খোঁজাখুঁজি

Sunday, March 19, 2017

ডিমানিটাইজেশানের দিনলিপি

৮ই নভেম্বর ২০১৬
বাড়ী ফিরতে ফিরতে প্রায় পৌনে আটটা, এর মধ্যেই দেখি অফিসের লীডারশিপ গ্রুপটায় লোকজন উত্তেজিত, কি না 'প্রধানমন্ত্রীজি ভাষণ দেনেওয়ালে হ্যাঁয় রাত আট বাজে টিভি পর' দ্যাত্তেরি, দিতে থাকুক, ভেবে গুরুত্ব  দিই নি ওবাবা সমানে টুংটাং মেসেজের ঝড় খুলে দেখি সব ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট মাঝরাত থেকে বাতিল ব্লা ব্লা ব্লা প্রথমেই মাথায় এল আর সিগনালে রবীন্দ্রসংগীত বাজানোর আদেশে আমরা কিনা পশ্চিমবঙ্গের ওনাকে মহম্মদ বিন তুঘলকের সাথে তুলনা করেছিলাম তারপর আলমারীর ড্রয়ার হাঁটকে দেখলাম যা খুচরো আছে তাতে এক্ষুণি এটিএমে গিয়ে লাইন দিতে হবে না  যাক আপাতত নিশ্চিন্ত শনিবারে দেখা যাবেখনে

৯ই নভেম্বর ২০১৬
অফিসে সকলেই যথেষ্ট উত্তেজিত। এমন একটা সাহসী পদক্ষেপ স্মরণকালের মধ্যে কোন প্রধানমন্ত্রীকে তো  নিতে দেখা যায় নি, কালো টাকার যাকে বলে সব্বনাশ করে ছাড়বে এবারে।  সমস্ত কালোটাকা লোকে বাধ্য হবে হয় ট্যাক্স দিয়ে জমা দিতে নয়ত লুকিয়ে নষ্ট করে ফেলতে। বিল্ডার প্রোমোটাররা এবার জব্দ হবে সেই নিয়েও খানিক খুশীভরা জল্পনা হল।   বেলা বাড়তে খবর আসে মুম্বাইয়ের জাভেরি মার্কেটে লোকে হাজার টাকার নোট বদলে সাতশো আটশো টাকা নিয়ে ফেরত যাচ্ছে। সকলের মধ্যে বেশ একটা দ্যাখ কেমন লাগে ভাব। চা খেতে গিয়ে একজন একটা পাঁচশোর নোট ভাঙিয়ে নিল, যে কটা চালিয়ে নেওয়া যায় আর কি।

১০ই নভেম্বর ২০১৬
এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখছি একজনের ইন্ডেন গ্যাস সিলিন্ডার এসে ফেরত চলে গেল ৫৪৬ টাকা, তাও নাকি ৫০০র নোট নেবে না, টা একশো দিতে হবে আবার এখানে রাস্তার পাশের সব্জির ঝুপড়িতে ৩০ টাকার সব্জির জন্যও কার্ড সোয়াইপ করানো যায় এমন দোকানও আছে তার কালকে হুলিয়ে বিক্রী হয়েছে অন্য যারা শুধু নোট নেয়, তারা ৫০০ নিচ্ছে না, ফলে লোক সব হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কার্ডওয়ালা দোকানে যে সব ছেলে মেয়েগুলো  চার পাঁচ বা ছয়জন করে এক একটা ফ্ল্যাটে শেয়ারে থাকে, তাদের অধিকাংশেরই  ফ্রীজ নেই। প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় তরকারি/ চিকেন নিয়ে আসে। তাতেই রাতের খাবার, পরেরদিন সকালের খাবার, খুব গুছানো বা হিসেবী কেউ হলে পরেরদিনের টিফিনও বানিয়ে নেয়।  রোজের তরকারী কিনতে এখন  কার্ডই ভরসা।
যে সব্জিওলাদের কার্ড নেবার ব্যবস্থা  নেই তারা সকলেই বলে এখন নিয়ে গিয়ে দাম পরে দিতে। কেউ শোনে, বেশীরভাগই আগেভাগেই কিনে এনেছে কিম্বা আনালাইনে অর্ডার করে রেখেছে। কয়েকদিনের তো ব্যপার।

ইতিমদ্যে অবশ্য খবর এসে গেছে জাভেরি বাজারে যারা ৭০০ কিম্বা ৮০০ টাকায় ১০০০এর নোট দিয়েছে, তারা প্রায় সকলেই গরীব মিস্ত্রি, মজুর, যোগাড়ে কিম্বা কামওয়ালি বাঈ,  সমস্ত জমানো টাকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যা হাতে পাওয়া যায় তাতেই ছেড়ে দিয়েছে। হোতা হ্যায় বড়ে কুছ, আচ্ছে কুছ  করনে কে লিয়েঁ কভী কভী অ্যায়সে ছোটেমোটে কুছ কুছ হো যাতে হ্যায় ইয়ার

১২ই নভেম্বর ২০১৬
আমি কিনা হেঁটে হেঁটে আপিস যাই আসি আর শনি রোব্বারেই বাজার করে সব রান্নাবান্না করে রাখি, তাই আমার হপ্তার মধ্যে টাকাপয়সা বিশেষ লাগে না এদিকে জুলাই না অগাস্টে একবার এটিএম থেকে মাসের প্রথমেই পুরো টাকাটা ১০০র নোটে পেয়েছিলাম তো ১০০র নোট নিয়ে চলা মুশকিল ভেবে বাড়ীতেই রেখে দিয়েছিলাম টুকটাক ইলেকট্রিক বা  কলের মিস্ত্রি দিয়ে সারানো ইত্যাদি কাজ করাতে লাগে টাগে ভেবে তা সে ছিল আর এমাসের তোলা টাকারও খানিক ১০০য় চলে এসেছিল গত শনিবার কয়েকটা ৫০০ নানা কারণে ভাঙানোয় মোটকথা সব মিলিয়ে আমার অন্তত মঙ্গলবারেই এটিএম দৌড়ানোর দরকার পড়ে নি

তা আজ  সকালে সওয়া দশটা নাগাদ যখন পাড়ার এটিএমের (যেটা আবার আমাদেরই আপিসের গায়ে) সামনে দিয়ে যাচ্ছি তখন দেখি IDBI এর ঝাঁপ ওঠানো বুঝলাম টাকা এসেছে ঘুরে এলাম সামনে, এসে দেখি গিজগিজ করছে গাদাগাদা লোক আপিসের গেটের সিকিউরিটি কাকা বললেন ঢাইসো তক গিনা ... হাল ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে ফেজ-ট্যুতে ICICI এর সামনে গিয়ে দেখি অগুন্তি লোক একজন কর্মী খোঁজ নিচ্ছিলেন কেউ ডিপোজিট ওনলি আছেন কিনা তাড়াতাড়ি ওঁকে ধরে টুকুস করে ভিতরে গেলাম হ্যাঁ অ্যাকাউন্ট থাকলেও এখানে জমা দিতে আইডি প্রুফের অরিজিনাল দেখবে এবং কপি জমা নেবে ডিপোজিট স্লিপ ভরে দাঁড়ালামা জনা তিরিশেকের পেছনে ফোটোকপির গায়ে বেশ করে অ্যাটেস্ট করে লিখে দিলাম এই কপি ওমুক নোটের অতগুলি টুকরা জমা দেবার কাজে ব্যবহৃত হইতেছে আধঘন্টা বাদে জমা হল মাঝে একজন এসে জিগ্যেস করছিলেন কার কার পঞ্চাশ হাজারের ওপরে জমা দেবার আছে আমার হাতের কটি ৫০০র নোট দেখে হেসেই ফেললেন জিগ্যেস করলেন এই কটার জন্য পরে আসলে হত না? বললাম দেখুন নোটগুলো তো মরেই গেছে, লাশগুলো ঘরে রেখে কি লাভ? বরঙ  আপনাদের দিলে আপনারা কি ১০ পয়সা ইন্টারেস্ট তো দেবেন একটু থতিয়ে হ্যাঁ তা তো দেবই বলতে বলতে পঞ্চাশ হাজারি লোকেদের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন আমি থাকা পর্যন্ত তাদের মধ্যে মাত্র একজন বাইরে এসেছিলেন

তো জমা হবার পর দেখলাম তোলার লাইনের জন্য আবার বাইরে গিয়ে লাইন দিতে হবে কজন লোক আছে জিগ্যেস করে শুনলাম হোগা করিব পান ছেসো বাপরে!! তাড়াতাড়ি বেরিয়ে ডি-মার্ট, শেহনাজ-ফিশ-সেন্টার, কাকা-হালওয়াই ইত্যাদিতে ঘুরে কার্ড দিয়ে সওদাপাতি করে ফিরলাম রাস্তায় দেখি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক ইত্যাদির সামনে পুরো হরিহরছত্রের মেলা লেগে গেছেদিব্বি চা, বড়া-পাও ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে।   ফেরার সময়েও দেখি সেই ICICI এর বাইরে একই পরিমাণ লোক পাড়ার IDBI এর এটিএম ফাঁকা এবং খোলা দেখে উঁকি মারলামযে ল্যাঙপ্যাঙে বাচ্চা ছেলেটা বসে থাকে পাহারায় সে বলল আবার বিকেল পাঁচটায় টাকা আসবে বেশ এসে মোড়ের মাথায় কমার্শিয়াল মার্কেটে ঢুকে দেখি - টা অল্পবয়সী ছেলে আরেকটু দূরের প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছে কারণ এখানকার রেস্টুরেন্ট এখনও কার্ড নেবার মেশিনের ব্যবস্থা করে উঠতে পারে নি ওখানেই সব্জি, দুধ সব আবার কার্ড দিয়ে কিনে বাড়ী ঢুকলাম

হাউসিং ক্যাম্পাসে ঢুকে দেখি বিরাট গোলমাল মেইনটেনান্স কর্মীরা সব ধর্ণায় বসেছেন ওদের মাসের বেতন হয় নি, আজ  জোর দিয়ে চাওয়ায় ওদের ১০০০ আর ৫০০র নোট দিতে চেয়েছে  অ্যাডমিন এদিকে বাইরে একটা সবজির ঝুপড়িও ৫০০র নোট নেবে না, কারণ পাইকারেরাও নাকি অনেক টাকার না কিনলে ৫০০ নেয় না ওপরে এসে দেখলাম আজকের জঞ্জালও তোলেন নি ওঁরা খুবই স্বাভাবিক কি করে এর সমাধান হল বা হবে বুঝছি না শুনলাম কর্মীদের গতমাসের অর্ধেক বেতন ও দিওয়ালি বোনাসও বাকী। অনেকেই বিভিন্ন ঝুপড়িতে ভাড়া থাকেন, সেখানে ভাড়া বাকী পড়ে, মুদি দোকানে বাকী পড়ে, এখন এই নোটবন্দীর ফলে কেউই আর বাকী রাখতে চাইছে না। সকলেরই মনে আতঙ্ক পুরানো নোট হয়ত চালিয়ে দেবার চেষ্টা হবে। আর সত্যিই এতদিন বেতন বাকী রাখার  কোনও যুক্তি নেই। ফ্ল্যাটমালিকরা প্রায় কেউই মেইনটেনেন্স চার্জ বাকী রাখেন না।

১৪ই নভেম্বর ২০১৬
আমার ডান পাশের ডেস্কের কলিগ শুনলাম দুদিনে ৭৫ হাজার করে ক্যাশ জমা দিয়েছে। আর উইকেন্ডে গিয়ে পাঁচ কাঠা জমি কিনে নিয়েছে!  আরো কয়েক লাখ আছে ঘরে, সেটারও কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে, মারাঠী ভাষাটা শুনে মোটামুটি বুঝতে পারি বলে ঘটনাচক্রে শুনে ফেললাম আর কি, নাহলে আমার এমনিতে এগুলো জানার কথা নয়। প্রসঙ্গত এরা সকলেই কালোটাকা ও ঘরে জমিয়ে রাখা ক্যাশ টাকা নিয়ে বেশ উচ্চকন্ঠ ছিল ৯ তারিখ সকালে

২০শে নভেম্বর ২০১৬
অফিসের বাউন্ডারি ওয়ালের গায়ের  এটিএম দুটোতে কবে কখন টাকা আসে কে জানে,  তবে কখনো না কখনো নিশ্চয় আসে।  সারাদিনই কিছু লোক আর কিছু না হোক শুয়ে বসে থাকে, তাস টাস খেলে। কখন দেখি ঘুমায়ও টান টান হয়ে শুয়ে। আর যখন  দেড় দুশো লোক লাইনে দাঁড়ায়, যার মধ্যে কিছু কোম্পানির কর্মীও আছে, তখন বুঝতে হবে টাকা এসেছে।

২৩শে নভেম্বর ২০১৬
অফিস আর বাড়ীর ঠিক মাঝামাঝি রাস্তার মোড়ে কমার্শিয়াল মার্কেটের চত্বরে এক দার্জিলিং মোমোর দোকান, দুপুর দুটোর পরে টেবিল পেতে দাঁড়ায়। আমাদের অফিস আর উল্টোদিকের টিসিএস থেকে অনেকে বিকেলের দিকে  হেঁটে ওইখানে আসে মোমো খেতে। আসে বলা ঠিক হল না, আসত। এখন আর কেউ খুচরো ১৫ বা ৩০ টাকা ক্যাশে খরচ করতে রাজী নয়। মোমোওলা ছেলেটি পরিস্কার বাংলা বলে, আসামের ছেলে। ১৬ তারিখে  সে আমাকে জিগ্যেস করেছে কার্ড সোয়াপিং মেশিন বসাতে গেলে কী কী লাগে,  আমি মোটামুটি খবর নিয়ে বলে দিয়েছি। ওর দোকান পাকা নয়, ইলেকট্রিক কানেকশানও নেই, তাতে কি! পাশের যে পাকা দোকানে ফোটোকপি করানো থেকে টেনিস র‍্যাকেট সব পাওয়া যায় তার সাথে সেটিংস হয়ে গেছে। মোমোওলার কার্ড পেমেন্ট ওখানে হবে।

৩রা ডিসেম্বর ২০১৬
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইয়াহুতে বিল্ডারদের মেইল আসা যে কি পরিমাণ বেড়েছে বলার নয় আজ  ব্লকড/স্প্যাম আইডির লিস্ট খুলে দেখলাম গত দুই সপ্তাহে ৩৭টা নতুন ইমেইল যোগ করেছি, আর সব্কটাই বিল্ডার/প্রোমোটারদের
ICICI ব্যাঙ্ক বড় ভাল লাইনে দাঁড়ানো লোকেদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চা খাওয়ায়
ICICI আউন্ধ এর এক অফিসার কী ভেবে কে জানে লাইন থেকে গুনে গুনে সমস্ত মহিলাকে নিয়ে গিয়ে আলাদা কাউন্টার থেকে টাকা তুলিয়ে দিলেন কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা বাকী 'তিনেক পুরুষদের লাইন থেকে একটাও কটুকাটব্য বা তীর্যক বাক্য ভেসে এল না বরং দিব্বি হাসিখুশী মুখে অ্যাঁকাব্যাঁকা লাইনটার মাঝ দিয়ে পথ করে দিলেন

পেট্রোল পাম্পের কর্মীদের নভেম্বরের পর থেকে নাকি একেবারে সোনায় সোহাগা সিচুয়েশান এক একজন সপ্তাহে থেকে হাজার পর্যন্ত উপরি আয় করছে শিবা, আমার গাড়ী চালাতে আসে মাঝেমাঝে রেগম এন্টারপ্রাইজ থেকে, বলল এই যে পেট্রল পাম্পে পাঁচশো আর হাজার নোট নেবার কথা, তা এইজন্য প্রচুর লোক এসে ভাগে ভাগে বাইকে দুই একশোর তেল ভরে ৫০০ বা ১০০০ এর নোট ভাঙিয়ে নিচ্ছে। আর এতে পাম্প কররেমীদের লাভ দুইদিকদিয়ে। এক তো ৫০০ হলে ১০০ আর ১০০০ হলে ২০০০ ন্যুনতম  কমিশান আর অন্যদিকে লকটি যখন কমিশানের দরাদরি ো খুচরো বুঝে নিতে ব্যস্ত থাকে তখন শুন্যের কাঁটা নড়িয়ে দিয়ে ওইদিক থেকেও খানিকটা তেল মেরে নিচ্ছে। পাম্প মালিক কর্মীদের হিস্যা প্রতিদিন মিটিয়ে দিচ্ছে। বিশেষতঃ হাইওয়ের ধারের পাম্পগুলোর নোটবন্দীর পর থেকে আয় অনেক বেড়ে গেছে।

শিবার কাছেই শুনলাম,  বারামতি এলাকায় ব্যাঙ্কের কিছু কর্মীও এই উপলক্ষ্যে কোটির অঙ্কে আয় করেছে ব্যাঙ্কে টাকা এলেই তা চলে যেত বিশেষ কিছু লোকের কাছে, যে কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে গিয়ে অনেকসময়ই টাকা পান নি বা সামান্য দুই কিম্বা তিন হাজার পেয়েছেন।  প্রসঙ্গত বারামতি হল শরদ পাওয়ারের খাস এলাকা অনেকরকম গুজব শোনা গেছে ৮ই নভেম্বরের পরের কয়েকদিন এই অঞ্চলে। যেমন একটি লোককে দেখা গেছে বড় গাড়ি নিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে সমানে ঘুরতে, কোনও রাস্তার মোড়ে পুলিশ সন্দেহ করে থামালে দেখা গেছহে গাড়ি ভর্তি শুধু হাজারের নোটের বান্ডিল। বলা বাহুল্য এই গল্পের নানা ভার্সান, প্রশ্ন করতে থাকলে গল্প  একটু করে বদলে যায়। ব্যাঙ্ককর্মীদের কোটিপতি হবার খবর খুব সামান্য লোকই রাখে, তাই নিরুদ্দিষ্ট কালোটাকারা কখনও বড় গাড়ি চড়ে ঘোরে কখনও বা শরদ পাওয়ারের ফার্ম হাউসের কুয়োর মধ্যে ভেসে ওঠে। 

শিবাজীনগরের বড় মন্ডিতে টাল করে সব্জি ফেলে দিয়েছে পাইকার বিক্রেতারা দিতে হয়েছে আসলেপিরঙ্গুটের পাশের তিন চারটে গ্রামের বিনস আর টমাটো  খেতের ফসল অনেকটাই তোলা সম্ভব হয় নি, কারণ ফসল তোলানর জন্য মজুরী দেবার নোট নেই। যতটা সম্ভব বাড়ীর লোকেরা মিলে তুলে ফেলবার পর ফসল মাঠেই শুকিয়েছে।

একটা বেশ কেতার বিউটি সালোনে আজ  মাসের তারিখে একজনও খদ্দের নেই জন কর্মী শুধু বসে আছে প্রসঙ্গতঃ এই সালোনে সাধারণত দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে না গেলে ঘন্টা পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়

৭ই ডিসেম্বর ২০১৬
একমাস হল এখনও টাকার যোগান নিয়মিত হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না প্রথমে শুনলাম সাময়িক অসুবিধে কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে তিনদিন তারপর হল আট - দশ দিন, তারপরে ২১ দিন, তারপরে ৫০ দিন এখন শুনছি মাস লাগবে

ওদিকে আজ  রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিৎ প্যাটেলের দেখা পাওয়া গেল টিভিতে, সেই নোটবন্দীর ঘোষণাও মোদীই করেছিলেন, তখনও উর্জিৎঅকে দেখা যায় নি, তার পরেও না তবে ইন্টারেস্ট রেট কমল না অর্থাৎ কালোটাকা সব সাদা হয়ে গিয়ে যে কম সুদে গাড়ী বাড়ী পাওয়ার কথা ছিল সেদিকেও ফক্কা তবে হ্যাঁ ঋণের সুদ না কমলেও জমা টাকার ওপরে সুদ কিন্তু আগেই কমেছে যে সব লোক পোস্ট অফিসের মাসিক আয় যোজনায় টাকা রেখে প্রতিমাসে তার সুদ তুলে সংসার চালান, তাঁদের শুধু যে আয় কমেছে তাইই নয়, পোস্ট অফিসে (সারা দেশেই) টাকার যোগান না থাকায় প্রায় কোনওরকম টাকা তুলতেই পারছেন না বহু লোক যাঁরা টাকা পাচ্ছেন তাঁরাও যৎসামান্য

১৩ই ডিসেম্বর ২০১৬
আজ কোন্নগর পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম রেভিনিউ স্ট্যাম্প কিনতে। বাইরে একজন দাঁড়ানো, কী প্রয়োজনে এসেছি তা রীতিমত জেরা করে তবে ঢুকতে দিলেন। কিনে বেরোনর পরে বিনয় কাকুর  সাথে দেখা, আজ নিয়ে নবম দিন এসে ফিরে যাচ্ছেন এমাইএসের সুদ তুলতে, পোস্টাপিসে নাকি  কোনরকম টাকাই আসছেনা। কথা বলতে বলতে আরও কজন জড়ো হলেন, কাউকে চিনি, কারো মুখ চিনি, কাউকে হয়ত একদমই চিনি না। অনেকেই ন্যুব্জদেহ, কেউ কেউ চলতে গেলে কাঁপছেন দেখলাম,  দৃষ্টি অধিকাংশেরই ক্ষীণ এই মানুষগুলি সারাজীবনের পরিশ্রমের সঞ্চয়টুকু তুলতে পারছেন না, কোনও খবরও কেউ দিতে পারছেন না কবে এঁরা টাকা পাবেন 

৩০শে ডিসেম্বর ২০১৬
কোন্নগর থেকে ফিরে দেখছি হাউসিঙের সামনের সব্জিওলাটা নেই। মাছওলা পেটিএমের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। ওদিকের বাকি সব্জিওলাদের, যাবার আগেই দেখে গিয়েছিলাআম পেটিএম আর কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ট্র্যন্সফারএর ব্যবস্থা ছিলদুজন লন্ড্রিওলা যারা পেটিএমের ব্যবস্থা করছিল/করেছে তারা আছে, বালাজি,যে ছেলেটি পেটিএম করতে পারে নি ক্যাশ নিয়ে ইস্ত্রি করছিল সে আর নেই এই সব্জিওলা বা বালাজি কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না, বলতে পারল না মোড়ের কমার্শিয়াল মার্কেটের মোমোওলা পেটিএমের ব্যবস্থা করেছে, কার্ড সোয়াপিঙ মেশিনের কথা এখুনি ভাবছে না বলল

১৬ই জানুয়ারী ২০১৭
এমনিতে ডিমানির প্রথম থেকে সুশীলা আন্টি বেশ হাসিখুশী আমাকেই ডিসেম্বর জানুয়ারী দুই মাসেই বেশ খান দুই করে দুই হাজারি নোট ভাঙিয়ে দিয়েছে, আরো সব অন্য অন্য বাড়ীতেও যার যার অসুবিধে ছিল আন্টি এনে দিয়েছে তাদের কাউকে দুই হাজার ভাঙিয়ে, কাউকে বা বেয়ারার চেক দিয়ে টাকা তুলে এনে নিজের বাড়ীর জন্যও নাকি ১০০ টাকার নোটে দশ হাজার টাকা বের করে দিয়েছিল সেই দশই নভেম্বর ওর জমানো শড়ীর ভাঁজ থেকে ছেলে নাকি বলেছিল মাম্মি তুমিই তো সবচেয়ে বড়লোক দেখছি চকচকে একশো টাকার নোট নাকি আলাদা করে সরিয়ে রাখত, সেই রেখে রেখেই দশ হাজার -- অন্তত সেই রকমই বলেছিল তখন

শনিবার ছিল মকরসংক্রান্তি, সুশীলা আন্টি ছুটি নেয় প্রত্যেক বছরই রবিবার আমার কাছে আসে সকাল দশটা নাগাদ এই রবিবারে হঠাৎ পৌনে নটা নাগাদ এসে হাজির, চোখমুখ শুকনো, চোখের কোণে কালি কিঞ্চিৎ উদভ্রান্ত হাবভাব শনিবার মকরসংক্রান্তির দিনে কিছু পুরানো একটা ভাল শাড়ী তলা থেকে বের করে পরতে গিয়ে তার থেকে বেরিয়ে এসেছে পুরানো ৫০০ টাকার নোটে দশ হাজার টাকা এবার বলল আসল কথাটা 'মেরা হাসব্যান্ড পীতা হ্যায়, উনকা হাথসে ছুপানেকে লিয়ে ম্যাঁয়নে চার সাল প্যহলে উধার জমা কিয়া বিলকুল ইয়াদ নহীঁ থে তব সোচে থে  বেটি কি শাদি কি টাইম কুছ সোনে কা বানাকে দেঙ্গে সির্ফ মেরে তরফ সে, মেরি বেটি কে লিয়ে'
এখন কী উপায়? আমি তো যতদূর জানি এখন আর কোনই উপায় নেই সেটা বলব কীভাবে ভাবছি, তখন আন্টিই বলল সামনের ফ্ল্যাটের 'ভাইয়া' নাকি বলেছে শিবাজীনগরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ব্র্যাঞ্চ আছে সেখানে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে সোমবার সক্কাল সক্কাল যেতে, সঙ্গে ছেলে বা স্বামীকে না নিতে, তাহলে দুই নম্বরী ভাববে ওখানে কাউকে দুই একশো টাকা দিয়ে ফর্ম ফিলাপ করিয়ে বদলে আনতে আমি শুনে মনে মনে ভাবলাম এইসব তো কবেই বন্ধ হয়ে গেছে, মুখে কিছু আর বললাম না, যদি হয়ে যায় অনেকসময় তো নিয়মের ফাঁক গলেও কিছু কিছু জিনিষ হয়েও যায় কিন্তু নাঃ হয় নি টাকা বদলানো যায় নি, কারণ তারিখ শেষ হয়ে গেছে ডিসেম্বরেই আজ  আন্টি এল কেমন একটা দিশাহারা ভাবে আমি চাউনি চিনি, কত্তবার আয়নায় দেখেছি, সব আশাগুলো যখন টুপ টুপ করে নিভে যায় তখন অমন দিশেহারা ফ্যালফ্যালে একটা চাউনি আসে
এরপর টুকটাক কথাবার্তা হয় "কাল আমি মোদীকে খুব গালি দিয়েছি, এতগুলো টাকা, দুপুরে একটুও না বসে একটা একটা করে বা ড়ীতে কারো ঘর মোছা, দুই মাস করে কারো বাচ্চাকে তেল মাখানো, করে করে টাকাগুলো জমালাম ----" ছেলেরা বলেছে, ছেলেদের বাবাও বলেছে মোদী খুব ভাল কাজ করেছে এমনি করেই সব লুকানো টাকা বেরিয়ে আসবে' বলতে বলতে মুখে ছায়া পড়ে খানিক টাকাগুলো নেই হয়ে যাওয়ায়, খানিক অহেতুক অপমানে কী বলব ভেবে পাই না, আন্টি নিজেই আনমনা গলায় বলে কীভাবে যে টাকা রাখব, ছেলে বলেছে দু হাজারের নোটও যে কোনোদিন বন্ধ হবে আমি বলি ব্যাঙ্কে রাখ না কেন আন্টি? ব্যাঙ্কে রাখলে তো এই টাকাগুলো তোমার যেতও না, হাসব্যান্ডেও নিতে পারত না আন্টি কেমন নিরুপায় চোখে তাকিয়ে বলে আমি যে একটা আখরও দিতে পারি না, সঙ্গে একটা লোক লাগবেব্যাঙ্ক কতদূর আমাদের গাঁও থেকে। কাঊকে নিয়ে গেলেই সব জানাজানি হয়ে যাবে যে   আমি বলি আমি নিয়ে যাব আন্টি আন্টি বলে তুমি তো এখানে 'বছর থেকে তারপর চলে যাবে, তারপর? আমাদের গাঁয়ের থেকে কতদূর ব্যাঙ্ক সেখানে যেতে গেলে কাউকে নিয়ে যেতে হয়, গাঁয়ের সবাই জেনে যাবে, হাসব্যান্ড তো সাংঘাতিক কান্ড করবে (কে জানে হয়ত মারবেও) বলে মেয়েরা এসে আমার কাছেই চুল কাটার জন্য দুই একটা কানের দুল কেনার জন্য টাকা চায় ভাইদের কাছে চাইলে দেয়ও না, উলটে  হয় হাসে নয় বকে ব্যাঙ্কে রাখলে কী করে হবে আন্টি? ছোটেমোটে কাম কে লিয়ে ব্যঙ্ক ্যানা না মুমকিন হ্যায় আন্টি
ক্যাশলেস ভারতে সুশীলা আন্টিরা কী করবে তাহলে?

২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭
বোম্বে, পুনে, নাসিক, আকোলা, নাগপুর, উলহাসনগর, সোলাপুর মিউনিসিপালিটির নির্বাচন ছিল ২২ তারিখ আজ ফল প্রকাশিত হতে দেখা গেল, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা বোম্বে মিউনিসিপালিটি কোনওক্রমে বিজেপীর কাছাকাছি সিট পেয়েছে, বাকী সবকটাতেই বিজেপী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ শরদ পওয়ারের NCP তৃতীয় স্থানে হলেও কার্যত প্রায় ধুয়ে গেছে আর সম্পূর্ণ ধুয়ে গেছে উদ্ধবের ভাই রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নভ্নির্মাণ সেনা সেই রাজ ঠাকরে যে ২০০৮ সমস্ত বিহারী শ্রমিককে পুণে আশপাশ থেকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল, এই সেদিন যে পাকিস্তানি আর্টিস্টকে সিনেমায় নেবার অপরাধে পরিচালকদের প্রায় মাথা কাটার নিদান হাঁকছিল

তো, মোটামুটি দেখা যাচ্ছে নোটবন্দীর জন্য বিজেপীর ভোট বেড়েই গেছে  ভারতের অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রেই ঈর্ষাদ্বারা চালিত হয়  এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে আমাদের কষ্ট হচ্ছে হোকবড়লোকদের, প্রোমোটারদের তো জমা টাকা সব এবার কেমন চাপে পড়েছে না? নোটবন্দীর শুরুর দিকে ১০-১১ নভেম্বর নাগাদ সুশীলা আন্টির খুশী খুশী গলার আওয়াজ মনে পড়ে "শরদ পওয়ারকো তো পুরা লাগি হুই হ্যায়" বাংলা করলে অনেকটা মানে দাঁড়া শরদ পওয়ারের কেমন পেছনে বাঁশটা ঢুকেছে! সব কষ্ট সহ্য করে নেবার ঐটাই চালিকাশক্তি অথচ কোনও বড়লোকের কিস্যু লাগে নি, সব যে যার সেটিংস ট্ড়িকঠাক করেই নিয়েছে  আর এমনিতেই কালোটাকা মানে তো আর এই ২০১৭ তে সত্যিই টাকা নয়, অন্য অনেক কিছু 
ইতিমধ্যে এখানে অবশ্য এটিএমগুলোতে টাকার যোগান প্রায় ঠিকঠাক ৫০০র নোট একটু কম, ২০০০র নোট একটু বেশী, কিন্তু কাজ ভালই চলে যায় আর হ্যাঁ এটিএম অন, পেটিএম গন  এটিএমে টাকা আসতেই তরকারীর দোকানগুলোর পেটিএম নাম্বারের জায়গায় ডট ডট করে দিয়ে ক্যাশ টাকায় ফেরত মাছওয়ালা, চিকেনওয়ালা অবশ্য পেটিএম নিচ্ছে

১১ইমার্চ ২০১৭
আজ ছিল পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন নোটবন্দী তথা ডিমনিটাইজেশানের সময় থেকে বিজেপী এবং বিরোধীরা একাগ্র হয়ে লক্ষস্থির করে এই রাজ্যকটির নির্বাচনের দিকে, বিশেষত উত্তরপ্রদেশ ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপী বিধানসভা দখল করতে পারলে  প্রায় ধরে নেওয়াই যায় ২০১৯ এও লোকসভায় বিজেপীই আসছে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি মুলায়ম সিং যাদব পরবর্তীতে তস্য পুত্র অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি গত চোদ্দ পনেরো বছর বিজেপীকে ইউপির মসনদের দিকে ঘেঁষতে দেয় নি  এদিকে পাঞ্জাবে শোনা গেছিল কেজরিওয়ালের 'আপ' সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে ওদিকে মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী ইবৈয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ইরম শর্মিলা চানু গোয়া উত্তরাখন্ড ছিল বাকী দুটি রাজ্য

তো, ফল বেরিয়ে গেছে বিজেপী দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ইউপি এবং উত্তরাখন্ডে পাঞ্জাবে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ গোয়া মণিপুরে কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় নি, তবে কংগ্রেস কিছু আসনে এগিয়ে রয়েছে এই দুইটি রাজ্যেই  প্রথমে ইউপির কথাই একটু বলি দেখাই যাচ্ছে লোকে নোটবন্দীর কষ্ট সহ্য করেও বিজেপীকে গ্রহণ করেছে, আমার কষ্ট হয় হোক, বড়লোকদের তো ফাটছে (সত্যি ফাটছে কিনা কে আর অত দেখতে যায়) অন্য যেটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট সেটা হল ইউপিতে বিভিন্ন জাত ধর্মের লোকের সংখ্যা প্রচুর এসসি, এসএসটি, ওবিসির অজস্র ভাগ এবং বেশ ভাল সংখ্যক মুসলমানের ভোট বিজেপী পেয়েছে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সেকুলারিজম লিবারেলিজমের নামে অল্প কিছু গোষ্ঠীকে পাইয়ে দেওয়া ব্যপারটাকে মানুষ ছুঁড়ে ফেলতে শুরু কারেছে যেমন মুসলিম মহিলাদের দুটি সংগঠন ভোটের  আগেপরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েছেন মোদী সরকার যেহেতু তিন তালাক প্রথা রদ করার ব্যপারে সত্যিকারের সদিচ্ছা দেখেছে, তাঁরা মনে করেন বিজেপী এই ব্যপারে সিরিয়াস, তাই তাঁরা বিজেপীকেই ভোট দিয়েছেন দেবেন তাঁরা সব মুসলিম মহিলাদেরই বিজেপীকে ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তোএরকম  অখিলেশের কাছে যে শ্রেণীগুলি সুবিধে পেয়ে আসছে, মোদী অমিত শাহ  তাদের বিপক্ষ শ্রেণীদের টার্গেট করে বোঝাতে সফল হয়েছেনক্ষমতা পেয়ে গেলে বাকীদের হাতে আনা তো দুই টুসকি ব্যপারনোটবন্দী বা তজ্জনিত অসুবিধে এখানে ততবড় ফ্যাক্টর হয় নি লোকে এখনও স্বপ্ন দেখছে যে উন্নতি হবে  আর একটা ব্যাপার গত কিছু নির্বাচন ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে সেটা হল লোকে আঞ্চলিক দলগুলোকে আর ভরসা করছে না আর জাতীয় দল বলতে কংগ্রেসের হাল রাহুলকে না সরালে বদলানোর কোনও আশা তো দেখছি না

যাগ্গে নির্বাচন নিয়ে বলতে গেলে আস্ত একটা পোস্টই দরকার সে থাক সংক্ষেপে এইটুকু বলার যে নোটবন্দীর ফলে মানুষের যে চুড়ান্ত দুর্ভোগ হয়েছে, মানুষ সেটা মেনে নিয়েছে এবং তার জন্য বিজেপীর কোনও দুর্ভোগ পোয়াতে হয় নি অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়বে তা এক্ষুণি বলা মুশকিল  আঁখো দেখি হালে কিছু ক্ষেত্রে মন্দাই দেখছি কিন্তু সে হয়ত শুধুই সীমিত ক্ষেত্রে কিছু বছর গেলে ঠিক করে বোঝা যাবে হয়ত আপাতত জিডিপি প্রোজেকশান % রেখেছে সরকার, যেটা আবার বিভিন্ন্মহল থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে ইনফ্লেটেড  কাজেই আপাতত জল যথেষ্ট ঘোলা কালোটাকা ধরা পড়বে বলে যা  বলা হয়েছিল তার কোনও পরিস্কার হিসেব আসে নি   সীমান্ত থেকে চোরাচালান হয়ে আসা জাল টাকার যোগান বন্ধ হবে বলে বলা হয়েছিল, সেটাও হয় নি এই চার মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২০০০ এর নোটে প্রচুর জাল টাকা উদ্ধার হয়েছে, কাজেই জালিয়াতরা যে ঝটাপট জাল করে ফেলেছে সে তো দেখাই যাচ্ছে  কাশ্মীরে সন্ত্রাস বন্ধ হবে এও বেশ ঘটা করে বলা হয়েছিল কিন্তু তাও হয় নি এর মধ্যে একটি বড় বেশ কিছু খুচরো অ্যাটাক হয়েছে, পুলিশ সেনাবাহিনীর তান্ডবও অব্যাহত কাজেই সবই যাকে বলে বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল  মাঝখান থেকে লোকের মনে এই ধার?ণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে দ্যাখো মোদীই একমাত্র লোক যে শুধু গরীব নয় বড়লোকদেরও সব টাকা কেড়ে নিয়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে


আর যে কথাটা বলে শেষ করব সেটা হল ইরম শর্মিলা চানুর ৯১ ভোট পেয়ে হার বিভিন্ন জায়গায় দেখছি অনেকেই খুব বিস্মিত দুঃখিত  তো, যেটা বলার সেটা হল, শর্মিলা তাঁর পরিবার নিকট একটি বৃত্তের কাছে এক কাল্ট ফিগার ছিলেন যাকে ভাঙিয়ে দেশ বিদেশের ডোনেশান পাওয়া যায় এক উচ্চ সম্মানের আসন পাওয়া যায় উনি অনশন ভঙ্গ করার সাথে সাথেই বৃত্ত সেটি খোয়ায় ফলে ওঁর পরিবার নিকটজনেরা প্রচন্ড বিরোধীতা করেছিলেন অনশন ভঙ্গ করার সিদ্ধান্তেরএরপর ভোটে লড়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা তো বোধহয় মণিপুরের বহু লোকই করেছিল বা এরকম কিছু খবর দেখেছিলাম এবার এই দীর্ঘ ১৬ বছরে শর্মিলা মণিপুরের জনগনের মধ্যে যোগসূত্র ছিল সেই লোকগুলো যাদের শর্মিলা অনশনে থাকলেই লাভ বেশী কাজেই তাদের সৃষ্ট ইমেজেই মণিপুরে শর্মিলার ইমেজ মূলত এর মধ্যে উনি নিজে কতটা কি জনসংযোগ করতে পেরেছেন আমার খুব সন্দেহ আছে এছাড়া  নব্বইয়ের দশক বা শুন্যের দশকে AFSPA যেমন জ্বলন্ত সমস্যা ছিল এখন তো আর তা নেই  মণিপুরে এখন মূল সমস্যা পাহাড়ের নাগাদের থেকে উপত্যকার স্বার্থ কে রক্ষা করবে? ক্লিয়ারলি মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি  শর্মিলার থেকে  কয়েকশো মাইল এগিয়ে থাকবেন এখানে  এই মুহূর্তে নাগা ভার্সেস মেইতেই জ্বলন্ত সমস্যা AFSPA কারো চিন্তাতেই নেইকাজেই শর্মিলার হার অত্যন্ত দুঃখজন হলেও আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়৮ই নভেম্বর ২০১৬
বাড়ী ফিরতে ফিরতে প্রায় পৌনে আটটা, এর মধ্যেই দেখি অফিসের লীডারশিপ গ্রুপটায় লোকজন উত্তেজিত, কি না 'প্রধানমন্ত্রীজি ভাষণ দেনেওয়ালে হ্যাঁয় রাত আট বাজে টিভি পর' দ্যাত্তেরি, দিতে থাকুক, ভেবে গুরুত্ব  দিই নি ওবাবা সমানে টুংটাং মেসেজের ঝড় খুলে দেখি সব ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট মাঝরাত থেকে বাতিল ব্লা ব্লা ব্লা প্রথমেই মাথায় এল আর সিগনালে রবীন্দ্রসংগীত বাজানোর আদেশে আমরা কিনা পশ্চিমবঙ্গের ওনাকে মহম্মদ বিন তুঘলকের সাথে তুলনা করেছিলাম তারপর আলমারীর ড্রয়ার হাঁটকে দেখলাম যা খুচরো আছে তাতে এক্ষুণি এটিএমে গিয়ে লাইন দিতে হবে না  যাক আপাতত নিশ্চিন্ত শনিবারে দেখা যাবেখনে

৯ই নভেম্বর ২০১৬
অফিসে সকলেই যথেষ্ট উত্তেজিত। এমন একটা সাহসী পদক্ষেপ স্মরণকালের মধ্যে কোন প্রধানমন্ত্রীকে তো  নিতে দেখা যায় নি, কালো টাকার যাকে বলে সব্বনাশ করে ছাড়বে এবারে।  সমস্ত কালোটাকা লোকে বাধ্য হবে হয় ট্যাক্স দিয়ে জমা দিতে নয়ত লুকিয়ে নষ্ট করে ফেলতে। বিল্ডার প্রোমোটাররা এবার জব্দ হবে সেই নিয়েও খানিক খুশীভরা জল্পনা হল।   বেলা বাড়তে খবর আসে মুম্বাইয়ের জাভেরি মার্কেটে লোকে হাজার টাকার নোট বদলে সাতশো আটশো টাকা নিয়ে ফেরত যাচ্ছে। সকলের মধ্যে বেশ একটা দ্যাখ কেমন লাগে ভাব। চা খেতে গিয়ে একজন একটা পাঁচশোর নোট ভাঙিয়ে নিল, যে কটা চালিয়ে নেওয়া যায় আর কি।

১০ই নভেম্বর ২০১৬
এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখছি একজনের ইন্ডেন গ্যাস সিলিন্ডার এসে ফেরত চলে গেল ৫৪৬ টাকা, তাও নাকি ৫০০র নোট নেবে না, টা একশো দিতে হবে আবার এখানে রাস্তার পাশের সব্জির ঝুপড়িতে ৩০ টাকার সব্জির জন্যও কার্ড সোয়াইপ করানো যায় এমন দোকানও আছে তার কালকে হুলিয়ে বিক্রী হয়েছে অন্য যারা শুধু নোট নেয়, তারা ৫০০ নিচ্ছে না, ফলে লোক সব হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কার্ডওয়ালা দোকানে যে সব ছেলে মেয়েগুলো  চার পাঁচ বা ছয়জন করে এক একটা ফ্ল্যাটে শেয়ারে থাকে, তাদের অধিকাংশেরই  ফ্রীজ নেই। প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় তরকারি/ চিকেন নিয়ে আসে। তাতেই রাতের খাবার, পরেরদিন সকালের খাবার, খুব গুছানো বা হিসেবী কেউ হলে পরেরদিনের টিফিনও বানিয়ে নেয়।  রোজের তরকারী কিনতে এখন  কার্ডই ভরসা।
যে সব্জিওলাদের কার্ড নেবার ব্যবস্থা  নেই তারা সকলেই বলে এখন নিয়ে গিয়ে দাম পরে দিতে। কেউ শোনে, বেশীরভাগই আগেভাগেই কিনে এনেছে কিম্বা আনালাইনে অর্ডার করে রেখেছে। কয়েকদিনের তো ব্যপার।

ইতিমদ্যে অবশ্য খবর এসে গেছে জাভেরি বাজারে যারা ৭০০ কিম্বা ৮০০ টাকায় ১০০০এর নোট দিয়েছে, তারা প্রায় সকলেই গরীব মিস্ত্রি, মজুর, যোগাড়ে কিম্বা কামওয়ালি বাঈ,  সমস্ত জমানো টাকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যা হাতে পাওয়া যায় তাতেই ছেড়ে দিয়েছে। হোতা হ্যায় বড়ে কুছ, আচ্ছে কুছ  করনে কে লিয়েঁ কভী কভী অ্যায়সে ছোটেমোটে কুছ কুছ হো যাতে হ্যায় ইয়ার

১২ই নভেম্বর ২০১৬
আমি কিনা হেঁটে হেঁটে আপিস যাই আসি আর শনি রোব্বারেই বাজার করে সব রান্নাবান্না করে রাখি, তাই আমার হপ্তার মধ্যে টাকাপয়সা বিশেষ লাগে না এদিকে জুলাই না অগাস্টে একবার এটিএম থেকে মাসের প্রথমেই পুরো টাকাটা ১০০র নোটে পেয়েছিলাম তো ১০০র নোট নিয়ে চলা মুশকিল ভেবে বাড়ীতেই রেখে দিয়েছিলাম টুকটাক ইলেকট্রিক বা  কলের মিস্ত্রি দিয়ে সারানো ইত্যাদি কাজ করাতে লাগে টাগে ভেবে তা সে ছিল আর এমাসের তোলা টাকারও খানিক ১০০য় চলে এসেছিল গত শনিবার কয়েকটা ৫০০ নানা কারণে ভাঙানোয় মোটকথা সব মিলিয়ে আমার অন্তত মঙ্গলবারেই এটিএম দৌড়ানোর দরকার পড়ে নি

তা আজ  সকালে সওয়া দশটা নাগাদ যখন পাড়ার এটিএমের (যেটা আবার আমাদেরই আপিসের গায়ে) সামনে দিয়ে যাচ্ছি তখন দেখি IDBI এর ঝাঁপ ওঠানো বুঝলাম টাকা এসেছে ঘুরে এলাম সামনে, এসে দেখি গিজগিজ করছে গাদাগাদা লোক আপিসের গেটের সিকিউরিটি কাকা বললেন ঢাইসো তক গিনা ... হাল ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে ফেজ-ট্যুতে ICICI এর সামনে গিয়ে দেখি অগুন্তি লোক একজন কর্মী খোঁজ নিচ্ছিলেন কেউ ডিপোজিট ওনলি আছেন কিনা তাড়াতাড়ি ওঁকে ধরে টুকুস করে ভিতরে গেলাম হ্যাঁ অ্যাকাউন্ট থাকলেও এখানে জমা দিতে আইডি প্রুফের অরিজিনাল দেখবে এবং কপি জমা নেবে ডিপোজিট স্লিপ ভরে দাঁড়ালামা জনা তিরিশেকের পেছনে ফোটোকপির গায়ে বেশ করে অ্যাটেস্ট করে লিখে দিলাম এই কপি ওমুক নোটের অতগুলি টুকরা জমা দেবার কাজে ব্যবহৃত হইতেছে আধঘন্টা বাদে জমা হল মাঝে একজন এসে জিগ্যেস করছিলেন কার কার পঞ্চাশ হাজারের ওপরে জমা দেবার আছে আমার হাতের কটি ৫০০র নোট দেখে হেসেই ফেললেন জিগ্যেস করলেন এই কটার জন্য পরে আসলে হত না? বললাম দেখুন নোটগুলো তো মরেই গেছে, লাশগুলো ঘরে রেখে কি লাভ? বরঙ  আপনাদের দিলে আপনারা কি ১০ পয়সা ইন্টারেস্ট তো দেবেন একটু থতিয়ে হ্যাঁ তা তো দেবই বলতে বলতে পঞ্চাশ হাজারি লোকেদের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন আমি থাকা পর্যন্ত তাদের মধ্যে মাত্র একজন বাইরে এসেছিলেন

তো জমা হবার পর দেখলাম তোলার লাইনের জন্য আবার বাইরে গিয়ে লাইন দিতে হবে কজন লোক আছে জিগ্যেস করে শুনলাম হোগা করিব পান ছেসো বাপরে!! তাড়াতাড়ি বেরিয়ে ডি-মার্ট, শেহনাজ-ফিশ-সেন্টার, কাকা-হালওয়াই ইত্যাদিতে ঘুরে কার্ড দিয়ে সওদাপাতি করে ফিরলাম রাস্তায় দেখি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক ইত্যাদির সামনে পুরো হরিহরছত্রের মেলা লেগে গেছেদিব্বি চা, বড়া-পাও ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে।   ফেরার সময়েও দেখি সেই ICICI এর বাইরে একই পরিমাণ লোক পাড়ার IDBI এর এটিএম ফাঁকা এবং খোলা দেখে উঁকি মারলামযে ল্যাঙপ্যাঙে বাচ্চা ছেলেটা বসে থাকে পাহারায় সে বলল আবার বিকেল পাঁচটায় টাকা আসবে বেশ এসে মোড়ের মাথায় কমার্শিয়াল মার্কেটে ঢুকে দেখি - টা অল্পবয়সী ছেলে আরেকটু দূরের প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছে কারণ এখানকার রেস্টুরেন্ট এখনও কার্ড নেবার মেশিনের ব্যবস্থা করে উঠতে পারে নি ওখানেই সব্জি, দুধ সব আবার কার্ড দিয়ে কিনে বাড়ী ঢুকলাম

হাউসিং ক্যাম্পাসে ঢুকে দেখি বিরাট গোলমাল মেইনটেনান্স কর্মীরা সব ধর্ণায় বসেছেন ওদের মাসের বেতন হয় নি, আজ  জোর দিয়ে চাওয়ায় ওদের ১০০০ আর ৫০০র নোট দিতে চেয়েছে  অ্যাডমিন এদিকে বাইরে একটা সবজির ঝুপড়িও ৫০০র নোট নেবে না, কারণ পাইকারেরাও নাকি অনেক টাকার না কিনলে ৫০০ নেয় না ওপরে এসে দেখলাম আজকের জঞ্জালও তোলেন নি ওঁরা খুবই স্বাভাবিক কি করে এর সমাধান হল বা হবে বুঝছি না শুনলাম কর্মীদের গতমাসের অর্ধেক বেতন ও দিওয়ালি বোনাসও বাকী। অনেকেই বিভিন্ন ঝুপড়িতে ভাড়া থাকেন, সেখানে ভাড়া বাকী পড়ে, মুদি দোকানে বাকী পড়ে, এখন এই নোটবন্দীর ফলে কেউই আর বাকী রাখতে চাইছে না। সকলেরই মনে আতঙ্ক পুরানো নোট হয়ত চালিয়ে দেবার চেষ্টা হবে। আর সত্যিই এতদিন বেতন বাকী রাখার  কোনও যুক্তি নেই। ফ্ল্যাটমালিকরা প্রায় কেউই মেইনটেনেন্স চার্জ বাকী রাখেন না।

১৪ই নভেম্বর ২০১৬
আমার ডান পাশের ডেস্কের কলিগ শুনলাম দুদিনে ৭৫ হাজার করে ক্যাশ জমা দিয়েছে। আর উইকেন্ডে গিয়ে পাঁচ কাঠা জমি কিনে নিয়েছে!  আরো কয়েক লাখ আছে ঘরে, সেটারও কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে, মারাঠী ভাষাটা শুনে মোটামুটি বুঝতে পারি বলে ঘটনাচক্রে শুনে ফেললাম আর কি, নাহলে আমার এমনিতে এগুলো জানার কথা নয়। প্রসঙ্গত এরা সকলেই কালোটাকা ও ঘরে জমিয়ে রাখা ক্যাশ টাকা নিয়ে বেশ উচ্চকন্ঠ ছিল ৯ তারিখ সকালে

২০শে নভেম্বর ২০১৬
অফিসের বাউন্ডারি ওয়ালের গায়ের  এটিএম দুটোতে কবে কখন টাকা আসে কে জানে,  তবে কখনো না কখনো নিশ্চয় আসে।  সারাদিনই কিছু লোক আর কিছু না হোক শুয়ে বসে থাকে, তাস টাস খেলে। কখন দেখি ঘুমায়ও টান টান হয়ে শুয়ে। আর যখন  দেড় দুশো লোক লাইনে দাঁড়ায়, যার মধ্যে কিছু কোম্পানির কর্মীও আছে, তখন বুঝতে হবে টাকা এসেছে।

২৩শে নভেম্বর ২০১৬
অফিস আর বাড়ীর ঠিক মাঝামাঝি রাস্তার মোড়ে কমার্শিয়াল মার্কেটের চত্বরে এক দার্জিলিং মোমোর দোকান, দুপুর দুটোর পরে টেবিল পেতে দাঁড়ায়। আমাদের অফিস আর উল্টোদিকের টিসিএস থেকে অনেকে বিকেলের দিকে  হেঁটে ওইখানে আসে মোমো খেতে। আসে বলা ঠিক হল না, আসত। এখন আর কেউ খুচরো ১৫ বা ৩০ টাকা ক্যাশে খরচ করতে রাজী নয়। মোমোওলা ছেলেটি পরিস্কার বাংলা বলে, আসামের ছেলে। ১৬ তারিখে  সে আমাকে জিগ্যেস করেছে কার্ড সোয়াপিং মেশিন বসাতে গেলে কী কী লাগে,  আমি মোটামুটি খবর নিয়ে বলে দিয়েছি। ওর দোকান পাকা নয়, ইলেকট্রিক কানেকশানও নেই, তাতে কি! পাশের যে পাকা দোকানে ফোটোকপি করানো থেকে টেনিস র‍্যাকেট সব পাওয়া যায় তার সাথে সেটিংস হয়ে গেছে। মোমোওলার কার্ড পেমেন্ট ওখানে হবে।

৩রা ডিসেম্বর ২০১৬
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইয়াহুতে বিল্ডারদের মেইল আসা যে কি পরিমাণ বেড়েছে বলার নয় আজ  ব্লকড/স্প্যাম আইডির লিস্ট খুলে দেখলাম গত দুই সপ্তাহে ৩৭টা নতুন ইমেইল যোগ করেছি, আর সব্কটাই বিল্ডার/প্রোমোটারদের
ICICI ব্যাঙ্ক বড় ভাল লাইনে দাঁড়ানো লোকেদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চা খাওয়ায়
ICICI আউন্ধ এর এক অফিসার কী ভেবে কে জানে লাইন থেকে গুনে গুনে সমস্ত মহিলাকে নিয়ে গিয়ে আলাদা কাউন্টার থেকে টাকা তুলিয়ে দিলেন কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা বাকী 'তিনেক পুরুষদের লাইন থেকে একটাও কটুকাটব্য বা তীর্যক বাক্য ভেসে এল না বরং দিব্বি হাসিখুশী মুখে অ্যাঁকাব্যাঁকা লাইনটার মাঝ দিয়ে পথ করে দিলেন

পেট্রোল পাম্পের কর্মীদের নভেম্বরের পর থেকে নাকি একেবারে সোনায় সোহাগা সিচুয়েশান এক একজন সপ্তাহে থেকে হাজার পর্যন্ত উপরি আয় করছে শিবা, আমার গাড়ী চালাতে আসে মাঝেমাঝে রেগম এন্টারপ্রাইজ থেকে, বলল এই যে পেট্রল পাম্পে পাঁচশো আর হাজার নোট নেবার কথা, তা এইজন্য প্রচুর লোক এসে ভাগে ভাগে বাইকে দুই একশোর তেল ভরে ৫০০ বা ১০০০ এর নোট ভাঙিয়ে নিচ্ছে। আর এতে পাম্প কররেমীদের লাভ দুইদিকদিয়ে। এক তো ৫০০ হলে ১০০ আর ১০০০ হলে ২০০০ ন্যুনতম  কমিশান আর অন্যদিকে লকটি যখন কমিশানের দরাদরি ো খুচরো বুঝে নিতে ব্যস্ত থাকে তখন শুন্যের কাঁটা নড়িয়ে দিয়ে ওইদিক থেকেও খানিকটা তেল মেরে নিচ্ছে। পাম্প মালিক কর্মীদের হিস্যা প্রতিদিন মিটিয়ে দিচ্ছে। বিশেষতঃ হাইওয়ের ধারের পাম্পগুলোর নোটবন্দীর পর থেকে আয় অনেক বেড়ে গেছে।

শিবার কাছেই শুনলাম,  বারামতি এলাকায় ব্যাঙ্কের কিছু কর্মীও এই উপলক্ষ্যে কোটির অঙ্কে আয় করেছে ব্যাঙ্কে টাকা এলেই তা চলে যেত বিশেষ কিছু লোকের কাছে, যে কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে গিয়ে অনেকসময়ই টাকা পান নি বা সামান্য দুই কিম্বা তিন হাজার পেয়েছেন।  প্রসঙ্গত বারামতি হল শরদ পাওয়ারের খাস এলাকা অনেকরকম গুজব শোনা গেছে ৮ই নভেম্বরের পরের কয়েকদিন এই অঞ্চলে। যেমন একটি লোককে দেখা গেছে বড় গাড়ি নিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে সমানে ঘুরতে, কোনও রাস্তার মোড়ে পুলিশ সন্দেহ করে থামালে দেখা গেছহে গাড়ি ভর্তি শুধু হাজারের নোটের বান্ডিল। বলা বাহুল্য এই গল্পের নানা ভার্সান, প্রশ্ন করতে থাকলে গল্প  একটু করে বদলে যায়। ব্যাঙ্ককর্মীদের কোটিপতি হবার খবর খুব সামান্য লোকই রাখে, তাই নিরুদ্দিষ্ট কালোটাকারা কখনও বড় গাড়ি চড়ে ঘোরে কখনও বা শরদ পাওয়ারের ফার্ম হাউসের কুয়োর মধ্যে ভেসে ওঠে। 

শিবাজীনগরের বড় মন্ডিতে টাল করে সব্জি ফেলে দিয়েছে পাইকার বিক্রেতারা দিতে হয়েছে আসলেপিরঙ্গুটের পাশের তিন চারটে গ্রামের বিনস আর টমাটো  খেতের ফসল অনেকটাই তোলা সম্ভব হয় নি, কারণ ফসল তোলানর জন্য মজুরী দেবার নোট নেই। যতটা সম্ভব বাড়ীর লোকেরা মিলে তুলে ফেলবার পর ফসল মাঠেই শুকিয়েছে।

একটা বেশ কেতার বিউটি সালোনে আজ  মাসের তারিখে একজনও খদ্দের নেই জন কর্মী শুধু বসে আছে প্রসঙ্গতঃ এই সালোনে সাধারণত দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে না গেলে ঘন্টা পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়

৭ই ডিসেম্বর ২০১৬
একমাস হল এখনও টাকার যোগান নিয়মিত হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না প্রথমে শুনলাম সাময়িক অসুবিধে কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে তিনদিন তারপর হল আট - দশ দিন, তারপরে ২১ দিন, তারপরে ৫০ দিন এখন শুনছি মাস লাগবে

ওদিকে আজ  রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিৎ প্যাটেলের দেখা পাওয়া গেল টিভিতে, সেই নোটবন্দীর ঘোষণাও মোদীই করেছিলেন, তখনও উর্জিৎঅকে দেখা যায় নি, তার পরেও না তবে ইন্টারেস্ট রেট কমল না অর্থাৎ কালোটাকা সব সাদা হয়ে গিয়ে যে কম সুদে গাড়ী বাড়ী পাওয়ার কথা ছিল সেদিকেও ফক্কা তবে হ্যাঁ ঋণের সুদ না কমলেও জমা টাকার ওপরে সুদ কিন্তু আগেই কমেছে যে সব লোক পোস্ট অফিসের মাসিক আয় যোজনায় টাকা রেখে প্রতিমাসে তার সুদ তুলে সংসার চালান, তাঁদের শুধু যে আয় কমেছে তাইই নয়, পোস্ট অফিসে (সারা দেশেই) টাকার যোগান না থাকায় প্রায় কোনওরকম টাকা তুলতেই পারছেন না বহু লোক যাঁরা টাকা পাচ্ছেন তাঁরাও যৎসামান্য

১৩ই ডিসেম্বর ২০১৬
আজ কোন্নগর পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম রেভিনিউ স্ট্যাম্প কিনতে। বাইরে একজন দাঁড়ানো, কী প্রয়োজনে এসেছি তা রীতিমত জেরা করে তবে ঢুকতে দিলেন। কিনে বেরোনর পরে বিনয় কাকুর  সাথে দেখা, আজ নিয়ে নবম দিন এসে ফিরে যাচ্ছেন এমাইএসের সুদ তুলতে, পোস্টাপিসে নাকি  কোনরকম টাকাই আসছেনা। কথা বলতে বলতে আরও কজন জড়ো হলেন, কাউকে চিনি, কারো মুখ চিনি, কাউকে হয়ত একদমই চিনি না। অনেকেই ন্যুব্জদেহ, কেউ কেউ চলতে গেলে কাঁপছেন দেখলাম,  দৃষ্টি অধিকাংশেরই ক্ষীণ এই মানুষগুলি সারাজীবনের পরিশ্রমের সঞ্চয়টুকু তুলতে পারছেন না, কোনও খবরও কেউ দিতে পারছেন না কবে এঁরা টাকা পাবেন 

৩০শে ডিসেম্বর ২০১৬
কোন্নগর থেকে ফিরে দেখছি হাউসিঙের সামনের সব্জিওলাটা নেই। মাছওলা পেটিএমের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। ওদিকের বাকি সব্জিওলাদের, যাবার আগেই দেখে গিয়েছিলাআম পেটিএম আর কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ট্র্যন্সফারএর ব্যবস্থা ছিলদুজন লন্ড্রিওলা যারা পেটিএমের ব্যবস্থা করছিল/করেছে তারা আছে, বালাজি,যে ছেলেটি পেটিএম করতে পারে নি ক্যাশ নিয়ে ইস্ত্রি করছিল সে আর নেই এই সব্জিওলা বা বালাজি কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না, বলতে পারল না মোড়ের কমার্শিয়াল মার্কেটের মোমোওলা পেটিএমের ব্যবস্থা করেছে, কার্ড সোয়াপিঙ মেশিনের কথা এখুনি ভাবছে না বলল

১৬ই জানুয়ারী ২০১৭
এমনিতে ডিমানির প্রথম থেকে সুশীলা আন্টি বেশ হাসিখুশী আমাকেই ডিসেম্বর জানুয়ারী দুই মাসেই বেশ খান দুই করে দুই হাজারি নোট ভাঙিয়ে দিয়েছে, আরো সব অন্য অন্য বাড়ীতেও যার যার অসুবিধে ছিল আন্টি এনে দিয়েছে তাদের কাউকে দুই হাজার ভাঙিয়ে, কাউকে বা বেয়ারার চেক দিয়ে টাকা তুলে এনে নিজের বাড়ীর জন্যও নাকি ১০০ টাকার নোটে দশ হাজার টাকা বের করে দিয়েছিল সেই দশই নভেম্বর ওর জমানো শড়ীর ভাঁজ থেকে ছেলে নাকি বলেছিল মাম্মি তুমিই তো সবচেয়ে বড়লোক দেখছি চকচকে একশো টাকার নোট নাকি আলাদা করে সরিয়ে রাখত, সেই রেখে রেখেই দশ হাজার -- অন্তত সেই রকমই বলেছিল তখন

শনিবার ছিল মকরসংক্রান্তি, সুশীলা আন্টি ছুটি নেয় প্রত্যেক বছরই রবিবার আমার কাছে আসে সকাল দশটা নাগাদ এই রবিবারে হঠাৎ পৌনে নটা নাগাদ এসে হাজির, চোখমুখ শুকনো, চোখের কোণে কালি কিঞ্চিৎ উদভ্রান্ত হাবভাব শনিবার মকরসংক্রান্তির দিনে কিছু পুরানো একটা ভাল শাড়ী তলা থেকে বের করে পরতে গিয়ে তার থেকে বেরিয়ে এসেছে পুরানো ৫০০ টাকার নোটে দশ হাজার টাকা এবার বলল আসল কথাটা 'মেরা হাসব্যান্ড পীতা হ্যায়, উনকা হাথসে ছুপানেকে লিয়ে ম্যাঁয়নে চার সাল প্যহলে উধার জমা কিয়া বিলকুল ইয়াদ নহীঁ থে তব সোচে থে  বেটি কি শাদি কি টাইম কুছ সোনে কা বানাকে দেঙ্গে সির্ফ মেরে তরফ সে, মেরি বেটি কে লিয়ে'
এখন কী উপায়? আমি তো যতদূর জানি এখন আর কোনই উপায় নেই সেটা বলব কীভাবে ভাবছি, তখন আন্টিই বলল সামনের ফ্ল্যাটের 'ভাইয়া' নাকি বলেছে শিবাজীনগরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ব্র্যাঞ্চ আছে সেখানে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে সোমবার সক্কাল সক্কাল যেতে, সঙ্গে ছেলে বা স্বামীকে না নিতে, তাহলে দুই নম্বরী ভাববে ওখানে কাউকে দুই একশো টাকা দিয়ে ফর্ম ফিলাপ করিয়ে বদলে আনতে আমি শুনে মনে মনে ভাবলাম এইসব তো কবেই বন্ধ হয়ে গেছে, মুখে কিছু আর বললাম না, যদি হয়ে যায় অনেকসময় তো নিয়মের ফাঁক গলেও কিছু কিছু জিনিষ হয়েও যায় কিন্তু নাঃ হয় নি টাকা বদলানো যায় নি, কারণ তারিখ শেষ হয়ে গেছে ডিসেম্বরেই আজ  আন্টি এল কেমন একটা দিশাহারা ভাবে আমি চাউনি চিনি, কত্তবার আয়নায় দেখেছি, সব আশাগুলো যখন টুপ টুপ করে নিভে যায় তখন অমন দিশেহারা ফ্যালফ্যালে একটা চাউনি আসে
এরপর টুকটাক কথাবার্তা হয় "কাল আমি মোদীকে খুব গালি দিয়েছি, এতগুলো টাকা, দুপুরে একটুও না বসে একটা একটা করে বা ড়ীতে কারো ঘর মোছা, দুই মাস করে কারো বাচ্চাকে তেল মাখানো, করে করে টাকাগুলো জমালাম ----" ছেলেরা বলেছে, ছেলেদের বাবাও বলেছে মোদী খুব ভাল কাজ করেছে এমনি করেই সব লুকানো টাকা বেরিয়ে আসবে' বলতে বলতে মুখে ছায়া পড়ে খানিক টাকাগুলো নেই হয়ে যাওয়ায়, খানিক অহেতুক অপমানে কী বলব ভেবে পাই না, আন্টি নিজেই আনমনা গলায় বলে কীভাবে যে টাকা রাখব, ছেলে বলেছে দু হাজারের নোটও যে কোনোদিন বন্ধ হবে আমি বলি ব্যাঙ্কে রাখ না কেন আন্টি? ব্যাঙ্কে রাখলে তো এই টাকাগুলো তোমার যেতও না, হাসব্যান্ডেও নিতে পারত না আন্টি কেমন নিরুপায় চোখে তাকিয়ে বলে আমি যে একটা আখরও দিতে পারি না, সঙ্গে একটা লোক লাগবেব্যাঙ্ক কতদূর আমাদের গাঁও থেকে। কাঊকে নিয়ে গেলেই সব জানাজানি হয়ে যাবে যে   আমি বলি আমি নিয়ে যাব আন্টি আন্টি বলে তুমি তো এখানে 'বছর থেকে তারপর চলে যাবে, তারপর? আমাদের গাঁয়ের থেকে কতদূর ব্যাঙ্ক সেখানে যেতে গেলে কাউকে নিয়ে যেতে হয়, গাঁয়ের সবাই জেনে যাবে, হাসব্যান্ড তো সাংঘাতিক কান্ড করবে (কে জানে হয়ত মারবেও) বলে মেয়েরা এসে আমার কাছেই চুল কাটার জন্য দুই একটা কানের দুল কেনার জন্য টাকা চায় ভাইদের কাছে চাইলে দেয়ও না, উলটে  হয় হাসে নয় বকে ব্যাঙ্কে রাখলে কী করে হবে আন্টি? ছোটেমোটে কাম কে লিয়ে ব্যঙ্ক ্যানা না মুমকিন হ্যায় আন্টি
ক্যাশলেস ভারতে সুশীলা আন্টিরা কী করবে তাহলে?

২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭
বোম্বে, পুনে, নাসিক, আকোলা, নাগপুর, উলহাসনগর, সোলাপুর মিউনিসিপালিটির নির্বাচন ছিল ২২ তারিখ আজ ফল প্রকাশিত হতে দেখা গেল, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা বোম্বে মিউনিসিপালিটি কোনওক্রমে বিজেপীর কাছাকাছি সিট পেয়েছে, বাকী সবকটাতেই বিজেপী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ শরদ পওয়ারের NCP তৃতীয় স্থানে হলেও কার্যত প্রায় ধুয়ে গেছে আর সম্পূর্ণ ধুয়ে গেছে উদ্ধবের ভাই রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নভ্নির্মাণ সেনা সেই রাজ ঠাকরে যে ২০০৮ সমস্ত বিহারী শ্রমিককে পুণে আশপাশ থেকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল, এই সেদিন যে পাকিস্তানি আর্টিস্টকে সিনেমায় নেবার অপরাধে পরিচালকদের প্রায় মাথা কাটার নিদান হাঁকছিল

তো, মোটামুটি দেখা যাচ্ছে নোটবন্দীর জন্য বিজেপীর ভোট বেড়েই গেছে  ভারতের অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রেই ঈর্ষাদ্বারা চালিত হয়  এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে আমাদের কষ্ট হচ্ছে হোকবড়লোকদের, প্রোমোটারদের তো জমা টাকা সব এবার কেমন চাপে পড়েছে না? নোটবন্দীর শুরুর দিকে ১০-১১ নভেম্বর নাগাদ সুশীলা আন্টির খুশী খুশী গলার আওয়াজ মনে পড়ে "শরদ পওয়ারকো তো পুরা লাগি হুই হ্যায়" বাংলা করলে অনেকটা মানে দাঁড়া শরদ পওয়ারের কেমন পেছনে বাঁশটা ঢুকেছে! সব কষ্ট সহ্য করে নেবার ঐটাই চালিকাশক্তি অথচ কোনও বড়লোকের কিস্যু লাগে নি, সব যে যার সেটিংস ট্ড়িকঠাক করেই নিয়েছে  আর এমনিতেই কালোটাকা মানে তো আর এই ২০১৭ তে সত্যিই টাকা নয়, অন্য অনেক কিছু 
ইতিমধ্যে এখানে অবশ্য এটিএমগুলোতে টাকার যোগান প্রায় ঠিকঠাক ৫০০র নোট একটু কম, ২০০০র নোট একটু বেশী, কিন্তু কাজ ভালই চলে যায় আর হ্যাঁ এটিএম অন, পেটিএম গন  এটিএমে টাকা আসতেই তরকারীর দোকানগুলোর পেটিএম নাম্বারের জায়গায় ডট ডট করে দিয়ে ক্যাশ টাকায় ফেরত মাছওয়ালা, চিকেনওয়ালা অবশ্য পেটিএম নিচ্ছে

১১ইমার্চ ২০১৭
আজ ছিল পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন নোটবন্দী তথা ডিমনিটাইজেশানের সময় থেকে বিজেপী এবং বিরোধীরা একাগ্র হয়ে লক্ষস্থির করে এই রাজ্যকটির নির্বাচনের দিকে, বিশেষত উত্তরপ্রদেশ ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপী বিধানসভা দখল করতে পারলে  প্রায় ধরে নেওয়াই যায় ২০১৯ এও লোকসভায় বিজেপীই আসছে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি মুলায়ম সিং যাদব পরবর্তীতে তস্য পুত্র অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি গত চোদ্দ পনেরো বছর বিজেপীকে ইউপির মসনদের দিকে ঘেঁষতে দেয় নি  এদিকে পাঞ্জাবে শোনা গেছিল কেজরিওয়ালের 'আপ' সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে ওদিকে মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী ইবৈয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ইরম শর্মিলা চানু গোয়া উত্তরাখন্ড ছিল বাকী দুটি রাজ্য

তো, ফল বেরিয়ে গেছে বিজেপী দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ইউপি এবং উত্তরাখন্ডে পাঞ্জাবে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ গোয়া মণিপুরে কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় নি, তবে কংগ্রেস কিছু আসনে এগিয়ে রয়েছে এই দুইটি রাজ্যেই  প্রথমে ইউপির কথাই একটু বলি দেখাই যাচ্ছে লোকে নোটবন্দীর কষ্ট সহ্য করেও বিজেপীকে গ্রহণ করেছে, আমার কষ্ট হয় হোক, বড়লোকদের তো ফাটছে (সত্যি ফাটছে কিনা কে আর অত দেখতে যায়) অন্য যেটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট সেটা হল ইউপিতে বিভিন্ন জাত ধর্মের লোকের সংখ্যা প্রচুর এসসি, এসএসটি, ওবিসির অজস্র ভাগ এবং বেশ ভাল সংখ্যক মুসলমানের ভোট বিজেপী পেয়েছে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সেকুলারিজম লিবারেলিজমের নামে অল্প কিছু গোষ্ঠীকে পাইয়ে দেওয়া ব্যপারটাকে মানুষ ছুঁড়ে ফেলতে শুরু কারেছে যেমন মুসলিম মহিলাদের দুটি সংগঠন ভোটের  আগেপরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েছেন মোদী সরকার যেহেতু তিন তালাক প্রথা রদ করার ব্যপারে সত্যিকারের সদিচ্ছা দেখেছে, তাঁরা মনে করেন বিজেপী এই ব্যপারে সিরিয়াস, তাই তাঁরা বিজেপীকেই ভোট দিয়েছেন দেবেন তাঁরা সব মুসলিম মহিলাদেরই বিজেপীকে ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তোএরকম  অখিলেশের কাছে যে শ্রেণীগুলি সুবিধে পেয়ে আসছে, মোদী অমিত শাহ  তাদের বিপক্ষ শ্রেণীদের টার্গেট করে বোঝাতে সফল হয়েছেনক্ষমতা পেয়ে গেলে বাকীদের হাতে আনা তো দুই টুসকি ব্যপারনোটবন্দী বা তজ্জনিত অসুবিধে এখানে ততবড় ফ্যাক্টর হয় নি লোকে এখনও স্বপ্ন দেখছে যে উন্নতি হবে  আর একটা ব্যাপার গত কিছু নির্বাচন ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে সেটা হল লোকে আঞ্চলিক দলগুলোকে আর ভরসা করছে না আর জাতীয় দল বলতে কংগ্রেসের হাল রাহুলকে না সরালে বদলানোর কোনও আশা তো দেখছি না

যাগ্গে নির্বাচন নিয়ে বলতে গেলে আস্ত একটা পোস্টই দরকার সে থাক সংক্ষেপে এইটুকু বলার যে নোটবন্দীর ফলে মানুষের যে চুড়ান্ত দুর্ভোগ হয়েছে, মানুষ সেটা মেনে নিয়েছে এবং তার জন্য বিজেপীর কোনও দুর্ভোগ পোয়াতে হয় নি অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়বে তা এক্ষুণি বলা মুশকিল  আঁখো দেখি হালে কিছু ক্ষেত্রে মন্দাই দেখছি কিন্তু সে হয়ত শুধুই সীমিত ক্ষেত্রে কিছু বছর গেলে ঠিক করে বোঝা যাবে হয়ত আপাতত জিডিপি প্রোজেকশান % রেখেছে সরকার, যেটা আবার বিভিন্ন্মহল থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে ইনফ্লেটেড  কাজেই আপাতত জল যথেষ্ট ঘোলা কালোটাকা ধরা পড়বে বলে যা  বলা হয়েছিল তার কোনও পরিস্কার হিসেব আসে নি   সীমান্ত থেকে চোরাচালান হয়ে আসা জাল টাকার যোগান বন্ধ হবে বলে বলা হয়েছিল, সেটাও হয় নি এই চার মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২০০০ এর নোটে প্রচুর জাল টাকা উদ্ধার হয়েছে, কাজেই জালিয়াতরা যে ঝটাপট জাল করে ফেলেছে সে তো দেখাই যাচ্ছে  কাশ্মীরে সন্ত্রাস বন্ধ হবে এও বেশ ঘটা করে বলা হয়েছিল কিন্তু তাও হয় নি এর মধ্যে একটি বড় বেশ কিছু খুচরো অ্যাটাক হয়েছে, পুলিশ সেনাবাহিনীর তান্ডবও অব্যাহত কাজেই সবই যাকে বলে বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল  মাঝখান থেকে লোকের মনে এই ধার?ণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে দ্যাখো মোদীই একমাত্র লোক যে শুধু গরীব নয় বড়লোকদেরও সব টাকা কেড়ে নিয়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে

আর যে কথাটা বলে শেষ করব সেটা হল ইরম শর্মিলা চানুর ৯১ ভোট পেয়ে হার বিভিন্ন জায়গায় দেখছি অনেকেই খুব বিস্মিত দুঃখিত  তো, যেটা বলার সেটা হল, শর্মিলা তাঁর পরিবার নিকট একটি বৃত্তের কাছে এক কাল্ট ফিগার ছিলেন যাকে ভাঙিয়ে দেশ বিদেশের ডোনেশান পাওয়া যায় এক উচ্চ সম্মানের আসন পাওয়া যায় উনি অনশন ভঙ্গ করার সাথে সাথেই বৃত্ত সেটি খোয়ায় ফলে ওঁর পরিবার নিকটজনেরা প্রচন্ড বিরোধীতা করেছিলেন অনশন ভঙ্গ করার সিদ্ধান্তেরএরপর ভোটে লড়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা তো বোধহয় মণিপুরের বহু লোকই করেছিল বা এরকম কিছু খবর দেখেছিলাম এবার এই দীর্ঘ ১৬ বছরে শর্মিলা মণিপুরের জনগনের মধ্যে যোগসূত্র ছিল সেই লোকগুলো যাদের শর্মিলা অনশনে থাকলেই লাভ বেশী কাজেই তাদের সৃষ্ট ইমেজেই মণিপুরে শর্মিলার ইমেজ মূলত এর মধ্যে উনি নিজে কতটা কি জনসংযোগ করতে পেরেছেন আমার খুব সন্দেহ আছে এছাড়া  নব্বইয়ের দশক বা শুন্যের দশকে AFSPA যেমন জ্বলন্ত সমস্যা ছিল এখন তো আর তা নেই  মণিপুরে এখন মূল সমস্যা পাহাড়ের নাগাদের থেকে উপত্যকার স্বার্থ কে রক্ষা করবে? ক্লিয়ারলি মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি  শর্মিলার থেকে  কয়েকশো মাইল এগিয়ে থাকবেন এখানে  এই মুহূর্তে নাগা ভার্সেস মেইতেই জ্বলন্ত সমস্যা AFSPA কারো চিন্তাতেই নেইকাজেই শর্মিলার হার অত্যন্ত দুঃখজন হলেও আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়

No comments:

Post a Comment