক এরকম ভাবনাচিন্তা করে -- এরা কি এক্ধরণের ক্লোসেট ধর্ষক নয়? প্রকৃত ধর্ষকদের প্রতি এই ক্লোসেট ধর্ষকরা কী মনোভাব পোষণ করে? সুস্থ ও শুভবুদ্ধির লোকজন যখন নিন্দা করেন, উদ্বিগ্ন হন তখন এরাও সাথে সাথে নিন্দা করে, উদ্বেগ দেখানর চেষ্টা করে কিন্তু সাথে এটাও বলতে ভোলে না যে নির্ঘাৎ কোনও ব্যপার ছিল, নাহলে কেনই বা ঘটল, আর যদি ঘটলই তাহলে ঐ বিশেষ মেয়েটির সাথেই বা কেন ঘটল ----- 

No comments:

Post a Comment