খোঁজাখুঁজি

Tuesday, October 13, 2015

পরের জা’গা পরের জমি

 'পরের জাগা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই
   আমি তো সেই ঘরের মালিক নইই'
মামাতো দিদির বিয়ের রাতে গানটা শুনেছিল মৌসুমী, দিদির মেজভাসুর বাসরে গেয়েছিলেন৷লোকগীতি, তাই 'জা'গা' এবং 'জমি'তে -এর উচ্চারণ জেড -এর মত৷ মৌসুমী বেশ একটু অবাকই হয়েছিল গানটা শুনে৷ গানের অন্তর্নিহিত উদাসীন সুরটা, কথাগুলো ঠিক বিয়ের আসরের উপযোগী নয়, উজ্জ্বল ঝ্কমকানি বা উচ্ছল চটুলতার সাথে কিঞ্চিৎ বেমানান৷ গানটা কিন্তু মাথা থেকে বেরোয় নি, দুই লাইন সুরসমেত আজ  তিরিশটা বছর পার হয়েও একেবারে গেঁথে আছে মাথায়৷ আশ্চর্য্যের ব্যপার হল তার পরের আর একটা লাইনও মনে নেই আজ ইমেল চেক করতে করতে আরও একবার মনে পড়ল৷ সুমি মাথা থেকে গানটাকে সরাতে সরাতে মাউসের ওপর আঙুলের চাপে দ্রুত স্ক্রোল করতে থাকল ইনবক্সে আসা মেলগুলো৷ একগাদা বিজ্ঞাপন, খানদুই ব্যাঙ্কের মেল, ক্রেডিট কার্ড আর সেভিংসের মান্থলি স্টেটমেন্ট --- এইত্তো সোনু শর্মার মেল আছে, এটাই খুঁজছিল ও৷ এইবারে রো-হাউসের ডুপ্লে ইউনিটটার রেজিস্ট্রেশান করিয়েই এখান থেকে যাবে ও৷

 এই ড্যুপ্লে ইউনিটটা কিনেছে সুমি, সে আজ  প্রায় সাত বছর হল৷তখন সবে আমেরিকা থেকে ফিরেছে, কলকাতায় তখন 'উন্নয়ন'এর নামে খুব হইচই শুরু হয়েছে, নিউ টাউন, রাজারহাট ধুলোয় ধুলো, উন্নয়ন হচ্ছে৷ এদিকে তখন মনে হলএকেবারে নিজের একটা বাড়ী কিম্বা বাসার কথা ভাবতেই পারে, ব্যাঙ্করাও ধার দিতে সদাপ্রস্তুত,মাইনেও মোটামুটি বাড়তির দিকে৷ নেট ঘাঁটতে গিয়ে খবর পেল 'রবিকিরণ'এর৷ আকাশঝাড়ু ইঁটের খাঁচায় একটা খুপরি নয়, সামনে পেছনে জমিওলা ড্যুপ্লে, কলেজে পড়ার সময় সুমির খুব বাগানের শখ ছিল, ওদের এজমালি বাড়ীর সামনের জমিতে করেওছিল অনেকরকম ফুলের গাছ, চাকরীতে ঢোকার পর সেসব কবেই শুকিয়ে মরে গেছে, ওরাও কবেই সেই বাড়ী ছেড়ে ওর বাবার তৈরী করা ওদের ছোট্ট বাড়ীটায় উঠে এসেছে, সেখানে জমি বলতে মিউনিসিপালিটির নিয়ম অনুযায়ী পাশের বাড়ীর সাথে রাখা বাধ্যতামূলক চারফুট ফাঁক৷তাও কাকুমণির সাথে মিউচুয়াল করে দুইজনে দুইফুট করে ছার দিয়ে মোট চারফুট রেখেছে, আইনও বাঁচল আবার দুইবাড়ীই দুই ফুট করে বেশী পেল বাড়ী বানাবার জন্য৷ সেইটুকু জমিতেও অবশ্য সুমি আর নিপু শীতের দিনে কয়েকটা ফুলকপি, একটু পালংশাক, ধনেপাতা এইসব ফলিয়েছে কয়েকবছর৷ এতদিন বাদে আবার রবিকিরণে স্যাম্পল লেকভিউ ইউনিটের সামনের ফুলের আর পেছনের তরকারী বাগান দেখে ওর বাগান করার ইচ্ছেটা লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ফেরত এল৷ সুমি তাই টুবিএইচকে ফ্ল্যাটের তুলনায় বেশ অনেকটা বেশী দাম হওয়া সত্ত্বেও এই ড্যুপ্লে ইউনিটই  বুক করে ফেলেছিল৷
                   *************
সুমিদের নিজেদের বাড়ী যখন হয় তখন সুমি সবে কলেজের গন্ডী পেরোচ্ছে৷ 'নিজেদের বাড়ী! পরের জাগা পরের জমি---- বাড়ীটা হয়েছিল মূলত: মায়ের ইচ্ছে আর তাড়নায়৷ মা' সমানে বাবাকে তাড়না করে গেছে 'নিজেদের বাড়ীর জন্য৷ জমি অবশ্য দাদাই- দিয়েছিল, এজমালী বাড়ী জ্যাঠাই, কাকাই, কাকুমণি, পিসীমণি আর বাবার মধ্যে ভাগ করে দিয়ে৷ দাদাইয়ের তখন ডানদিকটা পড়ে গেছে, জ্যাঠাই সব স্ট্যাম্প পেপারে লিখে উকীল, সাক্ষী যোগাড় করে, ভাইবোনদের ডেকে দাদাইকে দিয়ে সই করিয়ে নিল, যোগেন্দ্র বিদ্যাপীঠের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক দাদাইয়ের অবশ হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ নিয়ে নিলেন উকীলবাবু অনেকগুলো পাতায়, বাকীরা সবাই সইটই করল, ব্যাস৷ মা অবশ্য বলে ওটা জ্যাঠাই নয়, জ্যাম্মণির বুদ্ধিতেই সব হয়েছে, তাই ওরা পেয়েছে অত্ত বড় বাড়ীর পুরো দোতলা, এদিকে বাবা, পিসীমণি সবার ভাগে রুমালের মত এক এক টুকরো জমি৷তা তাতেই বাবা বানিয়ে ফেলল ছোট্ট একটা বাড়ী, বাবা আর নিপু শোবে বাইরের দিকের ঘরটায়, মা আর সুমি ভেতরেরটায়, রান্নাঘর বাথরুম আর একচিলতে খাবার জায়গা, পেছনের দরজার পাশে বাইরে একটা টিউবওয়েল বসানো হল৷ গৃহপ্রবেশের দিন  বাড়ীটার চারদিক প্রদক্ষিণ করা যায় নি, কারণ একটা দিক একদম পাঁচিল ঘেঁষা, সেদিক দিয়ে হাঁটা সম্ভব নয়৷

বাড়ীটা যখন তৈরী হচ্ছিল তখন সুমি নিপু দুজনেরই উৎসাহের অন্ত ছিল না৷ নিপু তখনও স্কুলে, উচ্চমাধ্যামিক দেবে, সুমি স্নাতক হয়ে কম্পিউটার শিখছে, স্নাতোকত্তরে  কলকাতায় পড়বার মত নম্বর জোটাতে পারে নিবাইরে কোথাও হোস্টেলে রেখে ওকে পড়াবে না কেউ, নিপু যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, ওর জন্য খরচ আছে না৷ তো দুই ভাইবোনে ঘরের দেয়ালে চুনের সঙ্গে কোন রং মিশালে ভাল লাগবে, বাইরের ঘরের বইয়ের তাকটা কতটা বড় করা উচিত, মেঝেতে রেড অক্সাইড না গ্রীন অক্সাইড কোনটা মেশালে বেশী ভাল হবে, জানলার গ্রীলে  রঙের  কম্বিনেশান কেমন হবে এই নিয়ে প্রচুর মতামত দিয়েছে, ওদের প্রায় সব মতামতই মা বাবা মন দিয়ে শুনেছে, করেওছে৷ সেই বাড়ীর গৃহপ্রবেশের দিন খুশী খুশী মনে সুমি যখন ওর গল্পের বইগুলো গুছিয়ে রাখছিল তখনই মা এসে কেমন একটা ক্লান্ত বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে 'ইশ আমাদের বাড়ীটা এত্ত ছোট, এইটুকু বাড়ীতে তো নিপুরই ঠিক করে হবে েনা, তার মধ্যে আবার তুই আসবি ভাগ বসাতে!' সুমি হঠাৎ বুঝতে পারে না মা' কথাটা, অবাক হয়ে জিগ্যেস করে 'কী বলছ?' মা খুলে বলে 'নিপু এখন নাহয় পড়ছে, বড় হবে, বিয়ে হবে, ওর বন্ধুবান্ধব, স্বশুরবাড়ীর লোকজন আসবে, এইটুকু বাড়ী, এদিকে তুই তো বিয়ে হয়ে গেলেও এই বাড়ীতে  আবার ভাগ বসাতে আসবি ----' মৌসুমি এমনিতে বেশ মুখরা মেয়ে বলে পরিচিত হলেও এই কথা শুনে কেমন অবাক, হতভম্ব হয়ে যায়৷ কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না, মা বোধহয় আশা করছিল বলবে 'না না আমি ভাগ টাগ চাই না', কিন্তু তখন সেটাও ঠিক করে ভেবে উঠতে পারে না, ফলত: কিছুই বলা হয় না৷ মা একটু বিরক্ত অসন্তুষ্ট মুখে সরে যায়৷
"----- ঘর বানাইয়া আমি ,আমি তো সেই ঘরের মালিক নইই, আমিই তো সেই ঘরে--- মালিক নই"
                      *****************
তারপরে তো কতকিছু হয়ে গেল৷ বাবা হঠাৎ বিনা নোটিশে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেল, নিপু সিভিল নিয়ে পড়তে পড়তে বাইরে যাওয়ার সুলুক সন্ধান খুঁজতে লাগল, মা রিটায়ার করে ফেলল স্কুল থেকে আর সুমি সমানে টিউশনি, চাকরি খোঁজা, গোলপার্কে গিয়ে ইংরিজি শেখা আর ওদের কম্পিউটার শেখানোর ইন্সটিটিউটের হয়ে বিভিন্ন কলেজে কম্পিউটারের ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট হয়ে কাজ চালিয়ে যেতে লাগল৷ সেই এক সময়, চারিদিকে স্রেফ অন্ধকার ছাড়া সুমি আর কিছু দ্যাখে না, ল্যাব অ্যাসিসটেন্টকে কলকাতার কোনও কোম্পানি প্রোগ্রামারের চাকরি দিতে রাজী নয়, এদিকে প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন ওকে তাড়া করে কেবলই৷ সরকারী পরীক্ষা বা  প্রাইমারী স্কুলগুলোতে চেষ্টা না করার জন্য মায়ের গঞ্জনা বেড়েই চলে --- কার্ভটা মিনিমায় পৌঁছে যাবার পর আবার ঘুরতে শুরু করে তো, সেই নিয়মেই একসময় আবার সব ঠিকঠাক চলতে শুরু করে, সুমি একটা ভাল বেতনের চাকরি, হ্যাঁ প্রোগ্রামারের চাকরিই পেয়ে যায়, একটু থিতু হয়ে সবে ভাবছে কলকাতায় বাসাভাড়া করে থাকবে, সেইসময়ই বাইরে যাওয়ার সুযোগ আসে৷ বিন্দুমাত্র না ভেবে অফার অ্যাকসেপ্ট করে নেয় সুমি, দিল্লীতে কিছুদিন থেকে উড়ে যায় আমেরিকা৷ ফোনে মায়ের কাছে শোনে আত্মীয় প্রতিবেশীদের বিস্ময় কখনও বা অল্প ঈর্ষা, মায়ের চাপা গর্ব ---- সুমির মাথার মধ্যে বিনবিন করে 'আমি তো সেইই ঘরে--- মালিক নইইই' এর মধ্যে পাশ টাশ করে কিসব স্কলারশিপ যোগাড় করে নিপুও ফিনল্যান্ডে উড়ে যায়, সুমি মায়ের কাছে শোনে  বাড়ীটা নাকি বড্ড বড়, খাঁ খাঁ করে, এক কামরার ফ্ল্যাট হলেই ভাল হোত৷সুমির যা ক্ষমতা এখন তাতে তো অনায়াসেই লোন টোন পাবে ব্যাঙ্ক থেকে, একটা কিনে রাখলে সুমিরই নিজের রইল৷  মায়ের গলায় সাধারণ গ্র্যাজুয়েট সুমির জন্য খানিকটা গর্ব আর খানিকটা তেলতেলে অনুরোধ গোছের কিছু৷ সুমি হ্যাঁ না কিছু বলে না, অন্য কথায় চলে যায়৷
                      *****************
রবিকিরণে ইউনিট বুক করার সময় নিপুণকে লোনের কো-অ্যাপ্লিক্যান্ট হতে বলে মৌসুমীঅতটা লোন, ব্যাঙ্ক থেকে একজন সঙ্গে না থাকলে দিতে চায় না৷ নিপু তখন ছুটিতে এসেছিল, আপত্তি করে না, চুপচাপ সই করে দেয়৷ মা কিন্তু ভারী অসন্তুষ্ট হয়, একে তো সুমি এক কামরার ছোট ফ্ল্যাট না কিনে বড়সড় বাগানওয়ালা বাড়ী কিনছে, তাও আবার নিপুকে লোনের  সাথে জুড়ে নিয়েছে ----  মা সমানে গজগজ করে যায়, সুমি  কান দেয় না, সব ঠিকঠাক করে আবার দিল্লী ফেরত চলে যায়, নিপুও কদিন পরে চলে যায়, ওর আরো দুই বছর বাকী ওখানে৷ সেই বাড়ী পজেশান পাবার পরে জ্যাঠাই, জ্যাম্মণি, কাকুমণি, পিসীমণি,বড় আর ছোটমামা, মা সবাইকে নিয়ে গেছিল সুমি, পুজোটুজো করে নি, সেই নিয়েও মা খানিক গজগজ করে৷ তারপর এই এতবছরে আর রেজিস্ট্রেশানটা করানো হয় নি, টাকা জমিয়ে উঠতে পারে নি, ওর  লোনের ইন্টারেস্টেই প্রায় সব বেরিয়ে যায়৷ মাঝে উপরিউপরি দুটো মন্দা একসাথে আসে, যাকে বলে ডাবল ডিপ৷ ফলে এখন বছরওয়াড়ি ইনক্রিমেন্টের আর তেমন জলুশ নেই৷ সব সামলে, খানদুই কোম্পানি বদলে এই এতদিনে হাতে টাকা এসেছে৷বিল্ডারের তরফে সোনু মেল করে ডিটেইলস জানিয়েছেন কী কী লাগবে, ভ্যালুয়েশান কত, কত টাকা লাগবে ইত্যাদি৷ এরমধ্যে নিপু দেশে ফিরে মস্ত একটা কোম্পানিতে মেজকর্তা হয়ে বসেছে, থাকে এখনও সেই ছোট্ট বাড়ীটাতেই, মা' প্রায়ই অসুস্থ থাকে, বিছানায় একরকম শোয়াই এখন৷
                      *****************
সকালে তাড়াহুড়ো করে কাগজপত্র গুছিয়ে নিতে নিতে মা'কে আজ  রেজিস্ট্রেশানের কথাটা জানায় সুমি, মা শোয়া থেকে উঠে বসে জিগ্যেস করে দলিলে নিপুর নামও থাকবে তো? সুমি অবাক হয় না, আগেও এই কথা মা বলেছে দু'একবার৷ বলে  না কারণ বিল্ডারের সাথে চুক্তিটা শুধু ওর হয়েছিল, লোনও ওর নামেই, তাই দলিলও ওর নামেই হবে, সেটাই সরকারের নিয়ম৷ মা তখন আর কিছু বলে না, ঠিক বেরোবার আগে আবার উঠে আসে দরজার সামনে, আস্তে আস্তে বলে 'তোর দলিলের কোথাও একটা বোধহয় নিপুর নামটা একটু থাকা উচিত্' সুমি ক্ষোভ চেপে ঠান্ডা গলায় জিগ্যেস করে 'কেন?' মা নির্দিষ্ট করে কোনও কারণ দেখাতে পারে না, বারবারই বলে 'হ্যাঁ থাকা উচিত' উঠে আসার পরিশ্রমে মা' মাথা টলমল করে দোলে, সুমির একইসাথে মায়া বিতৃষ্ণা হয় মহিলার দিকে তাকিয়ে৷ প্রাণপণে মেজাজ ঠান্ডা রেখে বোঝায় সেটা এখন সম্ভব নয়, আইনত: দলিল ওর নামেই হবে, পরে চাইলে কাউকে দানপত্র করতে পারে৷ মহিলা খানিকটা নিরাশ গলায় 'সাবধানে যাস' বলে শুয়ে পড়েন গিয়ে৷ সইসাবুদ চুকে যাওয়ার পরেরদিন সকালেই সুমি ফেরত যায় তার কর্মক্ষেত্রে৷ এরপরে কেটে যায় আরও প্রায় বছরখানেক, মাঝেমধ্যেই ফোনে মা জিগ্যেস করে রেজিস্ট্রেশান হয়ে গ্যাছে কিনা, তাতে নিপুর নাম আছে কিনা? সুমি শেষে একদিন জিগ্যেস করে বাবা মা'য়ের  বাড়ীর দলিলে কার কার নাম আছে? স্বুমি আবছা মনে করতে পারে দলিলটা ওর মা'য়ের নামেই, তাও জিগ্যেস করে৷ মা হঠাৎই একটু চুপ করে যায় --- আস্তে আস্তে বলে 'ওটা আমার নামেই, তখন তোরা সব মাইনর, উকীলবাবু মানা করলেন মাইনরের নামে করতে' ---  সুমি বলে কই আমার  তো তখন প্রায় ২৩-২৪ ব্ছর বয়েস, মা বলে 'না না উকীলবাবু যে বললেন মাইনরের নামে করলে একটু মুশকিল, অনেক কিছু করতে হবে' ---  সুমি মুচকি হাসে, বুঝেছে নিপুর জন্মদিন ডিসেম্বর মাসে, ওদের রেজিস্ট্রেশান হয়েছিল জুনে, ১৮ পূর্ণ হতে নিপুর তখনও প্রায় সাড়ে পাঁচমাস বাকী৷সুমি বিবেচনায় কোথাও ছিলই না, 'তুই তো আবার আসবি ভাগ বসাতে' --- 'পরের জা'গা পরের জমিই --'
                   ****************
 আরো বছর কয়েক পরে  ৮ই মার্চ উপলক্ষ্যে অফিসে এমপাওয়ারড উইনভেস্টার  হিসেবে প্রেজেন্টেশান দিতে হবে কোম্পানির সদ্য জয়েন করা বা পাঁচ বছরের কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মেয়েদের সামনে কাল৷ স্লাইডডেক গোছাতে গোছাতে ভাবছিলেন  ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মৌসুমীর নামে এখন আরও খান তিনেক বাসস্থান৷ কোনওটা তৈরী হচ্ছে, কোনওটা সবে শেষ হয়েছে, শেষ পর্যন্ত হয়ত রানীক্ষেতের কাছে মাঝখালিতে  পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা কমপ্লেক্সের ফ্ল্যাটটা শুধু রাখবেন, বাকী লাটাগুড়ির বাংলো আর ঋষিকেশের  গঙ্গার ধারের ফ্ল্যাটটা বেচেই দেবেন, হ্যাঁ রবিকিরণের ইউনিটটা বেচবেন না কিছুতেই৷ ড্যুপ্লের মালিকানা তাঁকে রিয়েল এস্টেট আর জীবন দুইয়েরই পাঠ দিয়েছে অনেক৷ মাঝখালির ফ্ল্যাট থেকে হিমালয়ান রেঞ্জের বেশ অনেকগুলো শৃঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়, তাই ওটা রাখবেন, পার্টটাইম গেস্টহাউস  হিসেবে ভাড়া খাটাবেন আর মাঝেমধ্যে নিজে গিয়ে থেকে আসবেন৷   উইনভেস্টার, উইমেন ইনভেস্টার, আজ থেকে 'বছর আগেও এইভাবে আলাদা করলে মনে মনে একটু বিরক্ত হতেন, কিন্তু এখন বোঝেন   ভার্জিনিয়া উলফের সেই একটি মেয়ের নিজস্ব একটি ঘরের স্বপ্ন, পরের জমিতে ঘর বানিয়ে ঘরের মালিক হওয়ার রাস্তাটা  আসলেই কতটা আলাদা৷ 

No comments:

Post a Comment